07 February 2018

আমলারা আগামিকাল মেঘ যেদিকে ছাতা সেদিকে টাঙ্গাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ আগামীকাল ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়এদিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যদি সাজা হয় তাহলে কী হবেকেউ কেউ বলছেনকিছুই হবে না। নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভর করা এমন আলোচনা থেকে প্রশাসনপাড়াও বাদ যাচ্ছে নাআছে মিশ্র প্রতিক্রিয়াবিএনপি তো রাজপথেই দাঁড়াতে পারবে নাবরং এ যাত্রায় রাজপথের আন্দোলনে দলটির ব্যর্থ হওয়ার স্বরূপ আবারও স্পষ্ট হবেফলে প্রশাসন প্রো-আওয়ামী লীগ হিসেবে জোরেশোরে বিকশিত হবে

কিছু একটা ঘটতে পারেকেউ আবার এমন শঙ্কায় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পক্ষেতবে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, যা কিছু হোক না কেন এ রায়ের মধ্য দিয়ে বড় দুটি দলের মধ্যে নিশ্চিতভাবে ক্ষমতার রাজনীতির ফাইনাল খেলা শুরু হয়ে যাবেতবে খেলায় ড্র হওয়ার সুযোগ থাকলেও এখানে তেমনটি হবে নাকেউ হারবে, কেউ জিতবে বিদ্যমান প্রেক্ষাপট সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে এমন উত্তরই মিলবেআর আমলারা তাদের চিরায়ত চরিত্র থেকে কোনোদিন বেরিয়ে আসতে পারবেন নামাঠ দখলের রাজনীতি যে দলের পক্ষে থাকবে, প্রশাসনের ক্রীড়নকরা সেদিকেই পাল তুলবেন১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে এমন চিত্রই দেখা গেছেতাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নামে পর্দার আড়ালে আসলে বাতাস বুঝে খোলস পাল্টানোর প্রস্তুতি চলছে

প্রশাসনবিষয়ক কলামিস্ট ও সাবেক সচিব বদিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারি কিছুই হবে নাএখন পর্যন্ত পরিস্থিতি যা দেখা যাচ্ছে তাতে খালেদা জিয়ার সাজা হলেও বিএনপি কিছুই করতে পারবে নাকারণ তারা রাজপথে দাঁড়াতে পারবে নাকিংবা দাঁড়াতে দেবে নাযদি অলিগলি থেকে ছিঁটেফোটা কিছু হয়ও তাতে প্রশাসনে বিএনপির পক্ষে কোনো প্রভাব পড়বে নাবরং এ ইস্যুতে বিএনপি মাঠে ফেল করলে প্রশাসন আরও প্রো-আওয়ামী লীগ হবেপ্রশাসনের মধ্যে যারা বিএনপিমনা তারা টুঁ শব্দটি করবেন নাতিনি বলেন, ‘আর এটা তো চিরন্তন সত্য যে, প্রশাসন কারও নয়বেশির ভাগ কর্মকর্তা সুযোগসন্ধানীরাজনীতির মাঠের নিয়ন্ত্রণ যেদিকে গড়াবে কর্মকর্তারাও সেদিকে থাকবেন

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে টানা ৯ বছরতাই নতুন করে এখন আর কাউকে আওয়ামী লীগার বানানোর দরকার নেইযেমন ধরুন, নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন যদি তার মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তিন দফায়ও রদবদল করে তাতে কোনো লাভ হবে নাকারণ বহু ধাপে এখন আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তারা বসে আছেন

কেউ অস্বীকার করলেও এটিই বাস্তবতাবদিউর রহমান বলেন, ‘বিশেষ করে যারা দুর্নীতি করেছেন কিংবা দুর্নীতি করার সুযোগ পেয়েছেন তারা তো জানবাজি রেখে এ সরকারের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার সব চেষ্টা করবেনএটি তারা নিজেদের স্বার্থেই করবেনপ্রশাসন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সচিব আবু আলম মুহম্মদ শহিদ খান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রশাসনে যারা চাকরি করেন তারা তো বাংলাদেশেরই নাগরিকতাই দেশের যে কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের নাড়া দেবেতারা চিন্তাভাবনা করবেন, তাদের চিন্তাভাবনার জগতে প্রভাব বিস্তার করবেকী হবে, না হবে এ ধরনের শঙ্কা ও উদ্বেগ কাজ করবেএটাই স্বাভাবিককিন্তু এ বিষয়ে তাদের অ্যাকটিভ রোল কিংবা ইনভলভমেন্ট থাকার কোনো সুযোগ নেইকারণ এটা সম্পূর্ণ জুডিশিয়াল বিষয়, প্রশাসনিক নয়তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে প্রশাসনে বড় পরিবর্তন হয়েছে

যারা প্রশাসনে কাজ করছেন তারা নিজেদের নিরপেক্ষ ভাবছেন নানিরপেক্ষ ভাবার সুযোগও কমে যাচ্ছেকারণ তারা দেখছেন দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি ও পোস্টিং হচ্ছেতাই তারা মনে করছেন, যেদিকে বাতাস সেদিকে থাকাই ভালোআমলাদের মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছেতবে এটা প্রত্যাশিত নয় এবং রাষ্ট্রের জন্য সুখকর হবে নাজানা গেছে, খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকদিন থেকে নানা আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছেযদিও প্রশাসনের স্টিয়ারিং সিটে এখন আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের একক নিয়ন্ত্রণ বজায় রয়েছেতারা ব্যক্তিস্বার্থে কিছুটা দ্বিধা-বিভক্ত থাকলেও পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে অটলতাই যে যার অবস্থান থেকে বিএনপি ঠেকাও ভূমিকায় খুবই সক্রিয়এ অবস্থায় ৮ তারিখের রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তারা খুব একটা বিচলিত নন এ সারির কয়েকজন কর্মকর্তা সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির কোনো নেতাকর্মী-সমর্থক কোথাও প্রতিবাদ নিয়ে দাঁড়াতে পারবে নাসেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনগণও ঐক্যবদ্ধ

এদিকে চিহ্নিত বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা ছাড়াও যারা আওয়ামী লীগ সেজে প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে আছেন, তারা অবশ্য ভেতরে ভেতরে নানা আশায় বুক বেঁধেছেনতাদের মতে, বিএনপিকে সরকার ও সরকারি দল এখন এমন স্থানে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে যে, সামনে দেয়াল ছাড়া আর কিছু নেইফলে রাজপথে কার্যকর প্রতিবাদ না করার কোনো বিকল্প নেইএ সারির কয়েকজন কর্মকর্তা গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, তাই এটি নিঃসন্দেহে রাজনীতির মাঠে ফাইনাল খেলাএ খেলায় জয় অথবা পরাজয় ছাড়া অন্য কিছু নেই

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন থেকে এ খেলার ক্ষণ গণনা শুরু হবেএক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, রাজনীতিতে সব সময় একই স্টাইলে আন্দোলন-সংগ্রাম হয় নামানুষ যখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন-সংগ্রামের অধিকার হারিয়ে ফেলে তখনও সবকিছু শেষ হয়ে যায় নাপৃথিবীতে এর বহু নজির আছেতারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো কারণে সাধারণ মানুষ একবার রাজপথে নেমে এলে সেখান থেকে তাদের আর ফেরানো সম্ভব হবে না সে রকম কোনো পরিস্থিতি সামনে এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে নাএ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি দল সমর্থক হিসেবে পরিচিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা সোমবার যুগান্তরকে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট দিয়েছে, বিএনপি আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের হামলা করার ফর্মুলা নিয়ে এগোচ্ছেপরিকল্পনাটি কোথায়, কারা করেছেন সব তথ্য আমরা জেনেছি

কিন্তু কোনো লাভ হবে নাআমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব ধরনের অপরাধ দমনে আগের থেকে অনেক বেশি সক্ষমকোনোভাবেই কাউকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে দেয়া হবে নাসবকিছু শক্তভাবে মোকাবেলা করা হবে


শেয়ার করুন

0 facebook: