স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ সেদিন সকালে
নাস্তা করছি। খাওয়া প্রায় শেষদিকে। পাড়ার এক দরিদ্র নিরক্ষর মহিলা
আমাদের বাসায় এলেন। আমার স্ত্রী মহিলাকে নাস্তা খেতে বললে জানালেন, ১০ দিন ধরে নফল রোজা রাখছেন তিনি। বললাম বাহ, খুব উত্তম কাজ। জিজ্ঞেস করলাম আপনি কী ফরজ
নামাজ পড়েন? ফরজ নামাজ পড়েছেন? তিনি উত্তরে না বললেন। বললাম সারা জীবনের নফল রোজা, নফল নামাজ একটা ফরজ রোজা,
একটি ফরজ নামাজের সমান হবে না। ফরজ নামাজ, ফরজ রোজা পালন
করে, তারপর নফল নামাজ, নফল রোজা পালন করলে তবেই সোয়াব পাবেন।
ফরজ নামাজ,
ফরজ রোজা পালন করে নফল ইবাদত করা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। মনে করুন, আপনি একটা গার্মেন্ট ফেক্টরিতে চাকরি করেন। তখন মাস শেষে বেতন পাবেন এবং
উৎসব এলে বোনাস পাবেন। চাকরি না করলে বোনাস বেতনও পাবেন কি? আমাদের দেশে
রমজান মাসেও অনেকেই রোজা পালন করেন; কিন্তু নামাজ
পড়েন না। তারা আবার তারাবিও পড়েন। তা হলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?
নিজের খেয়াল খুশিমতো ধর্ম করলে আপনি কী নেকি পাবেন!
লাইলাহা
ইল্লালাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ । অর্থাৎ আমার জীবনকে এবং আমার
সবকিছুকে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর অর্পিত করলাম। আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই। মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। ইসলাম শব্দের ব্যাখ্যায় ফিলিপকে হিট্টি বলেছেন,
ইসলাম হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণের ধর্ম। এই পরীক্ষায় ইব্রাহিম আলাহি ওয়াসাল্লাম নিজ পুত্রকে নিজ
হাতে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
একশ্রেণীর আলেম
যাদের কোনো কিতাবি ইলস নেই, আছে সুর, আছে ভঙ্গি তারা মানুষকে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে গজল গেয়েই ওয়াজ
শেষ করেন। এরকম ওয়াজ থেকে মানুষ আর
কতটুকু নামাজ-রোজার শিক্ষা পাবে। গোটা বিশ্বের মুসলমান আজ মনগড়া কিছুকে ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমান তিয়াত্তর দল-উপদলে
বিভক্ত হয়ে যাবে। এর মধ্যে একটি দল ছাড়া সব দলই হবে পথভ্রষ্ট।
পবিত্র কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, অনেকে না জেনে
নিজের খেয়াল খুশিমতো ইবাদত করে অন্যকে বিপদের পথে ডেকে নিচ্ছে। সূরা আনআম : ১১৯
আরও বলা হয়েছে,
অবশ্য যারা ধর্ম সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে ও বিভিন্ন
দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোনো কাজের দায়িত্ব তোমার নেই। তাদের বিষয় আল্লাহর এখতিয়ারে। আল্লাহ্ তাদের কৃতকর্ম
সম্বন্ধে জানিয়ে দেবেন। আনআম : ১৫৯
মাহাথির
মোহাম্মদ কোনো এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘এখন এক ইসলামের
মাঝেই হাজারটা ধর্ম। আর সেগুলো একটা থেকে অন্যটা এতই আলাদা যে, আমরা প্রায়শই পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছি এবং পরস্পরকে হত্যা করছি। একটি অভিন্ন উম্মা থেকে আমরা
বিভক্ত হয়েছি অসংখ্য গোত্রে, মাজহাবে, তরিকায়।’ তিনি আরও বলেছেন, (কিন্তু) আমরা যারা আল্লাহর রহমতে দেশ
পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি তারা কখনই সত্যিকার অর্থে বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব এবং
ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করিনি। অথচ মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ঐক্য রক্ষায় ইসলাম আমাদের সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ধর্মকে
প্রতিষ্ঠত কর মতভেদ এনো না। (সূরা শুরা) নামাজ-রোজার কোনো দরকার নেই। নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রেম বুকে ধারণ করলেই
চলবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় তারা
আল্লাহকে নিয়ে ভাবেন না আল্লাহর কথা মানেন না। অথচ দীনের নবী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে নিয়ে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। যেমনটা ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা করেছেন। তাদের নবীকে নিয়ে কেউ ঈসা এবং
মূসাকে খোদার পুত্র এবং কেউ তাদের খোদাই বানিয়ে ফেলেছে। নবীজি বলেছেন- আমি তোমাদের মতোই মানুষ। তবে আমার কাছে ওহি আসে। (তোমাদের কাছে ওহি আসে না) যাই
হোক প্রচলিত কিছু ইবাদত যেমন বিশেষ কোনো মাস এলে করতে হয়, তেমনি রোজা বা নফল নামাজ পড়তে হয় ফরজ ইবাদত করার পর। আল্লাহ আমাদের ইবাদত করার সহি জ্ঞান দান করুন।
খবর বিভাগঃ
ধর্ম ও জীবন
0 facebook: