আর এ আয়া-বয়রাই রোগীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। তাদের কাছে রোগীরা রীতিমতো অসহায়। আওয়ামী যুবলীগ ঢামেক হাসপাতাল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক জীবন মিয়া ও ঢামেক হাসপাতাল ইউনিট স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি হাবিল মিয়ার নেতৃত্বে আয়া-বয়রা বার্ন ইউনিট তথা গোটা হাসপাতাল এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ড্রেসিং করা কিংবা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়ার মিনিময়ে ইচ্ছেমতে আদায় করছেন অর্থকড়ি। এক ড্রেসিংয়ের বিনিময়েই তারা রোগীর কাছ থেকে ৫০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।
টাঙ্গাইলের মোটর গ্যারেজ শ্রমিক সাগর গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে ১৫ দিন ধরে বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। শুক্রবার কথা হয় তার বাবা ক্ষিতিশ চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি জানান, সাগরের চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। শুধু ড্রেসিংয়েই খরচ হয়েছে বেশ কয়েক হাজার টাকা।
প্রথম ড্রেসিংয়ে দিতে হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। পরবর্তী ড্রেসিংয়ে ২ হাজার টাকা। এর পরের ড্রেসিংয়ে ২৬শ’ টাকা। আরেক ধাপে দিতে হয় ১৮শ’ এবং ১২শ’ টাকা।
সাগরের পাশের বেডেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এক রোগী। ওই রোগী নিজেই জানান, তার ভোগান্তির কথা। তিনি বলেন, ড্রেসিং করাতেই টাকা চলে যায়। যারা ড্রেসিং করেন তারা চুক্তি করে টাকা নেন।
সর্বনিম্ন ৫শ’ টাকা গুনতে হয়। এর বেশি যে যা নিতে পারেন। তিনি বলেন, এখানে কর্মরত আয়া ও ওয়ার্ডবয়রা রোগীদের সঙ্গে কসাইয়ের মতো আচরণ করেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন পরিবহন শ্রমিক শহীদুল ইসলাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে টাকা ছাড়া সেবা মেলে না। টাকা দিতে পারি না বলে আমাকে ড্রেসিং করে দেয়া হয় না। তাই আমি নিজের ড্রেসিং নিজেই করি।
সূত্র জানায়, ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৬৮ জন বহিরাগত কর্মচারী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে কাজ করছেন। এসব কর্মচারীর বেতন না থাকলেও তারা পোড়া রোগী ও তাদের স্বজনদের জিম্মি করে টাকা আদায় করেন।
আর এ টাকার ভাগ পাচ্ছেন নেতারা। ঢামেকের একাধিক কর্মচারী জানান, এখানে কর্মরত বহিরাগতদের অনেকেই ঢামেক হাসপাতাল ইউনিট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ কারণে তাদের দাপটও বেশি। রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় তারা রোগীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন।
সূত্র আরও জানায়, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের রেড ইউনিট, ব্লু ও গ্রিন ইউনিট এবং জরুরি বিভাগ মিলে ৬৮ জন বিহরাগত ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন। প্রতিটি ইউনিটে ৮০ থেকে ৯০ জন অগ্নিদগ্ধ বা পোড়া রোগী ভর্তি থাকেন।
এসব রোগীর প্রতিদিন অথবা একদিন পর ড্রেসিং করতে হয়। ড্রেসিং করে থাকেন এ বহিরাগতরা। তারা রোগীদের জিম্মি করে ৫০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ ঢামেক হাসপাতাল ইউনিট সেক্রেটারি জীবন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। ইলেকট্রিশিয়ান, অফিস সহায়কসহ অন্য পোস্টে যারা কাজ করেন তাদের আনঅফিশিয়ালি বার্ন ইউনিট থেকে কিছু টাকা দেয়া হয়। অন্য যারা আছেন, তারা কাজ করার বিনিময়ে রোগীদের কাছ থেকে বকশিশ পান। বকশিশের ওপরই চলতে হয় তাদের। আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেই না।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি হাবিল মিয়া বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে বার্ন ইউনিটে রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়, কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। আমি বরং মাঝে মাঝে নিজের পকেট থেকে রোগীদের টাকা-পয়সা দেই।’
এ বিষয়ে জানতে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন যুগান্তরকে বলেন, হাসপাতালটা যখন শুরু হয়, তখন কোনো চতুর্থ শ্রেণীর জনবল নেয়া যায়নি। আবার আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিতে আপত্তি ছিল চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের। যে কারণে এদের এভাবে নেয়া হয়েছে। এরা কাজ করছেন।
মাঝেমধ্যে টিপস হিসেবে নেন। এটা আমরাও জানি। তিনি বলেন, বার্ন ড্রেসিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা যে কেউ করতে পারেন না। এটা আউটসোর্সিংয়ে হয় না। এজন্যই এদের আমরা পার্মানেন্ট করার চেষ্টা করছি। আশা করি যখন এদের একটা চাকরি হয়ে যাবে, তখন এ ধরনের কাজ থেকে তারা বিরত থাকবেন। তাছাড়া কর্তৃপক্ষও তখন তাদের চাপ দিতে পারবে। সূত্রঃ যুগান্তর
খবর বিভাগঃ
ঢাকা বিভাগ
বিভাগীয় সংবাদ
0 facebook: