03 March 2018

ফেসবুকে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করতে চায় ইসি


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচার ঠেকাতে চাইছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধরনের চিন্তা অবাস্তবএমন বিধান করার আগে ইসিকে আরও ভাবতে হবেইসি চাইলেই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে প্রচার বন্ধ করতে পারবে না

ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির একজন সদস্য বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেসবুক, টুইটার, ভাইবারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো প্রার্থী বা সমর্থক বা রাজনৈতিক দল কোনো প্রচারণা চালাতে পারবে না এ ধরনের একটি বিধান বিধিমালায় সংযোজন করার প্রস্তাব তাঁরা করেছেনএর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছেএ প্রস্তাবগুলো কমিশনের সভায় উঠবেকমিশন সায় দিলে এটি বিধিমালায় যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে

ইসির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকের অপব্যবহার হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা আছেমূলত এ কারণে এই ধারাটি বিধিমালায় সংযোজন করার চিন্তা করা হচ্ছে২০১৩ সালেও এ ধরনের একটি চিন্তা ছিলতবে শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি

অবশ্য কেউ ছদ্মনামে এ ধরনের প্রচার বা অপপ্রচার করলে তাকে চিহ্নিত করার মতো কারিগরি সামর্থ্য ইসির নেইসেটা ইসির কর্মকর্তারা স্বীকারও করেন
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার, ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির প্রধান কবিতা খানম এখনই কিছু বলতে চান না

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি যেকোনো সুপারিশ করতে পারেকিন্তু আইন করার আগে দেখতে হবে তা প্রয়োগ করা যাবে কি না
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, ইসি এ ধরনের বিধান করলে তা কার্যকর করা অসম্ভব হবেকারণ ফেসবুক, টুইটার এগুলো এখন জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যমবিপুলসংখ্যক মানুষ ইন্টারনেটে এসব যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করবেএগুলো নজদারি করার মতো ব্যবস্থা বা সামর্থ্য ইসির নেইতিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার বা ঘৃণা প্রচার যাতে না হয়, জাতীয় পর্যায়ে সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে

এর আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে নাগরিক সমাজের কেউ কেউ অনলাইনে নির্বাচনী প্রচার নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান নিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ অনলাইন যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয়দলটির ফেসবুক পেজে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ফেসবুকে সক্রিয়আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অনেকে এখন থেকেই নৌকায় ভোট দিন’ ‘আমার মার্কা নৌকা’—এ ধরনের নানা স্লোগান ফেসবুকে নিয়মিত প্রচার করছেন

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করার প্রস্তাব কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় আছেএর সঙ্গে অনেক কারিগরি বিষয়ও জড়িতকেউ দেশের বাইরে থেকে কারও পক্ষে প্রচার চালালে তা কীভাবে ঠেকাবে? বন্ধ করতে চাইলেই কী বন্ধ করা যাবে?

ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিও ফেসবুক, টুইটারে সক্রিয়দলের নামে থাকা ফেসবুক পেজ থেকে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচির তথ্য দেওয়া হয়দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার টুইটার অ্যাকাউন্ট আছেকারাগারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন উপলক্ষে তিনি সেখানে নিয়মিত রাজনৈতিক বার্তা দিতেনবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মতে, ফেসবুক, টুইটারে বিষয়ে ইসির চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়

এসব উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য কী তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীতিনি বলেন, ইসি অবাধ তথ্য প্রবাহ বন্ধ করতে চাইছে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার বন্ধের বিধান যুক্ত করা হলে তা কতটা কার্যকর করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় আছেতবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার বা ঘৃণা প্রচার বন্ধের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই


শেয়ার করুন

0 facebook: