স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ রংপুরের কাউনিয়ার যুবলীগ নেতা, পল্লী চিকিৎসক ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলায় সাত জেএমবি সদস্যকে
মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ছয়জনকে বেকসুর
খালাস দেন আদালত। এদের মধ্যে দুইজন পলাতক। রোববার দুপুরে রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার এ রায় দেন। আদালত একই সাথে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২০ হাজার করে টাকা জরিমানা
করেছেন। এ দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের
সময় আদালত চত্বরে রাখা সাংবাদিকদের মোটরবাইক ফেলে দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন
আদালতের কয়েকজন কর্মচারী।
রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর
অ্যাডভোকেট রথিশচন্দ্র ভৌমিক নয়া দিগন্তকে জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন
জেএমবির উত্তরাঞ্চলের কিলিং মিশন প্রধান পীরগাছা উপজেলার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়ার
মাসুদ রানা (৩৩), জেএমবি সদস্য একই এলাকার এছাহাক আলী (৩৪), লিটন মিয়া ওরফে রফিক মিয়া (৩২), বিজয় ওরফে আলী ওরফে দর্জি (৩২), দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সরোয়ার হোসেন ওরফে সাবু ওরফে মিজান (৩০), গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হলদিয়ার চরের সাখাওয়াত হোসেন রাহুল (৩৩) ও পীরগাছার
চান্দু মিয়া (২৩)। এদের মধ্যে চান্দু মিয়া পলাতক।
আদালত রায়ে জেএমবি সদস্য আবু সাঈদ (৩৪), তৌফিকুল ইসলাম (৩৬), গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহাদাত ওরফে রতন মিয়া (২৭), জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব গান্ধী (২৮), বাবুল আখতার ওরফে বাবুল
মাস্টার (৩৬) ও বগুড়ার শাজাহানপুরের পলাতক রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ওরফে
বাঁধনকে (২৫) খালাস দেন। এদের মধ্যে নজিবুল
ইসলাম পলাতক। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে
জেএমবি নেতা মাসুদ রানা, সদস্য লিটন মিয়া ও সাখাওয়াত হোসেন এবং খালাস পাওয়া
আবু সাঈদ জাপানি নাগরিক কোনিও হোসি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
রোববার সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আসামিদের স্পেশাল জজ
আদালতে হাজির করা হলে বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার এই রায় দেন। মোট ৬৮ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনান তিনি। পাবলিক প্রসিকিউটর
অ্যাডভোকেট রথিশচন্দ্র ভৌমিক জানান, খালাসপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে
সাজার জন্য আমরা উচ্চ আদালতে যাব। অন্য দিকে আসামি
পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন ও আবুল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাত
সাড়ে ১১টায় কাউনিয়ার টেপামধুপুর ইউনিয়নের চৈতার মোড়ে নিজের ওষুধের দোকান থেকে বাড়ি
ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা গলা কেটে হত্যা করে পল্লী চিকিৎসক ও মাজারের খাদেম রহমত
আলীকে। এ ঘটনায় তার ছেলে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে
হত্যা মামলা করেন। নিহত রহমত আলীর বাড়িতে শাহ
আবদুস সাত্তার নামে এক পীরের মাজার আছে। সেখানে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর
ওরশ হতো। রহমত আলী ওই মাজারটি দেখাশোনা
করতেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছর ১১ জুলাই রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি
আদালতের বিচারক কামরুজ্জামানের আদালতে ১৫ জেএমবি সদস্যকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট
দাখিল করেন কাউনিয়া থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর
রশিদ। এদের মধ্যে পঞ্চগড়ের নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান ২০১৬
সালের ১ আগস্ট রাতে রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের সাদ্দাম হোসেন ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি
ঢাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই মামলায় গ্রেফতার হওয়া
কাউনিয়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আব্দুস ছাত্তারের ছেলে মোরশেদুল
ইসলাম ও ভাতিজা শহিদুল ইসলামসহ অন্যদের অব্যাহতি দেন আদালত।
পরে মামলাটি স্পেশাল জজ আদালতে হস্তান্তর হয়। ১৬ আগস্ট এই আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন। এরই মধ্যে মামলার বাদি নারাজি দিয়ে পুনঃতদন্তের দাবি জানালে আদালত বাদির আবেদন
খারিজ করে দেন। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করলে
আদালত পুনঃতদন্ত করে ৪০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুনঃতদন্ত শেষে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ সময় বিজয় ওরফে আলী ওরফে দর্জি নামে একজনকে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পরে মোট ৫৩ সাক্ষীর মধ্যে মামলার বাদি নিহত রহমত আলীর ছেলে
অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ কর্মকর্তা, এলাকাবাসীসহ ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয় চলতি বছর ৪ মার্চ। ওই দিনই রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা : এ দিকে বিচারক রায় পড়ে শোনানোর সময়
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শাহানুর রহমান নিচে এসে আদালত চত্বরে
কর্মরত সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলগুলো মাটিতে ফেলে দিতে থাকেন। এতে রংপুরে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল
ইসলাম রিপনেরটিসহ চারটি বাইক মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। সাংবাদিকেরা বাইক ফেলে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে কোর্টের ওই কর্মচারী
সাংবাদিকদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ওই
কার্যালয়ের ঘুষ গ্রহণের দায়ে বরখাস্তকৃত পিয়ন নওয়াব আলীসহ কয়েকজন কর্মচারী
সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান। উপস্থিত সিনিয়র
সাংবাদিক বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিনিধি আফতাব হোসেন তাদের সাথে কথা বলতে গেলে নওয়াব
আলী তাকে গালাগাল করেন। এর প্রতিবাদ জানান
সাংবাদিকেরা। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিক দি ইন্ডিপেনডেন্টের
রংপুর প্রতিনিধি আব্দুস শাহেদ মন্টু বলেন, বাইকগুলো সাংবাদিকদের সরিয়ে
নেয়ার কথা না বলে সেগুলো মাটিতে ফেলে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং সাংবাদিকদের ওপর
হামলার বিষয়টি উদ্বেজনক। এখন দুর্নীতিগ্রস্তদের
টার্গেট হচ্ছেন সাংবাদিকেরা। তিনি এ ঘটনায় দোষী
কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে হবে।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: