22 March 2018

অসম্ভব ফজিলতের মাস সম্মানিত মাহে রজব শরীফ


হাসান মুহম্মদঃ এখন চলছে আরবি মাস রজবরজব শাবানের সিঁড়ি বেয়ে ইবাদতের মোহনা পবিত্র রমজানের শুভাগমনধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আরবি মাস গণনা ও হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীমএর মাস-বছর গণনার সঙ্গে অনেক ইবাদতের সম্পর্কমুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া অল্পসংখ্যক লোক হলেও হিজরি সনের হিসাব রাখবেঅন্যথায় সবাই গোনাহগার বলে বিবেচিত হবে

সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই চান্দ্রমাস-কেন্দ্রিক আরবি মাসের ধারা বিবরণী পাওয়া যায়পবিত্র কুরআন শরীফে এরশাদ হয়েছে, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা’য়ালার কাছে মাসের সংখ্যা বারটি, যা আসমানী কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যে দিন আল্লাহ আকাশমন্ডলি ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেনএর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণএটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন’ (সূরা তওবা শরীফ: আয়াত নং ৩৬)আয়াতে উল্লিখিত সম্মানিত মাস চারটি জিলকদ শরীফ, জিলহজ্জ শরীফ, মহররম শরীফ ও রজব শরীফআরবিতে এ চারটি মাসকে আশহুরুল হারাম বলা হয়এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রজব মাসরজব অর্থ সম্মানিতএ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম

পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বার মাসে এক বছরএর মধ্যে চারটি সম্মানিততিনটি ধারাবাহিকতায় জিলকদ শরীফজিলহজ্জ শরীফমহররম শরীফ ও অপরটি হলো রজব শরীফ’ (বোখারি শরীফ)

পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফে রজব শরীফ মাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছেআমাদেরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিতআবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এ মাসের নফল ইবাদতে অন্য মাসের চেয়ে অধিক সওয়াব লাভ হয়

এ মাসের ফজিলতের ব্যাপারে অনেক হাদিস শরীফ পাওয়া যায়অন্য মাসগুলোর তুলনায় এ মাসের ইবাদতে অনেক সওয়াব লাভ হয়তাই ফরজ, ওয়াজিবের পাশাপাশি নফল ইবাদত বাড়িয়ে দেওয়া, নফল নামাজ, নফল রোজা, দানসদকা ও পরোপকার ইত্যাকার কাজ বেশি বেশি করা উচিত

প্রাক-ইসলাম যুগে পবিত্র রজব শরীফ মাস ছিল নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্নদেব-দেবীর নামে পেশ করা হতো মূল্যবান অর্ঘ্যরজব শরীফ এলেই বিভিন্ন উৎসব ও কুসংস্কারে মেতে উঠত আরবের মুশরেক সম্প্রদায়দেবতার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পশু ছেড়ে দেওয়া হতো সওয়াবের আশায়আবার অনেকে দেবতাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে পশু জবাই করতএ প্রথাকে আতিরা বা রজবিয়্যাহ বলা হয়ইসলাম এসে এ রীতি রহিত করে দেনরসুল ছল্লাল্লাহু আলাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘লা ফারা ওলা আতিরাতা; অর্থাৎ মাদি জন্তুর প্রথম বাচ্চা জবাই করা ও আতিরা করার বিধান নেই’ (বোখারি শরীফ, মুসলিম শরীফ)

বর্তমান সময়ে অনেকেই জাহেলি যুগের আজন্ম কুসংস্কারের দিকে ঝুঁকে পড়েছেরজব মাস এসে পড়েছে অথচ অধিকাংশ মুসলমান ইবাদত বন্দেগি আমলের ধারেকাছেও নাইরজব শরীফের মাস এলেই আমাদের মনে পড়ে পবিত্র শবে মেরাজের কথা যা রজব শরীফের ২৭ তারিখে সংঘটিত হয়রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে দয়াময় মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে স্বশরিরে সাক্ষাৎ করেনএ রাতের ইবাদত ও পরের দিন রোজা রাখা অত্যন্ত সওয়াবের কাজআর আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখা উচিত রজব শরীফের পরের মাস পবিত্র শাবান শরীফেরএর পর পবিত্র রমজান শরীফের শুভাগমনরাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব শরীফের মাস থেকেই রমজান শরীফের প্রস্তুতি শুরু করতেন। 

ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেনআর মনে মনে রমজান শরীফের কামনা-বাসনা করতেননবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিখিয়ে দেওয়া আবেগভর দোয়া আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান হে পরওয়ারদিগার রজব শরীফের ও শাবান শরীফের মাসে আমাদের বরকত দিন এবং রমজান শরীফের মাস পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দাওসাহাবি রদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদের মধ্যে রজব মাসে আমলের নতুন পরিবেশ তৈরি হতোআমলের মোহনায় ভাসত পুরো সমাজএভাবে উনারা রজব শরীফের মাস থেকে আমলের মাধ্যমে পবিত্র মিরাজ শরীফ, পবিত্র লাইলাতুল বরাত শরীফর ইবাদতের মাধ্যমে রমজান শরীফকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন মহান আল্লাহ পাক আমাদের কে ও সেরকম করার তৌফিক দান করুন আমিন


শেয়ার করুন

0 facebook: