07 April 2018

বছরে ১০ কোটি মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন চিকিৎসা করতে গিয়ে

ফাইল ছবি
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর লালবাগ ইসলামবাগের বাসিন্দা মধ্যবয়সী ওমর ফারুক নিউমার্কেটের একটি ক্রোকারিজের দোকানে মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেনসম্প্রতি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হনসহকর্মীরা তাকে ধরাধরি করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যানদোকান মালিকও ছুটে আসেন

হৃদরোগ বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, রোগীর অবস্থা খারাপদ্রুত জীবন রক্ষাকারী একটি ইনজেকশন দিতে হবেনাম লিখে দিয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনার পরামর্শ দেনদোকানে গিয়ে মালিক দেখতে পান ইনজেকশনটির দাম ৫ হাজার ২শটাকাজীবন বাঁচাতে দ্রুত কিনে আনেনইনজেকশনটি পুশ করার পর চিকিৎসক জানান, রোগী এ যাত্রায় বেঁচে যাবেনতবে আরও ১৬টি ইনজেকশন দিতে হবেপ্রতিটি ইনজেকশন ৪৮০ টাকা করে বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়সপ্তাহ খানেকের চিকিৎসা শেষে ওমর ফারুক প্রাণে বেঁচে গেলেও পকেট থেকে বের হয়ে গেছে ২০ হাজার টাকারও বেশি

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ওমর ফারুকের বড় ভাই ওয়াসিম বলেন, ১২ হাজার টাকা বেতনে কোনোভাবে সংসার চালাতো ওমর ফারুকহঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে ২০ হাজার টাকা ঋণ করতে হলোডাক্তার দ্রুত এনজিওগ্রাম করতে পরামর্শ দিয়েছেনজানিনা চিকিৎসার খরচ কিভাবে হবে? শেষ পর্যন্ত গ্রামের জমি বিক্রি করে ভাইয়ের চিকিৎসা করতে বাধ্য হবেন কি-না তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত বলে জানালেন তিনি

শুধু ওমর ফারুক একা নন, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশে প্রতি বছর শতকরা ৫ ভাগেরও বেশি মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছেনদেশের বিদ্যমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখন চিকিৎসা ব্যয়ে ৬৭ শতাংশ খরচ মানুষকে নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হয়শতকরা ৫৫ ভাগ মানুষ এখনও মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিতস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে

এ চিত্র শুধু বাংলাদেশের নয়, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের সুযোগ নেইপৃথিবীর ৮০ কোটি মানুষ তাদের পরিবারের মোট ব্যয়ের অন্তত ১০ শতাংশ চিকিৎসা সেবা গ্রহণের খরচ নিজেদের পকেট থেকে বহন করে এবং বছরে প্রায় ১০ কোটি মানুষ চিকিৎসা সেবার ব্যয় বহন করতে গিয়ে অতিদরিদ্র হয়ে পড়ছেবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে

এমন এক অবস্থার মধ্যে দিয়ে আজ শনিবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসপালিত হচ্ছেএ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য –‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা : সবার জন্য সর্বত্র

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাদিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছেগৃহীত কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেমিনার, জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ, স্মরণিকা প্রকাশ, টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠান, সড়কদ্বীপ সজ্জিতকরণ, প্রেস ব্রিফিং, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, জারি গান, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর আলোচনা অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে

সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবেঅন্যান্য জেলা ও উপজেলায়ও আজ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসপালিত হবে

গত ৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসউপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বাংলাদেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের সফলতা আশাব্যঞ্জকসরকার বর্তমানে জিডিপির ২.৮ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭১ দশমিক ৮ যা ২০০০ সালে ছিল ৬৫ দশমিক ৫শিশুদের টিকাদানের অর্জন ৯৪ শতাংশঅত্যাবশ্যকীয় ওষুধ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে ৬৫ শতাংশ মানুষকেমাতৃমৃত্যুর হার এখন প্রতি এক লাখে ১৭৬ জন যা ২০০০ সালে ছিল ৩৯৯ জন

প্রতি এক হাজার জনে নবজাতকের মৃত্যুর হার ২০০০ সালে ছিলে ৪২.৬; যা ২০১৫ সালে কমে হয় ২৩.৩ এবং পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি এক হাজার জন ২০০০ সালে ছিলে ৮৮ জন; যা ২০১৫ সালে ৩৭.৬-এ নেমে আসে

এ সকল অর্জন বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যখাতে গৃহীত নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফসল বলে তিনি মন্তব্য করেন

তিনি জানান, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেচতুর্থ সেক্টর কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সরকার অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত করেছেএকইসাথে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন’, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশলপত্র তৈরি ২০১২-২০৩২ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) সেল গঠন করা হয়েছে


স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশলপত্রে সারা বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে মূলত তিনটি অর্থনৈতিক ক্যাটাগরিতে ভাগে ভাগ করা হয়েছে-আনুষ্ঠানিক খাত, অনানুষ্ঠানিক খাত এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীএই কৌশলপত্রের আলোকেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সূত্রঃ জাগো নিউজ


শেয়ার করুন

0 facebook: