13 May 2018

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কোটার আন্দোলন সমীচীন নয়ঃ কাদের

ফাইল ছবি
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও সেই বিষয়ে গেজেট জারি না হওয়ায় আন্দোলন সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

রোববার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে রোববার (১৩ মে) ফের সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কোটার বিষয়টি ফায়সালা করে দিয়েছেনকোটা থাকবে নাএরপর কখন গেজেট হবে, হলো কী হলো না...এটা নিয়ে তো একটা চিন্তা-ভাবনাও আছেক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আছে, প্রতিবন্ধী আছে, অনুন্নত জেলা আছে, মুক্তিযোদ্ধা আছে, নারী আছেএখানে সুসমন্বিত কিছু করার একটি চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক দিন বিদেশেও ছিলেনকিন্তু এই প্রক্রিয়াটি থেমে নেইযার জন্য কোটার আন্দোলন, সেখানে তো কোটাটাই বাতিল করা হয়েছেপ্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে বসে যা বলেছেন, তাকে আমাদের বিশ্বাস করা উচিতকারণ, তিনি কথা দিয়ে কখন কথা ব্রেক করেন না

‘(প্রধানমন্ত্রী) পার্লামেন্টে যা বললেন সেটার আবার গেজেট প্রকাশের জন্য আন্দোলনের হুমকি, এটা বোধহয় সমীচীন হচ্ছে নাআমি ছাত্র সমাজকে বলব, তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির ব্যাপারে সরকার খুবই সহানুভূতিশীল এবং সরকার সক্রিয়যৌক্তিক সমাধানের সব রকম প্রয়াস অব্যাহত রয়েছেকাজেই আমি তাদের বলব একটু ধৈর্য ধরতেঅনতিবিলম্বে তারা সমাধান পেয়ে যাবেনএই নিয়ে আন্দোলন পরীক্ষা, ক্লাস বর্জন করা...এমনিতে অনেক ক্ষতি আমাদের হচ্ছে

আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি আশা কার তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেনপড়াশোনায় ফিরে যাবেনপ্রধানমন্ত্রীর কথা এদিক-সেদিক হওয়া...প্রধানমন্ত্রী এমন মানুষ তিনি একটি কথা বলে সেখান থেকে তা নড়ন-চড়ন হবে সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এখানে যদি কেউ রাজনীতি করতে চান, তাহলে ভিন্ন কথাযৌক্তিক সমাধান যারা চান...একটা গেজেট কখন হলো কি-না হলো; প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথা, সেটাতে তো আস্থা স্থাপন করা উচিতবিশ্বাস করা উচিতআমি এই কথাটা বলতে চাই

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশবাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমেবিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছেএই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে

এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরাকোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করছিলেন তারা

৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীরাসেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন ওবায়দুল কাদেরকিন্তু এর পরের দিনও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেনপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এত কিছু, তখন কোটাই থাকবে নাকোনো কোটারই দরকার নেইযারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব

কিন্তু এরপর প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য অনুযায়ী কোটা নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ফের সোচ্চার হন শিক্ষার্থীরাএই অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে বৈঠক করেন

অস্টেলিয়া সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে- এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে ৭ মে পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়

কিন্তু ৭ মের মধ্যে কোটার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা


এর মধ্যে গত ১০ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের জানান, কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছেপ্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে এই কমিটি সবকিছু পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে কোটার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেএই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে


শেয়ার করুন

0 facebook: