স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ কোটা সংস্কার
আন্দোলনকারীদের উপর গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আবার হামলা করেছে
ছাত্রলীগ। গত রবিবারের হামলার প্রতিবাদে এবং আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক
রাশেদ খানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের
ব্যানারে শহীদ মিনারে মানববন্ধন করার সময়ে তাদের উপর ছাত্রলীগের নেতারা চড়াও হয়। এসময়
ছাত্রলীগ কোটা আন্দোলনের নেতাকর্মীদের টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে কিল ঘুষি ও লাথি
মারে। ছাত্রলীগের এ হামলা থেকে বাদ যায়নি মানববন্ধনে আসা নারী কর্মীরাও। ছাত্রলীগের
নেতাকর্মীরা আন্দোলনের আরেক যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হোসেনকে মোটরসাইকেলে করে
তুলে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান। হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানায় কোটা
আন্দোলনকারীরা। তাদের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ছাত্রলীগ
সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের দাবি হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি
বলেন, ‘আমরা যতদূর জেনেছি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিল এমন কিছু লোক ছাত্রদল-শিবির
করে। তারা একটি বিশেষ গোষ্ঠী থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রে
লিপ্ত হয়েছে। তাদের এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আরেকটি অংশ
নেই, যার কারণে নিজেদের মধ্যে কলহ তৈরি হয়েছে এবং একে অপরের ওপর হামলার ঘটনা
ঘটছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা
জানান, হামলাকারীরা সকলেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রচার
সম্পাদক সাইফ বাবু, স্কুলছাত্র-বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন, মহসীন
হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানি, বঙ্গবন্ধু হল
ছাত্রলীগে সেক্রেটারী আল আমিন রহমানসহ বেশ কয়েকজনকে দেখা গেছে।
সাধারণ ছাত্র
অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন ইনকিলাবকে বলেন, ‘কর্মসূচী
চলার সময়ে ছাত্রলীগ আমাদের উপর হামলা চালায় এতে আমরা ১০-১২ জন আহত হয়েছি। পরে আমি
সেখান থেকে দৌড় অন্যত্র চলে যাই কিন্তু তারা ফারুককে তুলে নিয়ে গিয়ে শাহবাগ থানায়
দিয়েছে, কিন্তু ফারুক বর্তমানে শাহবাগ থানায় নেই আর কোথায় আছে তাও আমরা জানিনা।’
অন্যদিকে,
বাংলাদেশ
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল হকের
ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ ও বিচারের দাবিতে গতকাল
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে অপরাজেয় বাংলার সামনে মানববন্ধন করেন ইংরেজি বিভাগের
শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকও। তারা সেখানে ১০ মিনিটের
মতো অবস্থান নেন। নুরুল হক নুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর
শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মানববন্ধনে
শিক্ষক তাসলিম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমরা
নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা নিরপেক্ষভাবে মত প্রকাশ করতে
পারে।’
অপরদিকে, ক্যাম্পাসে
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে কিছুই জানেননা বলে
জানিয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম
রব্বানী। সোমবার দুপুর পৌনে একটার দিকে তার প্রক্টর অফিসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের
জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
গতকাল সহ বিগত
কয়েক দিনের হামলা নিয়ে ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর
বলেন, এসব বিষয়ে তিনি অবহিত নন। তিনি বলেন, ‘এসময় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সময় যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার অবরুদ্ধ করে কর্মসূচি দিয়েছে তাদের সম্পর্কেও আপনাদের জানতে
হবে। আর ছাত্রলীগকে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়নি এর জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের
প্রক্টরিয়াল টিম আছে।’ কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীরা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট
করছে কি না, এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি প্রক্টর। তবে বিগত ঘটনা
নিয়ে কেউ যদি অভিযোগ করে তবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন এমনটা জানান তিনি।
রাবি সংবাদদাতা
জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ফের নিষ্ঠুরভাবে হামলা
চালিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায়
রাবি’র প্রধান ফটকের সামেনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লোহার হাতুড়ী, রামদা,
চাপাতি,
লাঠিসোটা,
রড়
ও লোহার পাইপ দিয়ে তাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। ছাত্রলীগের এই অতর্কিত
হামলায় চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। আহত
শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের
শিক্ষার্থী। সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় আছে। আহত অন্য তিনজনের নাম-পরিচয় জানাতে রাজি হয়নি আন্দোলনকারীরা।
প্রতক্ষ্যক্ষদর্শীরা
জানায়, বকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটক থেকে পূর্বঘোষিত পতাকা মিছিল
নিয়ে প্রধান ফটকের সামনে যাচ্ছিল ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী। মিছিলটি প্রধান ফটকের
কাছাকাছি পৌঁছালে ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ
রুনুর নেতৃত্বে শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী তাতে হামলা চালায়। আন্দোলনকারীরা
ছত্রভঙ্গ হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন,
ক্যাম্পাসের
পরিস্থিতি কেউ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করা হবে।
জাবি সংবাদদাতা
জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পূর্ব নির্ধারিত ‘পতাকা
মিছিল’ কর্মসূচী হতে দেয়নি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকাল ১১টার দিকে
আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো
হয়। সেখানে পূর্ব থেকেই অবস্থান নেয় শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা
আন্দোলনকারীদেরকে কোনো ধরণের কর্মসূচী না করতে বলেন।
এক পর্যায়ে কোটা
সংস্কার আন্দোলনের জাবি শাখার আহবায়ক শাকিল উজ্জামান পতাকা নিয়ে
সেখানে উপস্থিত হয়। তখন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ ও নাহিদুর রহমানের
নেতৃত্বে ভাসানী হলের ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন সেখান থেকে শাকিল
উজ্জামানকে টেনে-হিঁচড়ে বটতলার দিকে নিয়ে যান। এ সময় রাজিব হোসেন নামের গণিত
বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী শাকিল উজ্জামানকে ছাড়িয়ে নিতে আসলে তাকে চড়-থাপ্পর
মারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা
বলেন, ‘শাকিলুজ্জামানকে কিছুই করা হয়নি। সে তার আবাসিক হলেই রয়েছে। কোটা সংস্কার
আন্দোলনে ছাত্রদল ও শিবিরের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল এমন তথ্য আমাদের কাছে থাকায়
ক্যাম্পাসের সার্বিক সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আমরা সেখানে অবস্থান নিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, ‘কোটা
সংস্কার আন্দোলনকারীদের মিছিল শুরুর পূর্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লাইব্রেরীর
সামনে জড়ো হতে দেখেছি। সেখানে যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা
তৎপর ছিলাম।’
চবি সংবাদদাতা
জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বাধার কারণে গতকাল দ্বিতীয় দিনেও কোটা
সংস্কারের আন্দোলনের কোন কর্মসূচি পালিত হয়নি। সকাল থেকে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামবে এমন খবর পেয়ে চবি ছাত্রলীগ ও
চট্টগ্রাম মহানগরের বেশকিছু নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নেন। তারা সেখানে বিভিন্ন
শ্লোগান দিতে থাকে। ছাত্রলীগের অবস্থান থাকার কারণে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ
দিতে পারেনি কোন সাধারণ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও কোন কর্মসূচি পালন
করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। তবে আংশিক ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
শাটল ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল
স্বাভাবিক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে শিক্ষার্থীরা নিরবে ক্লাস বর্জন করেছে।
দিনাজপুর অফিস
জানায়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা
সংস্কার আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর হামলার প্রতিবাদে সারাদেশের মতো আজ ২য়
দিনেও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: