07 July 2018

মৃত্যুকূপ বাঁশবাড়ীয়া সৈকত, ১৫ দিনেই নিখোঁজ ৫


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ পর্যটনে মুখর সীতাকুন্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকতপ্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটকে মুখরিত হচ্ছে এই উপকূলীয় এলাকাটিসম্প্রতি ঈদে ঘুরতে এসে গত ২১ জুন সমুদ্রে গোসল করতে নেমে মারা যায় ২ ছাত্র এবং ২ সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল শুক্রবার (৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩ টার সময় নিখোঁজ হয় আরো ৩ যুবকএতে করে পর্যটন মুখর বাঁশবাড়ীয়া সীবিচ যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে

তবে এসব মৃত্যুর জন্য সমুদ্র থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনকে দুষছেন স্থানীয়রাতবে সবকিছু মিলিয়ে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা

জানা যায়, ঈদে ঘুরতে এসে গত (২০ জুন) বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে সাগরে নিখোঁজ হয়েছিল ঈমন (১৭) ও রাজ (১৬) নামে ঢাকার নারায়ণগঞ্জের ২ ছাত্রপরে ২৪ ঘন্টা পর (২১ জুন) শুক্রবার বিকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়এ ঘটনার পর পর নড়ে চড়ে বসে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরাপরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সীতাকুন্ড উপজেলা প্রশাসন ও বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পর্যটন এলাকার চারপাশে লাগানো হয় সাইনবোর্ডযেখানে পর্যটকদের সতর্ক করে লেখা ছিল "সাবধান, অনুমতি ছাড়া পানিতে নামা নিষেধ"পাশাপাশি সমুদ্রের বিপদজনক এলাকায় দেওয়া হয়েছিল লাল কাপড়ের পতাকাযাতে করে কোন পর্যটক যেন ঐ এলাকায় প্রবেশ বা আশপাশ ঘেঁষে গোসল না করেএতকিছু দেওয়ার পরেও গতকাল শুক্রবার ২০ সদস্যের এক পর্যটক দলের কয়েকজন পানিতে নেমে পড়ে গোসল ও খেলাধুলা করতেস্থানীয় কয়েকজন নিষেধ করলেও তাদের কথা না শুনে সাঁতার জেনে বলে নেমে পড়ে তারাসবকিছু ঠিকই ছিলখেলাধুলা ও গোসল শেষে কয়েকজন উঠেও আসেকিন্তু সমুদ্রে জোয়ার আর প্রবল ঢেউ এর কারনে পানিতে তলিয়ে যায় মোঃ ইয়াসিন (১৮), মো: আলাউদ্দিন (২২) ও মো: সাইফুল ইসলাম (২৪) নামের তিন যুবকপরে তাদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিস ও আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দলযৌথভাবে পরিচালনা করা হয় উদ্ধার অভিযান

এ বিষয়ে বাঁশবাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারনে এসব দুর্ঘটনাগুলো ঘটছেসমুদ্রে বালু উত্তোলনের কারণে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছেজোয়ার এলে এসব গর্ত পানিতে দেখা যায়নাফলে এসব গর্তে পড়েই পর্যটকরা মৃত্যুবরণ করছেনআগে যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে আজও একই স্থানে ঘটেছেবালু উত্তোলনের কারনে সৃষ্ট গর্তগুলো যদি না থাকতো তাহলে আজ এই দিনটা দেখতে হতোনাপাশাপাশি গর্তের কারনে আশেপাশেও ভাঙ্গন শুরু হয়েছেফলে দিন দিন গর্তটি আরো বড় হচ্ছেগত কিছুদিন আগে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি অসাবধানতা বশত ছিলএই ধরনের ঘটনার পর স্থানীয়রা সবাই সতর্ক হয়ে যায়পাশাপাশি সতর্ক করা হয় পর্যটকদেরওঐদিন ঘটনার পরও পর্যটক কমেনিপ্রতিদিনই আসছে হাজার হাজার পর্যটকসীবিচের আশপাশে সাইনবোর্ড থাকার পরও আজকের ঘটনাটি দুঃখজনকযারা আজ সমুদ্রে নেমেছিল তাদের বার বার নিষেধ করা হয়েছিলজানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার কথাওতারপরও তারা কারো কথার কর্ণপাত না করে আমরা সাঁতার জানি বলে সমুদ্রে নেমে যায়পরের ঘটনাতো সবাই জানেতবে আমি মিডিয়ার মাধ্যমে সকলকে অনুরোধ করব কোন পর্যটক যেন ওই পাশ দিয়ে আর সমুদ্রে না নামে

এদিকে একই কথা বললেন আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজতিনি বলেন, সীতাকুন্ডের জনপ্রিয় এই বীচকে কেউ ধ্বংসের পাঁয়তারা করছেবসুন্ধরা গ্রুপের বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গর্তের কারনেই এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছেনা হয় এর আগে তো কখনো কেউ আহত হওয়ারও কথা শুনলাম নাএকমাত্র এসব গর্তের কারনেই আজ বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে

এদিকে কয়েকদিন আগে সমুদ্রে নেমে ২ ছাত্রের মৃত্যুর পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রে নেমে যেভাবে আগে চারিদিক দৌড়াদৌড়ি করে উল্লাসে মেতে থাকতো পর্যটকরা তেমনটা এখন আর নেইকেউ কেউ হাঁটু পরিমান পানিতে নেমে ভয়ে আবার দৌড়ে উপরে উঠে যাচ্ছেযারা পানিতে নামার কথা চিন্তা করে তারা ২ ছাত্রের নিখোঁজের কথা শুনে কেউ সাহস করে আর নিচে নামছেনাসব পর্যটকদের চেহারাতে যেন ভয়ের দাগপানিতে নামাটাই যেন যত ভয়ের

এ বিষয়ে বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, এটা যেহেতু সরকারিভাবে ঘোষিত কোন পর্যটন এলাকা নয় তাই তদারকি করার মত কেউ নেইতবে গতবারের ঘটনার পর থেকে প্রশাসন ও বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল


সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকূল আলম জানান, কিছুদিন আগে ২ ছাত্র মারা যাওয়ার পর চট্টগ্রাম ও সীতাকুন্ড উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য কয়েকটি সাইনবোর্ড দিয়েছিলামতারপরও অঘটন ঘটে গেলএকটি বীচের কারনে এভাবে প্রাণহানি চলতে দেয়া যায় নাএ বিষয়ে এই মুহূর্তে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার


শেয়ার করুন

0 facebook: