স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ পর্যটনে মুখর সীতাকুন্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটকে মুখরিত হচ্ছে এই উপকূলীয় এলাকাটি। সম্প্রতি ঈদে ঘুরতে এসে গত ২১ জুন সমুদ্রে গোসল করতে নেমে মারা যায় ২ ছাত্র এবং ২ সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল শুক্রবার (৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩ টার সময় নিখোঁজ হয় আরো ৩ যুবক। এতে করে পর্যটন মুখর বাঁশবাড়ীয়া সীবিচ যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।
তবে এসব মৃত্যুর জন্য সমুদ্র থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনকে দুষছেন স্থানীয়রা। তবে সবকিছু মিলিয়ে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
জানা যায়, ঈদে ঘুরতে এসে গত (২০ জুন) বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে সাগরে নিখোঁজ হয়েছিল ঈমন (১৭) ও রাজ (১৬) নামে ঢাকার নারায়ণগঞ্জের ২ ছাত্র। পরে ২৪ ঘন্টা পর (২১ জুন) শুক্রবার বিকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর পর নড়ে চড়ে বসে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সীতাকুন্ড উপজেলা প্রশাসন ও বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পর্যটন এলাকার চারপাশে লাগানো হয় সাইনবোর্ড। যেখানে পর্যটকদের সতর্ক করে লেখা ছিল "সাবধান, অনুমতি ছাড়া পানিতে নামা নিষেধ"। পাশাপাশি সমুদ্রের বিপদজনক এলাকায় দেওয়া হয়েছিল লাল কাপড়ের পতাকা। যাতে করে কোন পর্যটক যেন ঐ এলাকায় প্রবেশ বা আশপাশ ঘেঁষে গোসল না করে। এতকিছু দেওয়ার পরেও গতকাল শুক্রবার ২০ সদস্যের এক পর্যটক দলের কয়েকজন পানিতে নেমে পড়ে গোসল ও খেলাধুলা করতে। স্থানীয় কয়েকজন নিষেধ করলেও তাদের কথা না শুনে সাঁতার জেনে বলে নেমে পড়ে তারা। সবকিছু ঠিকই ছিল। খেলাধুলা ও গোসল শেষে কয়েকজন উঠেও আসে। কিন্তু সমুদ্রে জোয়ার আর প্রবল ঢেউ এর কারনে পানিতে তলিয়ে যায় মোঃ ইয়াসিন (১৮), মো: আলাউদ্দিন (২২) ও মো: সাইফুল ইসলাম (২৪) নামের তিন যুবক। পরে তাদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিস ও আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল। যৌথভাবে পরিচালনা করা হয় উদ্ধার অভিযান।
এ বিষয়ে বাঁশবাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারনে এসব দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। সমুদ্রে বালু উত্তোলনের কারণে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ার এলে এসব গর্ত পানিতে দেখা যায়না। ফলে এসব গর্তে পড়েই পর্যটকরা মৃত্যুবরণ করছেন। আগে যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে আজও একই স্থানে ঘটেছে। বালু উত্তোলনের কারনে সৃষ্ট গর্তগুলো যদি না থাকতো তাহলে আজ এই দিনটা দেখতে হতোনা। পাশাপাশি গর্তের কারনে আশেপাশেও ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ফলে দিন দিন গর্তটি আরো বড় হচ্ছে। গত কিছুদিন আগে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি অসাবধানতা বশত ছিল। এই ধরনের ঘটনার পর স্থানীয়রা সবাই সতর্ক হয়ে যায়। পাশাপাশি সতর্ক করা হয় পর্যটকদেরও। ঐদিন ঘটনার পরও পর্যটক কমেনি। প্রতিদিনই আসছে হাজার হাজার পর্যটক। সীবিচের আশপাশে সাইনবোর্ড থাকার পরও আজকের ঘটনাটি দুঃখজনক। যারা আজ সমুদ্রে নেমেছিল তাদের বার বার নিষেধ করা হয়েছিল। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার কথাও। তারপরও তারা কারো কথার কর্ণপাত না করে আমরা সাঁতার জানি বলে সমুদ্রে নেমে যায়। পরের ঘটনাতো সবাই জানে। তবে আমি মিডিয়ার মাধ্যমে সকলকে অনুরোধ করব কোন পর্যটক যেন ওই পাশ দিয়ে আর সমুদ্রে না নামে।
এদিকে একই কথা বললেন আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, সীতাকুন্ডের জনপ্রিয় এই বীচকে কেউ ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। বসুন্ধরা গ্রুপের বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গর্তের কারনেই এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। না হয় এর আগে তো কখনো কেউ আহত হওয়ারও কথা শুনলাম না। একমাত্র এসব গর্তের কারনেই আজ বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।
এদিকে কয়েকদিন আগে সমুদ্রে নেমে ২ ছাত্রের মৃত্যুর পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রে নেমে যেভাবে আগে চারিদিক দৌড়াদৌড়ি করে উল্লাসে মেতে থাকতো পর্যটকরা তেমনটা এখন আর নেই। কেউ কেউ হাঁটু পরিমান পানিতে নেমে ভয়ে আবার দৌড়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। যারা পানিতে নামার কথা চিন্তা করে তারা ২ ছাত্রের নিখোঁজের কথা শুনে কেউ সাহস করে আর নিচে নামছেনা। সব পর্যটকদের চেহারাতে যেন ভয়ের দাগ। পানিতে নামাটাই যেন যত ভয়ের।
এ বিষয়ে বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, এটা যেহেতু সরকারিভাবে ঘোষিত কোন পর্যটন এলাকা নয় তাই তদারকি করার মত কেউ নেই। তবে গতবারের ঘটনার পর থেকে প্রশাসন ও বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল।
সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকূল আলম জানান, কিছুদিন আগে ২ ছাত্র মারা যাওয়ার পর চট্টগ্রাম ও সীতাকুন্ড উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য কয়েকটি সাইনবোর্ড দিয়েছিলাম। তারপরও অঘটন ঘটে গেল। একটি বীচের কারনে এভাবে প্রাণহানি চলতে দেয়া যায় না। এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
খবর বিভাগঃ
জেলা সংবাদ
ভ্রমণ ও পর্যটন
0 facebook: