![]() |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ সরকার এবারের হজ্জযাত্রা নিয়ে প্রথম থেকেই সতর্কাবস্থায় । নির্বিঘ্ন হজ্জযাত্রার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন থাকলেও আতঙ্কিত নয়। বরং অন্যবারের চেয়ে প্রস্তুতি ও সতর্কতা বেশি থাকায় প্রায় ত্রুটিপূর্ণ হজের দুর্লভ নজির স্থাপন করতে চায় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ্জ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম গতকাল রোববার (৮ জুলাই) দুপুরে এ বিষয়ে কথা বলেন।
এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ্জ করতে যাচ্ছেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন সাত হাজার ১৯৮ জন। রাষ্ট্রীয় খরচে এবারও হজে যাবেন তিনশোর বেশি হাজি। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৮০ জনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, ধর্মমন্ত্রী, জাতীয় সংসদ, সংসদীয় কমিটিসহ অন্য স্থান থেকে এই কোটা পূরণ করা হবে।
এবারও বাংলাদেশ থেকে হজ্জযাত্রী বহন করবে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স। সমান দুই ভাগে ভাগ করে যাত্রী বহন করবে দুই এয়ারলাইন্স। এরমধ্যে বাংলাদেশ বিমান ফ্লাইট পরিচালনা করবে ১৮৭টি ও সৌদি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করবে ১৮৮টি।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার প্যাকেজ-১ এর ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৯৭ হাজার ২২৯ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এর ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩১ হাজার ৯৫৯ টাকা। এবারও বাংলাদেশ বিমান ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে হজ্জ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
হজ্জ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি বিষয়ে হজ্জ কর্মকর্তা সাইফুল বলেন, কোনোদিনই পরিপূর্ণ ঝামেলামুক্ত হজ্জ ব্যবস্থাপনা করা কঠিন। তবে এবার ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি ভালো থাকায় আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সুষ্ঠু হজ্জ পরিচালনা সম্ভব হবে বলে সরকার আশা করছে।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে সব হাজির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জনদের কার্যালয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। হাজিদের হেলথ কার্ড দেওয়া হবে, যাতে সৌদিতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে তার চিকিৎসকরা দ্রুত চিকিৎসা করতে পারেন। এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো সময়সীমা নেই। তবে যাতে বেশি মুনাফার জন্য চিকিৎসকরা অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা না করান, সে বিষয়ে সিভিল সার্জনদের সতর্ক করছে মন্ত্রণালয়।
‘যতক্ষণ হাজিরা দেশে থাকেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সরকারি বা বেসরকারি হাজি থাকেন। কিন্তু প্লেনে ওঠার সময় থেকেই তারা বাংলাদেশের হাজিতে রূপান্তরিত হয়। আমরা তাদের বাংলাদেশি হিসেবেই দেখি। তাই তাদের হয়রানি বন্ধে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। হাজিদের সেবায় সৌদিতে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেনো কারও প্রটোকল নিয়ে ব্যস্ত না থাকে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। কেউ এ ধরনের ভুল করলে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে। এ বছর যতগুলো টিম হজ্জযাত্রীদের সেবায় সৌদিতে যাচ্ছে, তাদের আলাদা আলাদা প্রশিক্ষণে বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়েছে।’
সাইফুল বলেন, এজেন্সিগুলোর জন্যই প্রতিবছর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সরকারকে। এবার সেই অবস্থার জন্য আগে থেকেই সরকার সতর্ক। সিভিল এভিয়েশন থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, কোনো এজেন্সির জন্য ফ্লাইট মিস হলে ওই ফ্লাইটের যাত্রী অন্য কোনো স্লটে হজে যেতে পারবেন না। এতে এজেন্সিগুলো টিকিট করতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ বিমানের ৪৫ হাজার টিকিট বিক্রি সম্পন্ন। ১৪ জুলাই থেকে হজ্জ ফ্লাইট শুরু হবে। ততক্ষণ আরও টিকিট সম্পন্ন হবে।
মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সৌদি দূতাবাস সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরইমধ্যে ১০ হাজার হাজির ভিসা সম্পন্ন হয়েছে। আজ থেকে পাসপোর্ট আসা শুরু হয়েছে। দূতাবাস দিনে ১০ হাজার ভিসা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তারা শনিবারও তাদের অফিস খোলা রেখে হাজিদের ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এজেন্সির প্রতারণা যাতে ঢাকা পর্যন্ত না আসে সে জন্য ৬৪ জেলা ও ৫ আঞ্চলিক কেন্দ্রে হাজিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে হাজিদের বলা হয়েছে এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিপত্র করতে। এতে দেশে বা সৌদিতে এজেন্সি যদি হাজিদের সঙ্গে প্রতারণা করে এবং কথা দিয়ে তা না রাখে, তবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা সহজ্জ হবে। একই সঙ্গে হাজিদের বলা হয়েছে ঢাকায় রওয়ানা দেওয়ার আগে তারা যেনো এজেন্সির কাছ থেকে ভিসা, পাসপোর্ট ও টিকিট বুঝে নেন। তাহলে ঢাকায় আর কোনো ঝামেলা হবে না।
সাইফুল আরও বলেন, এবার মোট ৫২৮টি হজ্জ এজেন্সি হাজি পাঠানোর কাজ করছে, যা গতবছর ছিল ৬৩৫টি। গতবছর যেসব প্রতিষ্ঠান হাজিদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাদের অনেকেরই লাইসেন্স ও জামানত স্থগিত, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এবারও আমরা এজেন্সিগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি তাদের বাড়িভাড়া, ভিসা, প্লেন টিকিট বিষয়ে।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ধর্ম ও জীবন
0 facebook: