17 July 2018

জাতীয় জরুরী সেবা নম্বরে ‘অপ্রয়োজনীয় ও ভুয়া কল’ই বেশি!


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আইনজীবী সুরাইয়া জান্নাত সুমিবাড়ির সামনে রাত দেড়টা পর্যন্ত ভয়ানক জোরে হৈ হুল্লোড় আর গান বাজছিলসে সময় তার বোন ও নিজের দুজনেরই পরীক্ষা চলছেকান ফাটা হিন্দি গানে পড়াশোনা চুলোয় উঠেছে

সুরাইয়া জান্নাত সমস্যা সমাধানে জরুরী সেবা নম্বরের সহায়তা নিয়েছিলেন

তিনি বলছেন, ‘বাসার ঠিক উল্টো পাশে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলরাত দেড়টা পর্যন্ত অনেক জোরে হিন্দি গান বাজছেআমার বোনের পরীক্ষা চলেআমারও তখন হাইকোর্টের পরীক্ষা চলেতারপর আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর ওরা আমাকে মোহাম্মদপুর থানার সাথে কানেক্ট করে দেয়সব মিলিয়ে দশ মিনিট লেগেছিলওরা এসে কথাবার্তা বলে গান বন্ধ করে দিয়ে যায়

এই সমস্যাটি অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে

কিন্তু ঈদের সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৌহিদুজ্জামান তন্ময় বলছিলেন, তিনিও মোটামুটি ৩০ মিনিটের মাথায় সহযোগিতা পেয়েছেন

জরুরী সেবা নম্বরের কাজ এমনই হওয়ার কথা

কিন্তু এই নম্বরের দায়িত্বে থাকা পুলিশের টেলিকম ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়ার পর থেকে তাদের কাছে এ পর্যন্ত মোট ৩৭ লাখের মতো কল এসেছে

যার মধ্যে ২৪ লাখই অপ্রয়োজনীয় কল, ভুয়া কল বা অনেক ক্ষেত্রে কৌতূহলী হয়ে ফোন করেছেন অনেকে

১৮ লাখ ফোন কলই ছিল যেখানে কলার কোনো কথাই বলেননি

শুধু পুলিশের কণ্ঠ শুনে ফোন কেটে দিয়েছেনছয় লাখ ছিল আজেবাজে কথাবার্তা

যেমনটা বলছেন অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মো: ইকবাল হাবিব, ‘অনেকেই কল করছে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে তখন কিছু বলছে নাআর ক্র্যাংক কলকে আমি বলছি অবাঞ্ছিত কলএই কলটি করে তারা আসলে কোনো সাহায্যের বিষয়ে বা প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ে কথা বলে নাএমন কলার নাম্বারটি ব্যস্ত রাখে এবং তাতে প্রকৃত অর্থে যার সাহায্য দরকার সে বঞ্চিত হয়

কিন্তু ভিন্ন ধরনের গল্প শোনালেন ঢাকার বাংলামোটর এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের মালিক

তিনি বলছিলেন, ‘আমার রেস্টুরেন্টে চাঁদাবাজির ঘটনা সম্পর্কে নালিশ জানাতে ফোন করেছিলামআমাকে প্রথমে স্থানীয় থানার ফোন নম্বর ধরিয়ে দেয়া হলসেখান থেকে দেয়া হল ডিউটি অভিসারের নম্বরতিনি জানালেন এটা তার অঞ্চলের নয়যখন বুঝলেন তারই অঞ্চলের তখন আর এক অফিসারের নম্বর দিলেনতিনি বললেন ব্যস্ততার কথাএতে অনেক সময় চলে গেলো যে আমি নিজেই অন্য উপায়ে, মানে কিছু টাকা দিয়ে সমস্যার সমাধান করে ফেললাম

কিন্তু বিশ্বব্যাপী নিয়ম হল সরাসরি জরুরী নম্বরের দায়িত্বপ্রাপ্তরাই সংশ্লিষ্টদের জানাবেন এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির কাছে জরুরী সেবাদানকারীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন

বর্তমানে এই কল সেন্টারে ৭০ জন কাজ করেনতবে এটি বাড়িয়ে ১০০ জন করার চিন্তা চলছে

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী এমন কলের মোটে ৩৭ হাজারের ক্ষেত্রে তারা সেবা দিয়েছেন

অর্থাৎ ১৩ লাখের মতো বিশাল সংখ্যক কলার কোন সাহায্য পাননি

আর বিপদগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের সময় লেগেছে ৩০ মিনিট

সময়টি জরুরী বিভাগের রেসপন্স টাইম হিসেবে অনেক বেশিআর ততক্ষণে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে

ঘটনাস্থলের দূরত্ব, ট্রাফিক জ্যাম এবং গাড়ি ও জনবল সংকটই এর মূল কারণ বলছেন অতিরিক্ত মহাপুলিশপরিদর্শক মো: ইকবাল হাবিব

তিনি বলছেন, এই সময় ১০ মিনিটে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে

তিনি বলছেন, ‘পুলিশের গাড়িগুলোতে জিপিআরএস বসানো হবেকোন গাড়িটি ঘটনাস্থলের সবচাইতে কাছে আছে সেটিকে খুঁজে তাকে সরাসরি ঘটনাস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চাই

তবে সেজন্যে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে জনগণকে

ডিসেম্বরে তা চালু করার চেষ্টা চলছেআর যারা ঘন ঘন ক্র্যাংক কল বা ব্ল্যাংক কল করছেন তাদের শাস্তি ও জরিমানার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা

কিন্তু যে ১৩ লাখ কলার সাহায্য পাননি তার কারণ কি?

এই কর্মকর্তা বলছেন, ‘সাত লাখ কল এসেছে নানা ধরনের প্রশ্ন নিয়ে যারা মূলত মোবাইল অপারেটরদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন যা আমাদের জানা নেইআমাদের কাছে সবাই সেবা পেয়েছেসবার কল আমরা ধরেছি

কেউ সহায়তা পাননি সেটি মানতে রাজি নন তিনি

কিন্তু ঐ রেস্টুরেন্ট মালিকের মতো অবস্থায় কেন পরছেন অনেকে তার জবাব ঠিক মেলেনি

সূত্রঃ বিবিসি


শেয়ার করুন

0 facebook: