29 July 2018

পাহাড়ধসের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে ২২ হাজার রোহিঙ্গা


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ  কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ধসের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ২২ হাজার ৪০০ রোহিঙ্গাএ তথ্য জানিয়েছে আশ্রয়শিবিরে কর্মরত জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ বা আইএসসিজি

২৪ জুলাই আইএসসিজির দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, পাহাড়ধসের মোট ঝুঁকিতে আছে ২ লাখ ১৬ হাজার রোহিঙ্গা২২ জুলাই পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় ৩০ হাজার ৩৭৫ জনকে

গত শুক্রবারও প্রায় ১ হাজার রোহিঙ্গাকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছেগত তিন দিনের ভারী বর্ষায় আশ্রয়শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা আরও বেড়েছেগতকাল সকালে উখিয়া ও টেকনাফের কয়েকটি আশ্রয়শিবির ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরউখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরের মধ্যে প্রশাসন গত জুনে এটিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণহিসেবে চিহ্নিত করেকারণ, এ শিবিরের ৩৭ হাজার ৬৮৬ জন রোহিঙ্গার বসতি উঁচু পাহাড়ের ঢালুতে

গতকাল সকালে হাকিমপাড়া শিবিরের কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ভারী বর্ষণে পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ছেএতে ৪০-৫০টি ত্রিপলের বসতি ভেঙে গেছেকিছু ঘর পাহাড়ের খাদের কিনারে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে আছেকিছু ঘরের তলার মাটি সরে গেছেঘরগুলো হেলে পড়ছে নিচের দিকে

এই শিবিরের ডি ব্লকের প্রায় ৭০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের ঢালুতে ছলেমা খাতুনের দোচালা ছোট ঘরবাঁশ আর পলিথিন দিয়ে তৈরি ঘরটিতে থাকেন ছলেমার মা, তিন ছেলেমেয়ে ও দুই ভাইবোনসহ সাতজনঘরটির এক কোনার তলার মাটি সরে গেছেআশপাশের আরও পাঁচটি ঘরের তলার মাটি সরে যাচ্ছেনিচের দিকে হেলে পড়ছে তিনটি ঘর

ছলেমা খাতুন (৩৭) বলেন, গতকাল সকালে বৃষ্টির পানি ঢুকে আরও মাটি সরে গিয়ে ঘরটি হেলে পড়ছেপ্রাণহানির আশঙ্কায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে পাশের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেনকিন্তু বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মাথা গোঁজার বিকল্প ঠাঁই হয়নি

ছলেমার বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলীবাজারেগত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাঁর স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেধরে নিয়ে যায় বাবা ও দুই ভাইকেএখনো পর্যন্ত তাঁদের খোঁজ নেইআশ্রয়শিবিরে চাল, ডাল, তেলসহ সবকিছু পাওয়া গেলেও শান্তি নেইসব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়া করে বেড়ায়

এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার গেলে তাজনিমারঘোনা আশ্রয়শিবিরপ্রশাসন এটিকেও অধিক ঝুঁকিপূর্ণহিসেবে চিহ্নিত করেছেএই শিবিরে রোহিঙ্গা আছে ৪১ হাজার ৮৩৩৮০ শতাংশ রোহিঙ্গার বসতি পাহাড়ের ঢালুতেগত তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ধসে এখানেও দুই শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে

টেকনাফের সাতটি আশ্রয়শিবিরের মধ্যে দুটি চাকমারকুল ও উনচিপ্রাং শিবিরের কিছু অংশে পাহাড় আছেপাহাড়গুলো অপেক্ষাকৃত নিচু বলে প্রশাসন কম ঝুঁকিপূর্ণহিসেবে চিহ্নিত করেছেএই দুই শিবিরে আছে ৪৪ হাজার রোহিঙ্গা

দুপুরে চাকমারকুল আশ্রয়শিবিরে কথা হয় কলিম উল্লাহর (৪৮) সঙ্গেতিনি বলেন, বৃষ্টি হলেই শিবিরের অসংখ্য ঘর ঢলের পানিতে ডুবে থাকেএ সময় নারী-শিশুদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না

আইএসসিজির তথ্য
আইএসসিজির তথ্যমতে, ২৪ জুলাই পর্যন্ত শিবিরগুলোতে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে ১৬৬টিভারী বর্ষণে বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয় ২৪টি শিবিরেক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গাএর মধ্যে ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজার ৯০০ জন, ঝোড়ো হাওয়ায় ২১ হাজার ৬০০ জন, আগুনে ৪৪ জন ও বন্যায় ৩ হাজার ৫০০ জনপাহাড়ধসের ঘটনায় আহত হয়েছে ৪৯ জন


শেয়ার করুন

0 facebook: