স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ চামড়ার দাম চার বছর ধরেই ক্রমাগত পড়তির দিকে, অথচ চামড়াজাত পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এবার চামড়ার দাম স্মরণকালের তলানীতে নেমে আসার পর বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।
চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করে এমন বেশি কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে একটি কোমরের বেল্টের দামই আস্ত গরুর চামড়ার চেয়ে বেশি। আর একটি জুতার দামে পাওয়া যাচ্ছে ছোট আকারের ২০টি আর বড় আকারের আট থেকে ১০টি গরুর চামড়াও।
বহুজাতিক কোম্পানি বাটার অনলাইনে দেখা গেছে একটি চামড়ার বেল্টের সর্বনিম্ন দাম ৮৯০ টাকা।
আরেক জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান এপেক্সের সর্বনিম্ন বেল্টের দাম দেখা গেছে ৯৯০ টাকা। সর্বোচ্চ দুই হাজার ১৬০ টাকাও দেখা গেছে দাম।
লেদারেক্স, ক্রিসেন্ট, বে, ওরিয়নসহ প্রতিটি ব্র্যান্ডের বেল্টের দামও একই রকম, যদিও বছর পাঁচেক আগেও ২৫০ টাকায় পাওয়া যেত তা।
চামড়ার স্যান্ডেল দুই হাজার আর জুতো তিন হাজার টাকার নিচে পাওয়া মুশকিল, ১০ হাজারও আছে। আর একই ডিজাইনের জুতা পরের বছর দাম বাড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটছে।
চামড়ার দাম কমলে জুতোর দাম কেন বাড়ে, এমন প্রশ্ন নিয়মিত শুনতে হয় বিক্রয়কর্মীদের। কিন্তু তারা কোনো জবাবই দিতে পারেন না।
গরু-খাসির চামড়া সাড়া বছর কী দামে বিক্রি হয়, সে নিয়ে তেমন মাথাব্যাথা থাকে না মানুষের। তবে কোরবানির গরুর চামড়ার টাকা বিতরণ করা হয় গরিব মানুষ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। তার দাম পড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের পকেটে ঢুকছে কম টাকা।
ট্যানারি মালিকরা বরাবর বিদেশে চামড়ার দাম কমে আসার দাবি তোলে। তবে এর সত্যতা সরকার যাচাই করে না। বিদেশে চামড়ার দাম কমলে দেশে চামড়াজাত পণ্যের দাম কীভাবে বাড়ে, সেই প্রশ্নেরও কোনো জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না ট্যানারি মালিকরা।
এবার গরুর কাঁচা চামড়া বর্গফুট হিসাবে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। এই দামেই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের থেকে কিনছেন ট্যানারি মালিকরা। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এই চামড়া কিনেছেন আরও কম দরে।
লাখ বা দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। আর মাঝারি আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ছয়শ থেকে হাজার টাকায়। ছোট আকারের চামড়ার তিনশ টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে।
ঈদের প্রথম দিন বাড়তি দামে চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের তা বিক্রি করতে হয়েছে কম দামে। লোকসান গুনতে চান না এমন ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ চামড়া বিক্রি করেননি গতকাল। বাড়তি মূল্যের আশায় আজ চামড়া বিক্রির উদ্দেশ্যে গেছেন অনেক খুচরা ব্যবসায়ী। বাড়েনি দাম। গতকালের মত কম দামেই বিক্রি হচ্ছে চামড়া।
এই পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরা রীতিমতো আতঙ্কে। কারণ, তাদের বছরের একটি অংশের খরচের যোগান আসে এই চামড়া বেচেই। এবারও বিপুল পরিমাণ চামড়া আহরণ করেছে লালবাগ শাহী মসজিদ ও মাদ্রাসা। কিন্তু কম দামের কারণে বিক্রি করেননি তারা।
মাদ্রাসার ছাত্র আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমাদের তো অনেক চামড়া জমা হইছে৷ কিছু চামড়া কেনা। কিছু এমনি আসছে। ভাল একটা দাম না পাইলে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তাই হুজুররা অপেক্ষা করছেন।’'
মোহাম্মদপুরের মসজিদে কুবা প্রথম দিন কিছু চামড়া বিক্রি করলেও, এখনও অবিক্রিত অধিকাংশ চামড়া।
অপেক্ষা করলে দাম বাড়তে পারে এমন আশায় একজন বলেন, ‘প্রতিটি চামড়ায় একশ টাকা করে বেশি হলেও অনেক টাকা। তাই আমরা অপেক্ষা করছি।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: