06 November 2018

মাথা ছাড়াই বেঁচে রইল ১৮ মাস


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মাথা ছা়ড়া কেউ কোনও দিন বাঁচতে পারে? কল্পবিজ্ঞানে তো এসব আকছার হয়, কিন্তু বাস্তবে? অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটা দেখা গিয়েছিল একটা মুরগির ক্ষেত্রেএক দিন, দুদিন নয়, টানা ১৮ মাস দিব্যি বেঁচেছিল ছোট্ট প্রাণীটা, তা-ও আবার মাথা ছাড়া

খাবার দোকানে মুরগি সরবরাহ করতেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর ফ্রুটা শহরের লয়েড ওলসেন ও তার স্ত্রী ক্লারা১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরের এক সকালে গোটা চল্লিশেক মুরগি কাটার পর তাদের নজর পড়ে, ধড় থেকে মাথা আলাদা হলেও একটি মুরগি টলতে টলতে হেঁটে-দৌড়চ্ছেমাথাহীন মুরগির মৃত্যুর অপেক্ষায় সেটিকে একটি বাক্সে রেখে দিয়ে ঘুমোতে যান দম্পতি

পর দিন সকালে ঘুম ভেঙে তারা যা দেখলেন, তাতে অবাক বললেও কম বলা হয়সোনার ডিম না পাড়লেও এই মুরগির ক্ষমতাযে তার চেয়ে কিছু কম নয়, তা বুঝতে দেরি করেননি ওলসেনদ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে ছোট্ট শহরেটনক নড়ে সংবাদিকদেরদুদিন আগেও যার পরিণতি লেখা ছিল খাবারের প্লেটে, রাতারাতি সে হয়ে যায় সেলেব্রিটি

এক কথায়, অলৌকিকভাবে নতুন জীবন পাওয়া মুরগির পোশাকি নাম হয় মিরাকল মাইকমহার্ঘ পাখিটাকে দেখতে চার দিকে হইচই পড়ে যায়সাধের মুরগিকে নিয়ে প্রদর্শনীর সুবাদেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখার স্বপ্ন সত্যি হয় লয়েডের

কিন্তু মাথা ছাড়া কীভাবে বেঁচে রইল মাইক? আমার-আপনার মতো এই প্রশ্ন জেগেছিল চিকিৎসক ও প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মনেওকারণ পরবর্তী সময় অনেকেই দ্বিতীয় মিরাকল মাইক বানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেনতা হলে কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বেঁচেছিল মাইক?

আসলে লয়েড যখন মাইকের মাথায় কোপ মারেন, তখন তার একটা কান বাদ দিয়ে চোখ, ঠোঁটসহ গোটা মাথাটাই কেটে বাদ চলে যায়কিন্তু মুরগিদের মাথার পিছনেই থাকে মস্তিষ্কের মূল অংশটামাইকের ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যায় তার মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশ মাইকের মস্তিষ্কের এই অংশটাই তার শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন, খিদে, হজম নিয়ন্ত্রণ করতসময় মতো মাইকের ক্ষতের কাছে রক্তও জমাট বেঁধে গিয়েছিল, ফলে সেভাবে রক্তক্ষরণও হয়নি

মাথা না থাকায় একটি ড্রপারে করে তরল খাবার ও জল সরাসরি খাদ্যনালিতে ঢেলে দেয়া হতসিরিঞ্জ দিয়ে খাদ্যনালির চার দিকের ময়লা পরিষ্কার করে দিতেন লয়েডএভাবেই সব দিব্যি চলছিল

এক বার পশ্চিম আমেরিকার ফিনিক্স শহরে প্রদর্শনীর শেষে একটি মোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন লয়েড দম্পতি ও মাইকহঠাৎই একটা শব্দে দম্পতি চমকে ওঠেনদম আটকে মাইকের প্রাণ তখন ওষ্ঠাগতকিন্তু ওই যে সিরিঞ্জ, সেটি প্রদর্শনীতেই ফেলে এসেছিলেন লয়েডরা

১৯৪৭ সালের মার্চ মাসের এই রাতে খাবার আটকে প্রাণ যায় মাইকেরআর পাঁচটা সুস্থ মুরগি যখন বড় হতেই রান্নার কড়াইতে জায়গা পায়, তখন মাথা হারিয়েও তাদের চেয়ে বেশি দিন বেঁচেছিল মাইক


যদিও মারা গিয়েও বেঁচে ছিল মাইকতার মনিব দীর্ঘ দিন তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যেই আনেননিকেউ খোঁজ করলেই লয়েডরা বলতেন, বেচে দেয়া হয়েছে মাইককেএভাবেই মৃত্যুর পরেও বেঁচে ছিল মিরাকল মাইকের মিথ কলোরাডোর ফ্রুটা শহরে গেলে এখন মাথাহীন মুরগির স্ট্যাচুর দেখা মেলেমাইকের স্মৃতিতে প্রতি বছর মে মাসে পালন হয় হেডলেস চিকেন ফেস্টিভ্যালআর লোকমুখে ঘুরে বেড়ায় এই আশ্চর্য মুরগির গল্পসূত্রঃ আনন্দবাজার


শেয়ার করুন

0 facebook: