ফাইল ছবি |
২৩ নভেম্বর, শুক্রবার রাত ৮টার পর জাপার এক জরুরি বৈঠকে আসন তালিকা চূড়ান্ত করা হয় বলে দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এ দিন রাত ৮টার দিকে আওয়ামী লীগের কাছে জাপা কয়টি আসন চায়, তার তালিকা চেয়ে একটি চিঠি আসে। তার পরপরই জরুরি বৈঠকে বসে দলটি।
জাপার উপদেষ্টা কমিটির একজন সদস্য বলেন, দুই-তিন দিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর কষাকষি চলছে। তারা দিতে চাইছে ৪৫, আর জাপা চাইছে ৬০টি আসন। সর্বশেষ সে বিষয়ের একটি তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে এবং সেটি আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানোও হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে একটি কাগজ আসে। আওয়ামী লীগের কাছে জাপা কোন বিভাগে কতটি আসন চায়, সেটির চূড়ান্ত তালিকা জানার জন্য। পরে তড়িঘড়ি করে রাত ১০টার আগেই বসে সেটি চূড়ান্ত করেছে জাপার মহাসচিব, কো-চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যরা।
আসন চূড়ান্ত করার বিষয়ে জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন আসনে কাকে কোথায় দেবো এ বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত করিনি। আমরা তিনশ আসনেই প্রার্থী দেবো। এ বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যে আপনাদের জানানো হবে।’ জাপার একটি সূত্র জানায়, আসন ভাগ-বাটােয়ারায় আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ৪৫টি আসন ছাড় দিতে চায়। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত করতে জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথাও বলেছেন। আলোচনায় আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগ বেশ চিন্তিত। কারণ দলটি মনে করছে জাপাকে বেশি আসন দিলে তাদের জন্য ‘বুমেরাং’ হতে পারে। যদি সব আসনে জয় পায়, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য বিপদও হতে পারে জাপা। সব হিসাব কষে আওয়ামী লীগ ৪৫টির বেশি আসন দিতে চায় না। যদিও জাপার পক্ষ থেকে ৬০টি আসন চাওয়া হয়েছে এবং সেটিই শুক্রবার জরুরি মিটিংয়ে বসে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জাপার সেই নীতি-নির্ধারণী সভায় যে ৬০টি আসনের তালিকা প্রস্তুত করেছে, তার কপি প্রিয়.কম-এর হাতে এসেছে। সেই তালিকায় দেখা গেছে, ঢাকার আগের তিন আসনে জাপার বর্তমান সংসদ সদস্যদের (এমপি) নাম রয়েছে। তারা হলেন, ঢাকা-১ আসনে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ আসনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদ।
ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট-ভাসানটেক) আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ। এই আসনে এবার মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর-আদাবর) আসনে জাপার পক্ষ থেকে সফিকুল ইসলাম সেন্টুর নাম দেওয়া হয়েছে। এই আসনে বর্তমান এমপি হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
দলটির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ আসনের প্রার্থী হবেন। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমান এবারও লড়বেন। প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত ৬০টি আসনের একটি ইসলামী ফ্রন্টকে ছেড়ে দিয়েছে জাপা। আসনটি হলো চট্টগ্রাম-১২ এমএ মতিন (ইসলামী ফ্রন্ট)। পাশাপাশি আরো দুটি আসন ইসলামী মহাজোটকে ছেড়ে দিয়েছে জাপা। আসন দুটি হলো নোয়াখালী-১ আলহাজ্ব আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক (ইসলামী মহাজোট) এবং চাঁদপুর-৫ মাওলানা মো.আবু সুফিয়ান আল কাদেরী (ইসলামী মহাজোট)।
জাপার সেই তালিকার যাদের নাম
ঢাকা-১ অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৫ মীর আবদুস সবুর আসুদ, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা-১৩ সফিকুল ইসলাম সেন্টু, ঢাকা-১৭ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ সেলিম ওসমান, টাঙ্গাইল-৫ পীরজাদা মনির হোসেন, জামালপুর-২ মোস্তফা অাল মাহমুদ, জামালপুর-৩ এমএ সাত্তার, জামালপুর-৪ আসনে সাবেক এমপি মামুনুর রশিদ ছিলেন। কিন্তু তাকে এবার জাপার পক্ষ থেকে প্রার্থী করতে চাইলেও ঘোর আপত্তি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে আসনটিতে প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়টি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।
চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম- ৯ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, চট্টগ্রাম-১২ এমএ মতিন (ইসলামী ফ্রন্ট), কক্সবাজার- ৩ সন্তোস শর্মা, নোয়াখালী-১ আলহাজ্ব আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক (ইসলামী মহাজোট), ফেনী-৩ লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, কুমিল্লা-২ আমির হোসেন ভূইয়া, কুমিল্লা-৮ নরুল ইসলাম মিলন, চাঁদপুর-৫ মাওলানা মো.আবু সুফিয়ান আল কাদেরী (ইসলামী মহাজোট), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া।
রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-২ অধ্যাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, রংপুর-৪ মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, রংপুর-৫ ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, কুড়িগ্রাম-১ মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনিরউদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-৩ ডা. আক্কাস আলী, লালমনিরহাট-১ মেজর অব. খালেদ আখতার, লালমনিরহাট-২ রোকন উদ্দিন বাবুল, লালমনিরহাট-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, নীলফামারী-১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নীলফামারী-৪ মো. শওকত চৌধুরী, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শাৃমীম হায়দার পাটোয়ারি, গাইবান্ধা-৩ ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার।
রাজশাহী-৩ শাহবুদ্দিন বাচ্চু, নাটোর-২ মজিবুর রহমান সেন্টু, নাটোর- ৪ সালাউদ্দিন মৃধা, বগুড়া-২ শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৬ নুরুল ইসলাম ওমর, জয়পুরহাট-২ কাজী আবুল কাশেম রিপন, ঠাকুরগাঁও-৩ মো.হাফিজউদ্দিন, দিনাজপুর-৬ মো.দেলোয়ার হোসেন।
সিলেট-২ ইয়াহহিয়া চৌধুরী, সিলেট-৫ মো. সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, হবিগঞ্জ-১ আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু, হবিগঞ্জ-৩ আতিকুর রহমান আতিক, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্না, পটুয়াখালী-১ এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, পিরোজপুর-৩ ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী, বরগুনা-২ আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা-১ সৈয়দ দিদার বখত, বাগেরহাট-৪ সোমনাথ দে।
জাপার নতুন কোনো মুখ আসছে কি না জানতে চাইল রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, এবার নতুন মুখ থাকবে। পাশাপাশি পুরাতনরাও দলের মনোনয়ন পাবেন। তবে সেটি কতজন তা পরিষ্কার করে বলতে রাজি হননি রুহুল আমিন হাওলাদার।
0 facebook: