14 December 2018

২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়ঃ সিইসি


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, পেছনের একটা ঘটনার রেশ টানা প্রয়োজনসেটি হলো ২০১৪ সালের নির্বাচনসেই নির্বাচনের অবস্থা আমাদের ভুলে গেলে চলবে নাতখন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলসেই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়সেজন্য আমাদের এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতির রূপরেখা ও কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন

আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় সভার শুরুতে এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ বৈঠক শুরু হয়এতে সিইসি ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার এবং সেনা, নৌ, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন

তিনি বলেন, তখন মাঠে সব বাহিনী ছিলসশস্ত্র বাহিনী ছিল, পুলিশ বাহিনী ছিল, র‌্যাব ছিল, বিজিবি ছিলতবুও আমরা কি দেখিছিলাম! পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিল, প্রিজাইডিং অফিসার নিহত হয়েছিল, ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হয়েছে, শত শত মানুষ নিহত হয়েছে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছেসেটা কি প্রেক্ষিত ছিল, আমরা কেনো নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি- সে প্রসঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ ও প্রয়োজন নেইভবিষ্যতে এ বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবেএটি ভুলে গেলে চলবে না

তিনি আরো বলেন, সেই অবস্থা থেকে আমাদের কীভাবে উত্তরন করা যায়, সেরকম কোনো পাঁয়তারা যাতে না হয়আবার যাতে সেরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবেআপনাদের (আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য) দায়িত্ব জনগণের জীবন রক্ষা করা, মালামাল রক্ষা করা, সম্পদ রক্ষা ও দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাআমি আশা করব, আপনাদের নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও মানসিকতা দিয়ে এবারের নির্বাচনে আমরা এসব মোকাবিলা করতে পারবএ বছর যেন আর সেরকম তাণ্ডব না ঘটেসেরকম পরিস্থিতির সুযোগ সৃষ্টি না হয়এখন থেকে সেটা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে বলেও উল্লেখ করেন সিইসি

কেএম নূরুল হুদা বলেন, আমরা কিন্তু আশঙ্কাগুলো একেবারেই অবহেলা করতে পারি নাযেদিন প্রতীক বরাদ্দ হলো তার পরের দিনই দুর্ঘটনাসে ঘটনাগুলো যত ছোটই হোক না কেন, দুটো জীবন চলে গেলসে দুটো জীবনের মূল্য অনেককিন্তু কেন হলো? তারপর এখানে-ওখানে ভাঙচুর, প্রতিহত করাএগুলোর পেছনে কি রাজনৈতিক বা সামাজিক কারণ নাকি সেই ২০১৪ সালের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে কি না তা কিন্তু ভালোভাবে নজরে নিতে হবেগোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্ক নজরদারি থাকতে হবে

তিনি বলেন, একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবেআইনশৃঙ্খলার অবনতি হালকাভাবে নিলে হবে নারাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সতর্ক অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছেএর মধ্যে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না খতিয়ে দেখতে হবেগোয়ান্দা সংস্থাগুলোর প্রতি সতর্ক নজরদারি রাখার অনুরোধ করব

সিইসি আরো বলেন, নির্বাচন নিয়ে যখন স্বতঃস্ফূর্ত জনজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তখন খুনের ঘটনা, হামলার ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করার কোনো কারণ নেইএদেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হোক- তা না চাওয়ার ক্ষেত্রে দলের প্রভাবশালী মহল সক্রিয় থাকতেও পারেতাদের বিষয়ে সকলের বিশেষ করে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সমাজের সচেতন মহল ও জনগণের সচেতন থাকা প্রয়োজন

ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, এবার আমরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করতে চাইজনগণের ভোট মস্তানদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় নাবাক্স ছিনতাইকারীদের হাত থেকে ভোটারদের মুক্তি দিতে হবেতাই প্রথম ও প্রধান যে পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে, সে পদ্ধতির পরিবর্তে আরেকটি পদ্ধতি আনতে হবেনির্বাচন কমিশন মনে করে, ইভিএম সেরকম একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ভোটারদের ভোটের নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব হবেআমরা ছয়টি এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করতে যাচ্ছিসে ছয়টি এলাকায় যার যার দায়িত্ব তাদেরকে অনুরোধ করব, সেগুলোর দিকে আলাদাভাবে দৃষ্টি দেওয়া, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেবেনইভিএম সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এদেশের শতকরা ৮০ ভাগ অনিয়ম দূরীভূত হবে বলে বিশ্বাস করিসবগুলো নির্বাচন ইভিএমের আওতায় আনার একটি অভিষ্ঠ লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগুচ্ছিইভিএম ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবেকারণ বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের অনিয়ম দূর করার এটাই একমাত্র এবং নির্ভরযোগ্য পন্থা যোগ করেন তিনি

নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবেস্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সব বাহিনীর কৌশল ঠিক করতে হবেস্থানীয় প্রশাসনের কাছে সব থেকে বেশি তথ্য-উপাত্ত থাকেতথ্য, উপাত্তগুলো প্রয়োগ করে অন্যান্য সব বাহিনীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ছক তৈরি করতে হবেসব গোয়েন্দা সংস্থার সতর্ক নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবেঅবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে এবং এতে বিজিবিকে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন রয়েছেকারণ এতে তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে

সিইসি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নজরদারি রাখবেননারী ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আলাদাভাবে খেয়াল রাখবেনযাতে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেনপ্রত্যেক এলাকার মস্তান ও গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের তালিকা তৈরি করতে হবেযেটা আপনারা সব সময় করে থাকেনসেটা এখন থেকেই তৈরি করতে হবেভোটের ভাগ্য সন্ত্রাসীদের হাতে দেওয়া যাবে নাসন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবেপ্রয়োজন হলে তাদেরকে আটক করতে হবেতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

সিইসি আরো বলেন, গত ২০১৪ সালের সহিংস অবস্থার কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তার ছক তৈরি করতে হবেবিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে নাকারো বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করা যাবে নাসংঘবদ্ধভাবে প্রজাতন্ত্রের সকল বিভাগ নির্বাচনের দায়িত্বে সম্পৃক্ত হয়েছেনসংবিধান ও আরপিওর বলে- এখন সকল দায়িত্ব আপনাদের কাছেনির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশের নাগরিক তাদেরকেও সম্পৃক্ত থাকার জন্য অনুরোধ করবসকলকে সাথে নিয়েই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি

সিইসি আরো বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছিএরই মধ্যে প্রস্তুতির ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছেএখন শুধু ব্যালট পেপার ছাপানো সংক্রান্ত কিছু কাজ বাকি আছে

সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন


শেয়ার করুন

0 facebook: