আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আপনি কি এমন একটি ভাষা শিখতে চান, যেটিতে মাত্র তিন ব্যক্তি কথা বলেন। পৃথিবী থেকে যে ভাষাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, তারই একটি হচ্ছে- বাদেশি। একসময় পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি তুষার ঢাকা উপত্যকায় এই ভাষাটির ব্যাপক প্রচলন ছিল। পুরো উপত্যকাজুড়ে মানুষ এই ভাষায় কথা বলতেন। অথচ সেই ভাষাতেই এখন মাত্র তিন ব্যক্তি কথা বলেন। তাদের মৃত্যুর সঙ্গে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বাদেশি।-খবর বিবিসি অনলাইন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইথনোলগ নামে একটি প্রকাশনা ভাষার তালিকা ও শব্দভাণ্ডার সংগ্রহ করে। তারা জানিয়েছে, এই তিন ব্যক্তি ছাড়া এই ভাষায় কথা বলার মতো আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। খাইবার পাখতুনখাওয়ার সোয়াত জেলার বিশিকরাম উপত্যকায় এই তিনটি মানুষকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তাদের একজন রহিম গুল বলেন, একটি প্রজন্ম আগে বাদেশি ভাষায় পুরো উপত্যকার মানুষ কথা বলতেন। অথচ এখন পুরো অঞ্চলে এই ভাষায় কথা বলার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যায় না।
সত্তরোর্ধ্ব রহিম গুল বলেন, আমরা অন্যগ্রাম থেকে মেয়েদের বিয়ে করে নিয়ে আসতাম। তাদের ভাষা টারওয়ালি। তাদের শিশুরা মায়ের ভাষায় কথা বলা শুরু করে। এতে আমাদের ভাষা হারিয়ে যেতে শুরু করে। এখন পুরো উপত্যকায় টারওয়ালি ভাষার আধিপত্য। কিন্তু পশতু ভাষার পরাক্রমে টারওয়ালিরও ত্রাহী দশা। ভাষাটি কতদিন টিকে থাকতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
রহিম গুলের চাচাতো ভাই সাঈদ গুল বলেন, এখন আমাদের সন্তনরা টারওয়ালি ভাষায় কথা বলেন। কাজেই আমার ভাষায় আমি কার সঙ্গে কথা বলব? আশপাশে এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে এই ভাষাতে কথা বলা যায়। নিজের বয়স কত হবে, তা জানেন না সাঈদ গুল। তবে চল্লিশের বেশি হবে বলে জানান। পাশ থেকে একজন সংশোধন করে দেন- নাহ, ৮০ হবে। তখন সাঈদ গুল জানান, তার বয়স তা হলে ৫০। কিন্তু ৮০ হবে না কখনও।
এ অঞ্চলে কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। কাজেই তাদের দিনের সময়টা তারা পর্যটন অঞ্চল সোয়াত জেলায় কাটান। সেখান থেকে তারা পশতু শিখে এসে তাতে যোগাযোগ করেন। পরিস্থিতি এমন যে অঞ্চলটিতে এখন আর বাদেশি ভাষা ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এমনকি ওই তিন ব্যক্তিও ভাষাটি ভুলে যেতে শুরু করেছেন। তারা যখন ভাষাটিতে কথা বলেন, তখন রহিম গুল কিংবা সাঈদ গুল দুয়েকটি শব্দ ভুলে যাচ্ছিলেন। পরে একটু পর মনে হলে, তারা সেই শব্দটি উচ্চারণ করেন।
রহিম গুলের এক ছেলে ও পাঁচ নাতি রয়েছেন; যাদের সবাই টারওয়ালি ভাষায় কথা বলেন। তার ছেলে বলেন, আমার মা টারওয়ালি ভাষায় কথা বলতেন। কাজেই ঘরে আমার বাবা-মা এই ভাষা ব্যবহার করতেন না। তাই আমি শিখতে পারিনি। কয়েকটি শব্দ ছাড়া ভাষাটির আমি কিছুই জানি না। আমি আমার সন্তানদেরও শেখাতে পারিনি। আমরা সবাই টারওয়ালি ভাষায় কথা বলি।
তিনি বলেন, আমি অনুতপ্ত। কিন্তু আমার বয়স এখন ৩২। কাজেই ভাষাটি শেখার কোনো সুযোগ আমার নেই। এ ভাষার ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমার খুব কষ্ট হয়। আমার বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভাষাটি হারিয়ে যাবে ভেবে আমি খুবই ব্যথিত। ভাষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দা ফোরাম ফর ল্যাঙ্গুয়েজ ইনিশিয়েটিভের ভাষাবিদ সাগর জামান বলেন, আমি উপত্যকায় তিনবার ভ্রমণ করেছি। তারা আমার সঙ্গে এই ভাষায় কথা বলতে অনিচ্ছুক। অন্য ভাষাবিদ ও আমি ভাষাটির মাত্র ১০০ কিংবা তার চেয়ে কয়েকটি বেশি শব্দ সংগ্রহ করতে পেরেছি।
সাগর জামান বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে- এটি ইন্দো-আর্য উপপরিবারের ভাষা। টারওয়ালি ও পশতু ভাষিরা বাদেশিকে পছন্দ করেন না। এ ভাষায় কথা বলতে তাদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা দেখা গেছে। তিনি বলেন, ভাষাটি রক্ষায় আমাদের উদ্যোগ নিতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে। একসময় মাত্র কয়েকটি শব্দ ছাড়া ভাষাটির কিছুই থাকবে না।
খবর বিভাগঃ
অন্যান্য সংবাদ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: