03 January 2019

কলকাতা তথা সিরাজের পতনের মূলে ছিল চার হিন্দু


সাহিত্য ও সংস্কৃতিঃ এক মুসলিম নবাব প্রাণপণে চেষ্টা করলেন বাংলা বাঁচাতেঅপরদিকে হিন্দু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা ক্রমাগত সাহায্য করে গেল ইংরেজদেরফলাফল প্রথমে ইংরেজবাহিনীর কলকাতা দখল এবং পরে বাংলা দখল২ জানুয়ারি ১৭৫৭, এমন দিনেই কলকাতা পুনর্দখল করে ইংরেজরাএরপর পলাশির যুদ্ধে কলকাতা এবং বাংলাকে পরিপূর্ণভাবে দখলে এনেছিল ব্রিটিশরাবিশ্বাসঘাতকতার সৌজন্যে প্রভাবশালী রায়দুর্লভ মানিকচাঁদ, জগৎ শেঠ এবং উমিচাঁদ

অনেকটা পিছনে গেলে ছবিটা আরও স্পষ্ট হতে পারে১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ, টমাস রো কোম্পানিকে চিঠি লিখেছিলেন, আর যাই হয়ে যাক তাদের এই কম সৈন্য নিয়ে স্থলভাগে লড়াই করা যাবে নাতিনি স্পষ্ট বলে দেন, “যদি লাভজনক বাণিজ্য করতে চান তবে তা শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করুন আর সমুদ্রে আপনাদের কার্যক্রম সীমিত রাখুনবিতর্ক পরিত্যাগ করে এটা নিয়ম হিসেবে গ্রহণ করাই ভালো যে ভারতে স্থলযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে 


১৬৮১ সালে স্যার জোসিয়া চাইল্ড কোম্পানি পুরনো নীতি ভুলিয়ে স্থলপথে ভারত দখলের পরিকল্পনা করে। 

দিল্লির সম্রাটদের সঙ্গে কিছু যোগাযোগ থাকলেও তাদের আসল লক্ষ্য বাংলা তথা কলকাতার দিকে ছিলকারণ ঐতিহাসিকরা মনে করছেন, এখানে ছিল গঙ্গা নদী যা বানিজ্যের জন্য অসাধারণ জায়গা

নবাব আলীবর্দী খাঁ পূর্ব ভারতে কোম্পানির ক্ষমতাকে দমিয়ে রেখেছিলেনসিরাজ নবাব হওয়ার পর সেই চেষ্টাই করেছিলেনকিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা এবং বেইমানিতপন মোহন চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পলাশীর যুদ্ধবই এমন তথ্যই দিচ্ছেভিতরে ভিতরে সিরাজকে ফোঁপরা করে দিয়েছিল কলকাতার প্রভাবশালী রায়দুর্লভ মানিকচাঁদ, জগৎ শেঠ এবং উমিচাঁদযদিও এদের সবার উপরে অবশ্যই আলীবর্দী খাঁর এক দূর সম্পর্কের বোনের স্বামী মীর জাফর আলী খাঁ 

১৭৫৬, ৯ এপ্রিল নবাব রূপে সিরাজের পদার্পণএপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই জঙ্গশুরু হয়ে যায় ইংরেজদের সঙ্গেপ্রতিপদে অবনিবনা হতে শুরু করেইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অজুহাতে বাংলায় ইংরেজ ও ফরাসিদের দুর্গ নির্মাণ শুরু হয় বাংলায়নবাব এতে বাধা দিলে মেনে নেয় ফরাসিরাইংরেজ তা মানেনি২০ মে, ১৭৫৬ সালে নবাবকে পাঠানো গভর্নর ড্রেকের চিঠিতে দুর্গ তৈরি বন্ধ করার কোনও উল্লেখ ছিল নানবাবের পূর্ণিয়া যাওয়ার কথা ছিল

বাধ্য হয়ে সিরাজ পুর্নিয়া না গিয়ে মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেনকলকাতায় ইংরেজদের দমনের উদ্দেশে সসৈন্যে যাত্রা করেন১৭৫৬-র ২০ জুন কলকাতার দুর্গ নবাব সিরাজউদ্দৌলার দখলে আসেগভর্নর ড্রেক ও অন্যান্য ইংরেজ কলকাতা ছেরে পালায়তবে তাদেরকে টিকিয়ে রাখে প্রভাবশালী হিন্দু উমিচাঁদ, জগৎ শেঠ, রায়দুর্লভ মানিক চাঁদ এবং শোভাবাজার রাজ বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেব 


২৭ ডিসেম্বর, ১৭৫৬ সাল , ফের ইংরেজ সৈন্য ও নৌবহরের কলকাতা দখলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেএবং ২ জানুয়ারি, ১৭৫৭ সাল , মানিকচাঁদদের বেইমানিতে ইংরেজেরা কলকাতা আবারও দখল করে নেয়সিরাজ আবারও কলকাতার পথে আসেনজানুয়ারির শেষের দিকে তিনি হুগলী পৌঁছতেই কলকাতা ছেরে পালায় ক্লাইভের বাহিনীতবে এবার আগের মতো পুরো সরে যায়নি তারা

৫ ফেব্রুয়ারি, কলকাতায় সিরাজের শিবির আমির চাঁদের বাগানে আক্রমণ করে ক্লাইভ ও ওয়াটসনসিরাজের পাল্টা হামল করেনক্লাইভরা নবাব শিবির দখল করতে পারেনিতবে ওই চার জনের সহায়তায় তারা ভিতরে ভিতরে বেশ শক্তিশালীসবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক অবশ্য সিরাজের রাজ বাড়িতেই ছিল

এরপর সিরাজের সঙ্গে সরাসরি ইংরেজদের লড়াই পলাশির যুদ্ধেসিরাজের ৫০ হাজার সৈন্য হেরে গেল ইংরেজদের ৩০০০ সৈন্যের কাছে যাদের অধিকাংশই আবার স্থানীয় ভাড়া করা সৈন্যএখানেই বড় চাল চেলেছিলেন মির জাফর৫০ হাজার সৈন্যের বেশীরভাগই থেকেও লড়লেন না

অতঃপর বাংলা দখলে সক্ষম ইংরেজ এবং কলকাতাও স্বাভাবিকভাবেই দখলেপরে কলকাতা পরাধীন ভারতের রাজধানী যা বাংলার হয়েও প্রভাবশালী মানিকচাঁদ, জগৎ শেঠ এবং উমিচাঁদদের বিশ্বাসঘাতকতায় ধীরে ধীরে চলে গিয়েছিল ইংরেজদের হাতে

প্রসঙ্গত, বাংলা দখলের পর শোভাবাজারে শুরু হয় বিখ্যাত দুর্গাপুজোযা আজও আড়ম্বর সঙ্গে পালিত হয়রাজা হন নবকৃষ্ণপ্রচুর সম্পত্তি নিয়ে প্রতিপত্তি লাভ করন হাওড়ার আন্দুলের রাজ পরিবার


তথ্য সুত্র তপনঃ মোহন চট্টোপাধ্যায় তাঁর পলাশীর যুদ্ধ বই


শেয়ার করুন

0 facebook: