11 January 2019

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের আবারো হত্যার হুমকি

ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান আরো জোরদারের খবর পাওয়া গেছেনো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযানে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করা হচ্ছেএমনকি হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে

এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় রোহিঙ্গারা পালিয়ে তামব্রু-নাইখংছড়ি সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডেও আসতে পারছেন নাঅল্প কয়েকজন রোহিঙ্গা টেকনাফ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছেওই নো-ম্যানস ল্যান্ডে ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান আর্মি (এএ)-র বিরুদ্ধে চলমান সেনা অভিযানের মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর ১৩ জন সীমান্ত পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়

তাদের দাবি, বুথিয়াডং এলাকার চারটি সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালানো হয়তবে আরাকান আর্মির পক্ষ থেতে ৭ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করা হয়েছেআর জিম্মি থাকা আরো ১২ জনকে মুক্তি দেয়ার কথা জানানো হয়এরপর থেকেই রাখাইনে মিয়ানমারের সেনা অভিযান আরো তীব্র হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে

এদিকে ৭ ডিসেম্বর মিয়ানমার দাবি করেছে, রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মির মধ্যে যোগাযোগ আছেআর ওই দু'টি সংগঠনের ঘাঁটি আছে বাংলাদেশেকিন্তু ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের দাবিকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করেপ্রসঙ্গত, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষার নামে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়ছে আরসাআর ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি

মিয়ানমারের তমব্রু ও বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও রাখাইনে সেনা অভিযান আরো তীব্র হওয়ার খবর পাচ্ছেন নানা সূত্রেনো-ম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ নো-ম্যান্স ল্যান্ড থেকে জানান,‘‘আরাকান আর্মিকে নির্মূলে মিয়ানমারের সেনারা অভিযান চালাচ্ছে আর রোহিঙ্গা যারা আছেন, তারাও এই অভিযানের শিকার হচ্ছেনআরাকান আর্মির সাথে রোহিঙ্গাদের যোগাযোগের অজুহাত তুলে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছেতাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছেনির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও ওখানে যারা আছেন তাদের কাছ থেকে খবর পেয়েছি’’

তিনি আরো জানান,‘‘রাখাইনের রোহিঙ্গারা চাইলেও নো-ম্যান্স ল্যান্ডের দিকে আসতে পারছেন নাকারণ, সীমান্তে কঠোর পাহারা বসানো হয়েছে, নৌকা চলাচলও বন্ধসীমান্ত এলাকায় সব ধরনের মুভমেন্ট বন্ধতবে টেকনাফ এলাকা থেকে কিছু রোহিঙ্গা প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে খবর পেয়েছি’’

টেকনাফের স্থানীয় নানা সূত্রের সঙ্গে কথা বলে কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে দু-চারদিনে প্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নিটেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের নেতা রশীদ আহমেদ জানান, ‘‘আমরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির তীব্র লড়াইয়ের খবর পাচ্ছআর আরাকান আর্মি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অভিযান চলাচ্ছেতাদের ওপর নির্যাতন চলছেআমরা নানা মাধ্যমে প্রতিদিনই খবর পাইকিন্তু দুই দিকের সীমান্তেই কড়া পাহারা থাকায় তারা সীমান্তের দিকে আসতে পারছে নাটেকনাফ সীমান্ত দিয়ে কেউ এসেছে বলে আমাদের কাছে খবর নেইযারা পালানোর চেষ্টা করছেন তাদের ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে ক্যাম্প বানানো হয়েছে সেখানে নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আটকে রাখছেক্যাম্পে নিয়ে আইডি কার্ড ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে’’

এদিকে কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর-এর পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার যোশেফ সূর্য ত্রিপুরা বলেন,‘‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে বা সীমান্তে তাদের চাপের কোনো তথ্য এখানো আমার কাছে নেইফিল্ড লেভেলে কথা বললে হয়তো সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে পারব’’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু করেএর আগে ২০১২ সালেও মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়এই দুই দফায় ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে

এরপর বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনা ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয় মিয়ানমারগত ১৫ নভেম্বর প্রথম দফায় ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কোনো রোহিঙ্গাই ফেরত যেতে রাজি হননি


শেয়ার করুন

0 facebook: