16 January 2019

বান্দরবান সীমান্তে তুমব্রু খালের উপর পিলার নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার


জেলা প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে বাংলাদেশ অংশ থেকে মিয়ানমারে প্রবেশ করা তুমব্রু খালের উপর পাইলিংসহ পাকা পিলারের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপি

বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অংশ হিসাবে তুমব্রু খালে এমন পিলার বসাচ্ছে তারামিয়ানমারের এমন পদক্ষেপের ফলে পানি চলাচল ও নিষ্কাষণের পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশ অংশ ও নো-ম্যান্স ল্যান্ডে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে

ইতোমধ্যে এনিয়ে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে অবস্থানরত বাস্ত্যুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে আজ মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ অংশ থেকে মিয়ানমারে প্রবেশ করা তুমব্রু খালের উপর পাকা পিলারের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিপি

আর তুমব্রু খালের যেখানে পাকা পিলার স্থাপন করা হচ্ছে তার উপরে পাহাড়ে রয়েছে বিজিপির তুমব্রু রাইটক্যাম্প।  বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অংশ হিসাবে তুমব্রু খালে তারা ৮/১০ ফুট পর পরই পাইলিং করে এসব পাকা পিলার বসাচ্ছে
ইতোমধ্যে এ খালে ৯টি পিলার স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছেসেখানে তারা আরো ৬টি পিলার স্থাপন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছেকিন্ত মিয়ানমারের এমন পদক্ষেপের ফলে পানি চলাচল ও নিষ্কাষণের পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশ অংশ ও নো-ম্যান্স ল্যান্ডে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে

ইতোমধ্যে এনিয়ে নো-মেন্স ল্যান্ডে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে অবস্থানরত বাস্ত্যুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী গণহত্যাঅভিযান শুরুর পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাস করছে প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গাএটি বর্তমানে কোনাপাড়া নামে পরিচিত। আর এই অস্থায়ী শিবির থেকে মাত্র ৬/৭শ ফুট দূরে তুমব্রু খালের উপর বিজিপির পাইলিংসহ পাকা পিলারের নির্মাণের কারণে ওই এলাকায়  রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য অনুপোযোগী হয়ে পড়বে বলে অভিযোগ নো-ম্যান্স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গা নেতাদের। তাদের অভিযোগ, এই অস্থায়ী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদেরকে উচ্ছেদে বাধ্য করতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ অভিযোগ করেন, ওই এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর জন্য মিয়ানমার  সেনাবাহিনীর এটি নতুন এক কৌশলশুরু থেকেই নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের তাড়াতে গুলিবর্ষণসহ তাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার, নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার এবং মূল জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার আশা নিয়ে আমরা এখানে আছি, সেখানে আমাদের তাড়ানোর জন্য এটি  মিয়ানমারের নতুন ফাঁদএরফলে রোহিঙ্গারা আর এখানে থাকতে পারবে না’ পরবর্তীতে মিয়ানমার পরিকল্পিতভাবে ওই জায়গায় বাঁধ দেবে এমন আশংকাও প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তখন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবেরোহিঙ্গা শিবিরসহ পুরো তুমব্রু এলাকাটি পানিতে ডুবে যাবেযে কারণে এখন আবার রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে

তুমব্রু এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নুর আহমদ জানান, বর্ষাকালে এমনিতেই তুমব্রু এলাকায় পানি ওঠেকিন্তু খালে এখন বড় বড় পিলার বসানো হচ্ছেআমরা এখানে থাকতে পারবো কি না উদ্বিগ্ন

রোহিঙ্গা আবুল হাশিম বলেন, ‘আমরা এখানে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদেরকে এখান থেকে তাড়ানোর জন্য রাতের বেলায় ঢিল ছোঁড়া, গুলিবর্ষণ থেকে শুরু বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছেতাড়াতে না পেরে তারা নতুন এ কৌশল নিয়েছেঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘খালের উপর যেভাবে পিলার বসানো হচ্ছে, মনে হচ্ছে ব্রিজ তৈরী করছেখুব ঘন ঘন পাকা পিলার বসানোর কারণে পিলার এবং কাঁটাতারের ময়লা-আবর্জনা আটকে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবেতখন পানির উচ্চতা বেড়ে  বর্ষাকালে শুধু রোহিঙ্গা শিবির নয়, আশ-পাশের এলাকাগুলোও পানিতে ডুবে যাবে’ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল আহমেদ মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ে পাঠানো একটি চিঠিতে নো ম্যানস ল্যান্ডে নির্মাণ কাজ চলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমার সরকার নো ম্যানস ল্যান্ডে কোনো স্থাপনা তৈরি করতে পারে নাস্থাপনাটি তৈরি হলে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে এবং নো ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গারা দুর্ভোগের মুখে পড়বে

তবে কক্সবাজার সেক্টর বিজিবির অধিনায়ক কর্নেল আবদুল খালেক জানান, খালের উপর আগে কাঠের খুঁটি দিয়ে কাঁটা তারের বেড়া ছিলএখন পাকা পিলার বসিয়ে বেড়ার সংস্কার করা হচ্ছেএ ধরনের কাঁটাতারের বেড়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী অন্যান্য সীমান্ত রেখায়ও স্থাপন করেছে মিয়ানমারতবে ব্রিজ বা বাঁধ নির্মাণের মতো কোনো কাজ মিয়ানমার শুরু করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘটনার জোর প্রতিবাদ জানানো হবে


শেয়ার করুন

0 facebook: