04 February 2019

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় অজ্ঞাত রোগে ৬ জনের মৃত্যু


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের বহরইল গ্রামে হঠাৎ করে ‘অজ্ঞাত রোগে’ আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গত এক সপ্তাহে সেখানে একজন পল্লী চিকিৎসকসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ ছাড়া চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন আরও ছয়জন। গ্রামের লোকজন বলছেন, গ্রামে অজ্ঞাত কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গ্রামে আসলেই কোনো রোগ ছড়িয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির ৭ সদস্যের এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আবদুল্লাহ-হিল মারুফ। সোমবার দুপুরে তারা ওই গ্রামে পৌঁছেন।

এছাড়া এ দিন জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের, রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) চৌধুরী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বীও গ্রামটি পরিদর্শনে যান। এদিকে গ্রামে যাওয়ার আগে আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা চিকিৎসাধীন ছয়জনের সঙ্গে কথা বলেন।

দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে মৃত প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তারা গ্রামের অসুস্থ মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এরপরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে আসলে কী রোগে তাদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

এর আগে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বহরইল গ্রামে গত ২৬ জানুয়ারি নুরী বিবি (৬৫), জনাব আলী (৪৫) ও চার দিনের এক নবজতাক শিশু মারা যায়। এর একদিন পর ২৮ জানুয়ারি সমসের আলী (৬৫) এবং ২ ফেব্রুয়ারি রাহেলা বেগম (৪৮) নামের আরও এক গৃহবধূ মারা যান।

সর্বশেষ রোববার ইমাম আলী বাবু নামে এক পল্লী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। নিজ বাড়িতেই মারা যান তিনি। এ নিয়ে ওই গ্রামে গত এক সপ্তাহে ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এতে গ্রামের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

আর অসুস্থ হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন আরও ছয়জন। তারা হলেন- ওই গ্রামের জামেনুর রহমানের স্ত্রী শেফালি বিবি (৩৫), শফিকুল ইসলামের ছেলে জিয়াউল হক জিয়া (২৫), আব্দুল হকের ছেলে সানাউল্লাহ (৩২), মৃত আনেসুর রহমানের স্ত্রী সেমেজান বিবি (৫০), আবদুল গাফফারের স্ত্রী আপেজান বিবি (৪৮) ও দাউদ আলীর স্ত্রী বাদেনুর খাতুন (৩৫)।

তারা কোন রোগে আক্রান্ত বা যারা মারা গেছেন তারা কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তা এখনও নিশ্চিত নন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তবে আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আবদুল্লাহ-হিল মারুফ বলেছেন, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, যারা মারা গেছেন তারা অসুস্থ ছিলেন। তবে যারা নতুন করে অসুস্থ হচ্ছেন তারা আতঙ্কের কারণে। তাই সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গ্রামে প্রায় ৩০০ বাড়ি আছে। সব বাড়িতেই তারা যাবেন এবং এই পরামর্শ দেবেন। এর পাশাপাশি গ্রামে আসলেই কোনো রোগের সংক্রমণ ঘটেছে কি না তা তারা খতিয়ে দেখবেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রোজিয়ারা খাতুন বলেন, সুস্থ মানুষের হঠাৎ করে বুক জ্বালা, শরীরে ব্যথা ও খিঁচুনি শুরু হচ্ছে। এরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনেরই মৃত্যু হয়েছে একইভাবে। তবে সবাই আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন।

ইউএনও চৌধুরী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বী বলেন, একের পর এক মৃত্যুতে গ্রামের লোকজের আতঙ্কে তারাও উদ্বিগ্ন। বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দল গ্রাম ছেড়ে যাবে না।


শেয়ার করুন

0 facebook: