স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ আসন্ন রোজার মাসে তেল ও চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের দাম না বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সামনে রোজা। এ সময় তেল, ছোলা, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে, সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত সরবরাহ যেন থাকে, সে বিষয়টিও আপনাদের দেখতে হবে।’
বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন এবং ১৩টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ ৬৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকালে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আওতাধীন বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু, ২০টি নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ৫টি চলমান কাজের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এদিন দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর নবনির্মিত ভবনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ফসলি জমি নষ্ট না করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের বিকল্প জায়গার ব্যবস্থাও করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
তিনি বলেন, ‘আমরা ফসলি জমি নষ্ট করব না। মানুষের জন্য কাজ করি, সেই মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য নয়। এক্ষেত্রে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুই প্রথমে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তুলেছেন। এজন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাঙালিদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ আজ বাঙালিদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরী মীরসরাই, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন সোনারগাঁও, মৌলভী বাজার শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, সিটি ইকোনমিক জোন রূপগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার জনগণ, উপকারভোগী এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় মীরসরাই প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের তরুণ সমাজ দেশে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমি তাদের উদ্যোগের প্রশংসা করি। তার সরকারের উন্নয়ন একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য আমি শুধু রফতানির ওপর নির্ভর করতে পারি না, দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যেন বাড়ে এবং দেশে যেন আমাদের বাজার সৃষ্টি হয় সে পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি।
এ সময় আঞ্চলিক কানেকটিভি জোরদারে তার সরকারের বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) এবং বিসিআইএন-ইসি (বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার) পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পায়রায় নতুন সমুদ্রবন্দর তৈরিতে তার সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের কাজ হচ্ছে অবকাঠামোগত যে সুযোগগুলোর একান্ত প্রয়োজন সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া। এ সবের ফলে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে।
সারা দেশে একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে আমি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। আজকে আরও ১১টি করা হল এবং ১৩টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হল। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য সাহস করে যারা বাংলাদেশে এসেছেন তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করি এটা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে।’ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মর্যাদাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে আমাদের উন্নত-সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ, সেই লক্ষ্য আমরা স্থির করেছি। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করব। তখন বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। আমরা ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী যে ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করেছেন সেগুলো হল- মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল মোংলা, বাঘেরহাট, মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মেঘনা ইন্ডাস্টিয়াল ইকোনমিক জোন সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ, আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ, বে-অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুর সদর, গাজীপুর, আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ, সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রূপগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ, ইস্টওয়েস্ট স্পেশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল কেরানীগঞ্জ, ঢাকা, কর্ণফুলী ড্রাইডক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আনোয়ারা, চট্টগ্রাম এবং শীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, মৌলভীবাজার সদর মৌলভীবাজার।
উত্তরায় বিজিএমইএর নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর উত্তরায় তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেছেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটির উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের এ শিল্পটাকে ধরে রাখতে হবে। যেহেতু, বিপুল পরিমাণ নারী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করেছে এ খাত। গ্রামীণ জনপদে এর বিরাট প্রভাব রয়েছে, কেননা, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নেও এটি কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।’ পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে এবং গার্মেন্টেসের কিন্তু নতুন নতুন আইটেমও করা যায়। একেক দেশে একেক রকম চাহিদা। ডিজাইন এবং ফ্যাশন ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাশন ডিজাইনিং ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে। পোশাক খাত আরও সমৃদ্ধ হোক সেটাই প্রত্যাশা করি।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী এবং আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী পারভেজ গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে উত্তরার নতুন ভবনে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, প্রথম সহ-সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সহ-সভাপতি এমএ মান্নান কচি, সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হকসহ সংগঠনটির বিভিন্ন নেতা উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: