16 July 2019

ভারতে গরুর গোশত থাকার সন্দেহে মাদ্রাসায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের ফতেপুর জেলার একটি মাদ্রাসায় গরুর গোশত থাকার সন্দেহে কিছু উগ্রপন্থি পাথর নিক্ষেপ করাসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আজ (মঙ্গলবার) ওই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

ওই ঘটনার পরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট রমেশ বলেন, আজ সকালে বেহতা গ্রামে গরুর গোশত উদ্ধার হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরে কিছু অরাজকতা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে পাথর নিক্ষেপসহ আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় কোনও হতাহতের তথ্য নেই।

জেলা পুলিশ সুপার রমেশ বলেন, এ ব্যাপারে একটি মামলা রুজু করে পরিবেশ অশান্ত করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট গ্রামে শান্তি রয়েছে এবং সেখানে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য ওই ঘটনায় পুলিশের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন। গতকাল সোমবার মাদ্রাসার পিছন দিকের একটি জায়গায় গবাদি পশুর দেহাবশেষ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় এলাকার মানুষজন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) ফের একই জায়গায় গবাদিপশুর দেহাবশেষ মেলায় ক্ষুব্ধ জনতা মাদ্রাসায় ভাঙচুর চালিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলে দ্রুত পুলিশ পৌঁছে তাদেরকে হটিয়ে দেয়। পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ থাকায় জেলা প্রশাসক সঞ্জীব সিং এবং এসপি রমেশ ওই এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিসেবা দফতরের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী আজ (মঙ্গলবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ওই ঘটনা অত্যন্ত অন্যায়, গণতন্ত্র বিরোধী ও ভারতবিরোধী। এসব তারা (হিন্দুত্ববাদীরা) করবে। কিন্তু এসব করেও তারা টিকতে পারছে না। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির জয় আছে। এটা অধর্মের কাজ। ধর্মনিরপেক্ষতার কাজ নয়। এসব কাজকর্ম করে তারা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে চাচ্ছে। হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দাঙ্গা বাধাতে চাচ্ছে।’  

মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মুসলিম সমাজ টিকে আছে মাদ্রাসা শিক্ষার উপরেই। মৌলিকভাবে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আঘাত দিলে আগামীদিনে ধর্মীয় শিক্ষা লোপাট হয়ে যাবে। এজন্য তারা মাদ্রাসার বিরুদ্ধচারণ করতে চাচ্ছে। ভারতের সংবিধান মাদ্রাসাকে অধিকার দিয়েছে। আর্টিকেল ৩০, আর্টিকেল ২৫ বা ২৬। মৌলিক অধিকারের ভিত্তিতে ভারতের সংবিধান আছে। ওরা সংবিধান পড়ে দেখুক। কে গরুর গোশত খেলো না খেলো, এমনিই গরুর গোশত উত্তর প্রদেশে পাওয়া যায় না। কোনও মাদ্রাসায় তা খাবে এমন তাদের কী মাথাব্যথা করেছে? আসলে ওরা কোনও ইস্যু পাচ্ছে না। মানুষ আর নতুনভাবে কোনও ইস্যু গ্রহণ করছে না। তাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য এগুলো তারা করছে। এজন্য সতর্ক থাকতে হবে। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ, অপরাধমূলক কাজ। ওদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় সরকারে যারা বসে আছে তারা কী এসব দেখতে পান না? তাদের কী দায়িত্ব নেই?


শেয়ার করুন

0 facebook: