22 July 2019

৬ গুণ বেশি অর্থ নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তির রমরমা ব্যবসা


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তিতে অনিয়ম হচ্ছে ।শুধু অনিয়মই না এ যেন ভর্তির নামে ডাকাতি করছে সরকারি আলিয়ার শিক্ষকরা। ৬ গুণ বেশি ভর্তি ফি নিয়ে ভর্তির রমরমা ব্যবসা করছে ঢাকা আলিয়ার কর্তৃপক্ষ। মানছে না মাদ্রাসা বোর্ডের নিয়ম, মানছে না আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এর নিয়ম।নিজেদের মন মত করে ভর্তি ফি আদায় করছেন আলিয়া কর্তৃপক্ষ।

সরকারি আলিয়ায় কামিল /মাস্টার্সে ভর্তি ফি বাবদ ৬ গুণ বেশি ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভর্তি নিয়ন্ত্রণে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের তোয়াক্কা করছে না আলিয়ার কর্তৃপক্ষ।শিক্ষার্থীরা অসহায় হয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বেশি ভর্তি ফি দিয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে।

অতিরিক্ত ভর্তি ফির ব্যাপারে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার প্রভাষক নাসির উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না ।আমাদের প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলেন। প্রিন্সিপাল এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।

ছয় গুণ বেশি ভর্তি ফি আদায়ের ব্যাপারে সরকারি আলিয়ার অধ্যক্ষ আলমগীর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি এর কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে তার জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে, সে প্রয়োজনে আমরা অতিরিক্ত ফি নিচ্ছি।

বেসরকারির প্রতিষ্ঠানের চেয়েও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফি বেশি দিয়ে ভর্তি হচ্ছে একজন ছাত্র। তাহলে একজন ছাত্র সরকারিতে পড়ালেখা করে সরকারের কি সুবিধা ভোগ করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা ছাত্র নিজেই ভালো জানে সেটা তাকে জিজ্ঞেস করেন।

এ ব্যাপারে কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমরা সরকারি সুবিধা ভোগ করার জন্য ভর্তি হই। কিন্তু আমরা সেই সুবিধা ভোগ করতে পারছি না। দুর্নীতির কারণে বরং বেসরকারি চেয়েও সরকারিতে বেশি ফি দিয়ে পড়ালেখা করতে হচ্ছে।

সরকারের বরাদ্দ আসে না? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, যে বরাদ্দ আসে তা দিয়ে হয় না।অতিরিক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ওই টাকায় সম্পন্ন হয় না। তাই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত ফি গুলো কোন কোন খাতে নেওয়া হচ্ছে সেটি উল্লেখ করা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা আলিয়ার অধ্যক্ষ বলেন, কি কি খাতে নেওয়া হচ্ছে সেটি উল্লেখ করার সময় নেই।

অতিরিক্ত ফি কোন কোন খাতে নেওয়া হচ্ছে সেটির ঠিকভাবে উত্তর দিতে পারেননি তিনি ।আমতা আমতা করে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে সাংবাদিককে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করেন। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে কামিল/মাস্টার্সের একজন ছাত্র ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ্য মোট ৬৭৫ টাকা ভর্তি ফি দিয়ে ভর্তি হতে পারবে।

কিন্তু বাংলাদেশের কামিল/মাস্টার্স মাদ্রাসাগুলো ছাত্রদের থেকে এই টাকার বিপরীতে ঢাকা আলিয়া ৬ গুণ, তামিল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা ৫ গুণ, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদ্রাসা মোহাম্মদপুর ৭ গুণ, কুমিল্লা আলিয়া ৩ গুণ দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা ৫গুণসহ দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত ফি আদায় করছে।

এছাড়াও দাখিল/ এসএসসি, আলিম/ এইচএসসি ,ফাজিল/ বিএ তে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে।

এ ব্যাপারে এক অভিভাবকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ছেলেমেয়েকে মাদ্রাসায় পড়াই নৈতিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য। কিন্তু যারা নৈতিক শিক্ষা দিবে তারাই অনৈতিকভাবে ফি আদায় করছে। তাদের কাছ থেকে ছাত্র ছাত্রীরা কি শিখবে? আজকে সেটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরেকজন অভিভাবক বলেন, মাদ্রাসার হুজুররা যে এত বেশি দুর্নীতি করছে তা কি সরকারের চোখে পড়ে না। সরকার এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না কেন? জাতি আর কার থেকে নৈতিক শিক্ষার আশা করতে পারেন?

অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. আবু হানিফা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ভর্তি ফরম ফি ১০০, ভর্তি ফি ৩০০, রেজিস্ট্রেশন ফি ২০০, ক্রীড়া ফি ৫০, রোভার স্কাউট/ফি এন সি সি ফি ২৫ সহ মোট ৬৭৫ টাকা আর বিলম্বিত ভর্তির বাবদ আরও ২০০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে ভর্তি হতে হবে।

এর বাহিরে কোন প্রকার অতিরিক্ত ফি গ্রহণ করা যাবে না। যদি কোন প্রকার অতিরিক্ত ফি গ্রহণ করা হয়। তাহলে আমাদের কাছে কোন প্রকার অনিয়মের অভিযোগ আসেলে তার ব্যাপারে আমরা প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


শেয়ার করুন

0 facebook: