07 August 2019

কাবাঘরের গিলাফে ১২০ কেজি সোনা ও ১০০ কেজি রুপা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। সারা দুনিয়ার মুসলিমদের বর্তমান কিবলা হচ্ছেন মক্কা শরীফ নগরীতে অবস্থিত পবিত্র কাবাঘর। এই মহিমান্বিত ঘরকে কয়েকটি চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। প্রতিবছর ৯ জিলহজ্জ শরীফে হজ্জের সময় হাজিরা যখন আরাফাতের ময়দানে থাকেন, তখন মসজিদুল হারাম শরীফে মুসল্লির সংখ্যাও কম থাকে, ওই সময় কাবা শরীফের গায়ে কালো চাদর বা গিলাফ জড়িয়ে দেয়া হয়। নতুন গিলাফপরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়ে থাকে। ১৬০ জন কর্মী এই কাজে নিয়োজিত থাকেন। পুরোনো গিলাফ কেটে মুসলিম দেশের সরকারপ্রধান সহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের উপহার দেওয়া হয়।

আরবরা কাবাকে আবৃত করে রাখা চাদরটিকে বলে কিসওয়া। কালো রেশমি কাপড়ে তৈরি গিলাফটির গায়ে সোনার প্রলেপ দেয়া রুপালি তারের মাধ্যমে এমব্রয়ডারি করা হয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসুলাল্লাহ’, (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহু জাল্লে জালালুহু’, ‘সুবহানাল্লাহু ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিমইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান

খানায়ে কাবা শরীফের দরজার পর্দাটিকে বলা হয় বোরকা। এটাও কালো রেশম কাপড় দিয়ে তৈরি। এতে ইসলামি নকশা ও কোরআনের আয়াত শরীফ লেখা থাকে। এ লেখাগুলোও সোনা ও রুপার চিকন তার দিয়ে এমব্রয়ডারি করা হয়। অক্ষরগুলো সোনালি আভায় উদ্ভাসিত। যা দেখলে পর্যটক তার দৃষ্টি সরিয়ে ফেলার দুঃসাহস করতে পারে না।

প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন রেশম দিয়ে তৈরি করা হয় কাবার গিলাফ। রেশমকে রং দিয়ে করা হয় কালো। ১৪ মিটার দীর্ঘ ও ৯৫ সেন্টিমিটার প্রস্থ ৪৭ থান রেশমি কাপড় জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয় গিলাফ। যার মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গ মিটার।

চার টুকরো গিলাফ জোড়া লাগানো স্থানে সৌন্দর্যবর্ধন করে বৃত্তাকারে লেখা থাকে সুরা ইখলাস। রেশমি কাপড়ের নিচে দেওয়া হয় মোটা সাধারণ কাপড়। একটি গিলাফে ব্যবহৃত রেশমি কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম, স্বর্ণের ওজন ১২০ কিলোগ্রাম এবং রুপার ওজন ১০০ কিলোগ্রাম।

কাবাঘরের গিলাফ তৈরির কারখানা বাদশাহ আব্দুল আজিজ কমপ্লেক্স মক্কা নগরীর উম্মুল জুদ এলাকায় অবস্থিত। কিসওয়া তৈরির কারখানাটি ৬টি অংশে বিভক্ত যথাঃ বেল্ট, হস্তশিল্প, যান্ত্রিক, ছাপা, রং এবং অভ্যন্তরীণ পর্দা বিভাগ।

কাবা কিসওয়া তৈরিতে বর্তমানে ২ কোটি ২০ লাখ সৌদি রিয়াল বা ৫.৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় হয়। প্রতিবছর দীর্ঘ ৯ মাস ধরে গিলাফ তৈরির কাজে ২শ ৪০ জনের বেশি ক্যালিওগ্রাফার নিয়োজিত আছেন।

মতভেদে একটি ঐতিহাসিক সূত্রে বলা হয়েছে, হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম প্রথম পবিত্র কাবাঘরকে গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদন করেন। রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আদনান ইবনে আইদ এবং মদিনা শরীফে উনার হিজরতের ২২০ বছর আগে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদ পবিত্র কাবাঘর গিলাফের মাধ্যমে আচ্ছাদিত করেন। কাবা শরীফে সর্বপ্রথম রেশমের গিলাফ লাগান একজন আরব মহিলা, যিনি ছিলেন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর মা নুতাইলা বিনতে জানাব

তুব্বা আবু কবর-এর রীতি অনুযায়ী মক্কার স্থানীয় লোকজন সুন্দর কাপড় বা গিলাফ দিয়ে পবিত্র কাবাঘর আবৃত করতে থাকেন এবং তা নিয়মিত প্রথায় পরিণত হয়। রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইয়েমেনী কাপড়ের গিলাফ চড়ান।

এরপর আবু বকর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কিবাতীকাপড়ের গিলাফ চড়ান। বর্তমানে দামী কালো রং সিল্কের কাপড়ের তৈরি স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি মোটা গিলাফ দিয়ে কাবা শরীফ ঢাকা হয়।

বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ মক্কা-মদীনার দুই পবিত্র মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১৩৪৬ হিজরিতে কাবা শরীফের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ কারখানা স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন।

১৩৮২ হিজরিতে বাদশাহ ফয়সাল নতুন করে কারখানা তৈরি করার আদেশ দেন, যাতে উত্তম ও মজবুত গিলাফ প্রস্তুত করা সম্ভব হয় এবং কাবা যেমন শানদার ঘর, তার শানের উপযোগী হয়। ১৩৯৭ হিজরিতে মক্কায় নতুন বিল্ডিংয়ের উদ্বোধন করে তাতে গিলাফ তৈরির আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজিত করা হয়।


শেয়ার করুন

0 facebook: