হযরত
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল কাদের জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৪৭০ হিজরিতে ইরাকের জিলান
নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। উনার পিতা সাইয়্যিদ আবু সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহিও একজন বিখ্যাত
বুজুর্গ ছিলেন। মাতা উম্মুল খায়ের ফাতেমা রহমতুল্লাহি আলাইহা একজন বিদুষী রমণী ছিলেন।
ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় যে তিনি মায়ের গর্ভে থেকেই পবিত্র কুরআন শরীফের আঠারো পারা
মুখস্থ করে জন্মনেন, আর অল্প বয়সেই সমস্ত কুরআন মুখস্থ করতে সক্ষম হন। পিতার নিকট আহলুস
সুন্নাহর আদর্শে অনুপ্রাণিত হন।
পিতার
অফাৎ এর পর ১৮ বছর বয়সে তত্কালীন মুসলিম দর্শনের বিদ্যাপীঠ মাদরাসায়ে নিজামিয়াতে ভর্তি
হয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। আর ২৪ হতে ৯১ বছর অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত অবিরাম
ইসলাম প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ক্বদরিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি
ধর্মীয় সভা-সমাবেশে মানুষের আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নতির জন্য উপদেশ দান করেছেন। অনেক
মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে গিয়েছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য: গুনিয়াতুত ত্বলেবীন, সিররুল
আসরার, আল
ফাতহুর রব্বানী, ফাতহুল
গুয়ুব এবং আল-কাসিদা নামে একটি কাব্যগ্রন্থ। এই সমস্ত গ্রন্থ পৃথিবীর ২৩টি ভাষায় অনূদিত
হয়েছে। ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহমে আমরা এই মহান অলিআল্লাহ উনার জন্য আল্লাহর দরবারে ইবাদত
বন্দেগীতে দাখিল হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি হাসিল করি।
হযরত
গাউসুল আ'যম
বড়পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ্ পাক উনার একজন মাহবুব ও ওলী হয়েই
দুনিয়ায় আগমন করেছিলেন,
তারপরও দুনিয়ার জমিন ত্যাগ করার আগে উনার চিন্তা পেরেশানি ছিল তিনি
কি একজন পরিপূর্ন মুসলমান হতে পেরেছেন? ঠিক যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন।
এই ঘটনা থেকে মহান আল্লাহ পাকের সাথে উনার নিসবত, কুরবত ও মুহব্বত এর বহিঃপ্রকাশই ঘটেছে। যা
আমাদের জন্য এক পরম নছিহতমূলক ঘটনা।
উনার
এই ভাবনা অন্তরসহ অভ্যন্তরের সমস্ত কিছু দুমড়ে মুচড়ে গলিত রক্তে পরিনত করে দিল। শরীর
হতে নির্গত সেই রক্ত মিশ্রিত তরল দেখে খ্রীষ্টান চিকিৎসক বিমোহিত। কারন তা ছিল অপূর্ব
সুঘ্রানময় আর তাতে হচ্ছিল মহান রব আল্লাহ্ তায়ালা উনার যিকির। চিকিৎসকের চিকিৎসা জীবনে
যা ছিল বেনজির ও অভুতপূর্ব ঘটনা। চিকিৎসক বুঝে গেলেন এটা কোনও ব্যাধি নয় বরং এটা মহান
আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার মুহব্বতের এক নিদর্শন, মহান আল্লাহ্ পাক উনার নির্দেশের প্রতি
গ্রাহ্যতার বিরল নিদর্শন। যে নিদর্শন এলাকার সমস্ত খ্রিষ্টানকে পবিত্র দ্বীন ইসলামের
ছায়াতলে নিয়ে এলো। সুবহানাল্লাহ!
উনার
অফাৎ এর পূর্বে তিনি সমস্ত প্রস্তুতি শেষে শায়িত হলেন শুভ্র বিছানায়। মহান আল্লাহ পাক
উনার তরফ থেকে আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে লাগলো, “হে প্রশান্ত নফস! আপনি আপনার পালনকর্তার
দিকে ফিরে আসুন; সন্তুষ্ট
ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর যারা পবিত্র নেককার বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান এবং
সুসজ্জিত নিয়ামতপূর্ন জান্নাতে প্রবেশ করুন। [৮৯: ২৭~৩০]” ধীরে
ধীরে চক্ষুদ্বয় বুজে আসলো,
মুখে স্পষ্ট উচ্চারিত হতে লাগলো- “তাআজ্জাজা, তাআজ্জাজা”... অর্থাৎ, আমি বিজয়ী, আমি বিজয়ী… উচ্চারিত
হতে হতে জিহ্বা তালুর সাথে লেগে গেলো। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি!
মাহবুবে
সুব্হানী, কুতুবে
রব্বানী, গাউসুল
আ’যম, আওলাদে
রসূল, বড়পীর
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৫৬১ হিজরী সনের রবীউছ ছানী
মাসের ১১ তারিখ সোমবার রাতে দুনিয়ার জমিন থেকে মাশুকে মাওলা উনার দিদারে প্রত্যাবর্তন
করেন। যা সারা বিশ্বে “ফাতেহায়ে
ইয়াযদাহম” নামে
মশ্হুর।
মহান
আল্লাহ্ পাক তিনি আমাদের সবাইকে গাউসুল আ’যম হযরত বড়পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার সম্মানার্থে একই চিন্তায় মশগুল হওয়ার যোগ্যতা দান করুন। আমীন!
রাজিব
হাসান চৌধুরীঃ সাংবাদিক,
ইসলামিক লেখক ও প্রকাশক স্বদেশবার্তা.কম।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ধর্ম ও জীবন
0 facebook: