স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ কুষ্টিয়া
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ সমাবর্তনে অংশ নেন আচার্য রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ আবদুল হামিদ।
সেখানে নির্ধারিত বক্তৃতার পাশাপাশি কুষ্টিয়া নিয়ে স্বভাবসুলভ হাস্য রসিকতায় স্মৃতিচারণায়
আসর মাতিয়ে রাখেন তিনি। রোববার
দুপুরে ক্যাম্পাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যের বাইরে প্রায় দশ মিনিট কথা বলেন
রাষ্ট্রপতি।
শুরুতেই
তিনি বলেন, ‘সম্মানিত
সুধিবৃন্দ ও আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রীগণ, আসলে আজকে ঠান্ডাটা একটু বেশি। ঠাণ্ডার জন্য
গলাটাও একটু বসে গেছে। ঠাণ্ডার প্রকোপে একবার ভেবেছিলঅম, কুষ্টিয়া
আর যাওয়া হবে না।’
‘এরমধ্যে আরেক বাধা পড়লো, আমি এই
সম্মেলন রেখেছিলাম ৭ তারিখ। পাশাপাশি আজকে জাতীয় সংসদে অধিবেশন ডেকেছে। আজকে বিকাল
চারটায়। সংবিধানের নিয়ম হলো,
বছরের প্রথম যে অধিবেশন ডাকা হয়, সেখানে রাষ্ট্রপতি অধিবেশনে যোগদান করবে
এবং তিনি সেখানে ভাষণ দান করবে। এটি ভায়োলেট করার কোনো সুযোগ নাই। পার্লামেন্টের যে
বক্তৃতা হয়, তা
তো আর ১০-১৫ মিনিটে হবে না,
সেটা প্রায় সোয়া থেকে দেড় ঘণ্টার বক্তৃতা। গলা বসে গেলে দেড়ঘণ্টার
বক্তৃতা- ইটস ভেরি টাফ। তাও এই বয়সে।’
রাষ্ট্রপতি
বলেন, ‘কুষ্টিয়ার
প্রতি আমার একটা অন্য আকর্ষণও ছিল,
যার জন্য আমাকে আসতে হয়েছে। সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে, থাকছে। আমারও এই কুষ্টিয়ায় চার মাসের কয়েক
দিন বেশি থাকার সুযোগ এবং সৌভাগ্য হয়েছিল।’
কুষ্টিয়ার
থাকার সময়কার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘১৯৭৬ সাল। আমি ময়মনসিংহে সাত মাস জেল খাটার
পরে আমাকে ট্রান্সফার করল এই কুষ্টিয়াতে। কুষ্টিয়াতে আসলাম। এখানে আরেকটা মজার এবং
তরতাজা খবর আছে। জাফর সাবতো (সমাবর্তন বক্তৃতা করেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল) সুন্দর করে
বলতে পারে, আমি
তো এত সুন্দর কইরা বলতে পারি না। কারণ উনারা তো মাস্টার মানুষ। লেখাপড়া ভালো জানে।
আর আমি ছাত্র হিসাবে ছিলাম একেবারে রামছাত্র। এত সাজিয়ে গুছিয়ে বলার দক্ষতা আমার নাই।’
রাষ্ট্রপতি
বলেন, ‘যাই
হোক, ১৯৭৬
সালের ১৩ জানুয়ারি আমার একটা কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। অবশ্য এর পূর্বেও তিনটা
পুত্রসন্তান ছিল। কন্যাসন্তান জন্ম নেবার দুই মাস ৫–৭ দিন পরেই আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তার
করার পর ময়মনসিংহ থেকে কুষ্টিয়া আসলাম। আমার স্ত্রী সাধারণত কোনো সমাবর্তনে যান না।
এবারই তিনি প্রথম এসেছেন (কুষ্টিয়া সমাবর্তনে)।’
তিনি
আরও বলেন, ‘অনেক
সতর্কতার সঙ্গে জেলখানা থেকে চিঠি লিখতাম। জেলখানা থেকে চিঠি লিখলে সেন্সর করে দেয়া
হয়। আসলে কেটেকুটে সেন্সর করে দিত। কন্যার নাম রাখার জন্য চিঠি লিখলো (স্ত্রী)। অনেক
চিন্তাভাবনা করে বললাম কী নাম রাখবো, কারও সঙ্গে পরামর্শ করারও সুযোগ নাই। শেষ
পর্যন্ত চিন্তা করলাম, এই
কুষ্টিয়া ব্রিটিশ সময়ে ছিল নদীয়া জেলার। মেয়ের নাম নদীয়া করে দাও। সুতরাং যে জেলাতে
বসে মেয়ের নাম রেখেছি, সেই
ইন্টারেস্টে মেয়েও এখানে এসে পড়েছে।’
সমাবর্তনে
এসে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না থাকার বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করেন তিনি।
তিনি
বলেন, ‘আমি
যে ছেলেমেয়েদেরকে ডিগ্রি দেই,
এদের চেহারাই আমি দেখি না। দেখার সুযোগই নাই। তাদের মধ্যে গিয়ে
তাদের সঙ্গে মিশবো, সেই
সুযোগও আমার নেই। এরজন্য সবসময় মনের দুঃখই থেকে যায়।’
‘প্রথম যখন রাষ্ট্রপতি হই, তখন ভেবেছিলাম, রাষ্ট্রতি
হওয়া মানে খুবই আনন্দঘন ব্যাপার। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একটা হৈ-হুল্লোড় হবে, দেখা-সাক্ষাৎ
হবে, কথাবার্তা
হবে। কিন্তু পরে দেখলাম,
এই সুযোগ থেকে আমাকে সম্পূর্ণভঅবে বঞ্চিত করা হয়। ছেলেমেয়েদেরকে
বলছি, তোমাদেরকে
দেখার ইচ্ছা যে আমারা নাই,
তা না। খুবই প্রবলভাবে তোমাদেরকে দেখতে চাই।’
সমাবর্তন
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, সমাবর্তন
বক্তৃতা দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: