09 January 2018

রিয়াজ-তিনার প্রেম কাহিনী থেকে, সাকিব-অপুর কি কিছুই শেখার নেই?

স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ হৃদয়ের কথাছবির একটি গানে প্রথমবার আমার সঙ্গে তিনা পারফর্ম করেছিলনাচের একটা দৃশ্য ছিল এমন, তিনা ঘুরে বসেছে এবং তার হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে; আমি তাকে হাত ধরে টেনে তুলিটেনে তোলার সময় আমি তার দিকে তাকিয়ে আছিবলে রাখা ভালো, ওটা ছিল লাইভ পারফর্মেন্সঅনেক শ্রোতা দেখছিলেনতখন তিনার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলামওই সময়ে তিনাকে দেখে কেন জানি আমার মনের ভায়োলিন বেজে উঠেছিল

এরপর আমরা পারফরমেন্সটা শেষ করিপরে বাসায় ফিরে মনে মনে তিনাকে খুঁজছিলামযারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, তাদের আমি বলি- কী ব্যাপার? যে মেয়েটা আমার সাথে নাচল, সে তো পরে আমাকে আর কিছুই বলল নাপরে তিনা আমাকে ফোন করে বলেছিল, ভাইয়া কেমন হয়েছে আমাদের পারফর্মেন্স? আমি তখন বলি, খুব ভালো হয়েছেআমি তখন ইচ্ছে করে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেই

এরপর একটা কাজের জন্য তিনা আমাকে ফোন করে একদিনআমি তাকে বলি, কাজটা করো নানা করাই তোমার জন্য ভালো হবেএভাবে দু-দিন, একদিন করতে করতে তিনার সঙ্গে আমার পরিচয় মজবুত হতে থাকেতিনার সঙ্গে প্রচুর ফোনে কথা বলতামসারাদিন শুটিং শেষে রাতে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে ফোনে কথা বলতাম তিনার সঙ্গেওর নিজস্ব ফোন ছিলনা তখনওদের বাসার ল্যান্ডফোনে কথা হতোরাত ১২ টায় ফোনে কথা বলা শুরু করতাম কখন যে রাত গড়িয়ে আযান দিত, টেরই পেতাম না। সারাদিন শুটিংয়ের পর তিনার সঙ্গে কথা বলার সময় এত এনার্জি কোথা থেকে আসত আমি নিজেই বুঝতাম নাআযান যখন দিত, তখন ফোন রেখে দিতে চাইতামতখন একটা মজার ঘটনা ঘটতকে ফোন আগে রেখে দেবে এটা নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি লাগতোআমি নাকি তিনা, কে ফোন রাখবে এটা ঠিক করতেই আরো এক ঘণ্টা চলে যেতমাঝে মধ্যে আমি আগে ফোন করতামতিনার মা ফোন ধরতোআমি বলতাম, আন্টি তিনার সঙ্গে কাজের ব্যাপারে কথা ছিলতখন ওর মা তাকে ডেকে দিততখনও আমরা কেউ কাউকে লাভ ইউকথাটা কিন্তু বলিনি
 

একবার একটি শোতে অংশ নিতে তিনা চীনে যাচ্ছিলবেশ লম্বা ট্যুর ছিল, ২০-২২ দিনের ট্যুরএই ট্যুরে যেতে আমি তাকে সায় দিলাম বটে, কিন্তু ওই সময়টায় আবার আমি ভাবলাম, তিনা চীনে যাচ্ছে; ওর সাথে কথা হবে না ২০ দিন! এটা ভাবতেই আমি ওকে কেন জানি মিসকরতে শুরু করলামসত্যি কথা বলতে যেটা এর আগে কাউকে করিনিওই সময় আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করিতিনা তখন জানায়, সে এয়ারপোর্টেকিছুক্ষণের মধ্যেই চীনে উড়াল দেবেওই সময়টা আমি তাকে বলে ফেলি, তিনা আমি তোমাকে খুব মিস করছিআমি মনে হয় তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, অ্যান্ড আই লাভ ইউ

পরে তিনার কাছ থেকে শুনেছি, এটা শুনে নাকি সে এয়ারপোর্টে হা করে দাঁড়িয়েছিলএকেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছিল! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি তাকে ভালোবাসি এটা বলার পরে সে হ্যাঁ, না কিছুই বলেনিচীন থেকে ফিরে সে আমাকে হ্যাঁ বলেছিলএরমধ্যে ২০ দিন তিনার সঙ্গে কথা হয়নিআমি তখন খুব চিন্তায় থাকতামতিনা ওখানে ভাল আছে কিনা, কিভাবে ঘুরছে, কি খাচ্ছেএসব কথা সবসময় মনে পড়তোএরপর তিনা ঢাকায় ফিরে এয়ারপোর্টে নেমে ওর বাবাকে ফোন করার আগেই আমাকে ফোন করেছিলওই সময়টা তিনার খুব ঠাণ্ডা, জ্বর ছিল

দেশে ফিরার পরে তিনার সঙ্গে ওইদিন বিকেলে দেখা করিওইদিন আমার শুটিং ছিলশরীর খারাপের ছুতো দেখিয়ে শুটিং ক্যানসেল করি (হাহাহা…)তিনা আমার জন্য চীন থেকে একটা গোল্ডেন ব্যাংক নিয়ে এসেছেওটাই ছিল তিনার থেকে পাওয়া আমার প্রথম উপহারআমার হাতে উপহারটি দিয়ে তিনা বলেছিল, এটা আমার ব্যাংক রাজকুমারের জন্য উপহারসেদিন তিশা লাভ ইউ টু বলেছিলএরপর অনেক কিছু ম্যানেজ করে তিনার সঙ্গে দেখা করতামতিনাকে দেখার জন্য ধানমন্ডিতে অফিস নেই

ওর বাসার বিপরীত পাশে অফিস নেয়া হয়েছিলজানালা দিয়ে তিনার বাসা দেখা যেত না বলে আমি বাথরুমে উঁকি দিয়ে ওকে দেখতামফোন করে বলতাম তুমি বারান্দায় আসোএছাড়া বাইরে দেখা করা খুব টাফ ছিলকারণ মানুষ দেখলে ভিড় করতসিনেমার গল্পেও এমনটা কম দেখা যায়এরপর তিনার বাসায় বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠাইপ্রথমেই তারা নাখোশকোনোভাবেই আমার সঙ্গে তিনাকে বিয়ে দেবেনাএই শর্ত ওই শর্ত জুড়ে দিচ্ছিলতখন মনে হয়েছিল গুলি মারি প্রেমের, হাহাহাএরপর পরিবার অমত বলেই ছয় মাস আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না

ছয় মাস পরে তিনা একদিন ফোন করে আমার সাথে দেখা করতে চাইলআমি ঢাকায় ছিলাম নাউড়ে চলে আসিতারপর আবার আমাদের প্রেম জোড়া লাগেপ্রায় দেড় বছর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০০৭ সালে ১৮ ডিসেম্বর আমরা বিয়ে করিবিয়ের পর তিনার প্রতি আমার ভালোবাসাটা আরো বেড়ে গেছেএটা কেন হয়েছে আমার জানা নেইআমরা দুজনেই যখন একসঙ্গে থাকি, আমরা দুজনেই সময়টাকে এনজয় করি


মাঝেমধ্যে ঝগড়া লাগলে আমরা ভাববাচ্যে কথা বলিযেমন, কারো কিছু লাগলে বলুক, বাসায় ফেরার সময় নিয়ে আসবোকিংবা তিনা আমাকে বলেন, কারো খিদে লাগলে খেয়ে নিক! আমাদের খুব সিলি বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়কিন্তু ২৪ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হয়নাযার দোষ বেশি থাকে, সে আগে এসে সরি বলেতখন আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যায়


শেয়ার করুন

0 facebook: