আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ নিজেদের দ্বন্দ ভুলে আগামী মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া শীতকালীন অলিম্পিকে একসঙ্গে
এক পতাকার নিচে শামিল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া।
উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া যৌথভাবে তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইভেন্ট আইস হকি বা বরফের ওপরে হকি খেলার ইভেন্টে অংশ নেবে। আগামী ৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অলিম্পিকের এই আসর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অনুষ্ঠিত হবে।
অলিম্পিকে অংশ
নিতে কয়েকশ লোকের একটি প্রতিনিধিদল উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে যাবে। দলে থাকবেন ২৩০ জন চিয়ারলিডার, ১৪০ জন অর্কেস্ট্রা বাদক ও ৩০ জন তায়কোয়ান্দো অ্যাথলেট। দলের সদস্যরা কোরীয় সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি
পেয়েছেন। গত দুই বছরের বেশি সময় পর এই
প্রথম আন্তসীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে এ
সিদ্ধান্তের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য কালক্ষেপণ
করছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। যদিও উত্তর ও দক্ষিণের সহযোগিতামূলক এই অভিনব সম্পর্ককে
স্বাগত জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাঙ কিইয়ুঙ-ওয়াহ। তিনি বলেছেন, ‘সব মিলিয়ে এটি একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতা। আমি মনে করি, এই আয়োজনের
প্রতিটি বিষয়ই অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে আমাদের সম্পন্ন করতে হবে।’
ক্যাঙ কিইয়ুঙ-ওয়াহ
আরো বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, সবকিছু আমরা চমৎকারভাবে সামলে নেব। এটি খেলার জন্য ইতিবাচক হবে, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য ইতিবাচক হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও এটি
ইতিবাচক বার্তা দেবে।’
দুই বছরের
মধ্যে দুই কোরিয়ার প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা
উত্তর ও দক্ষিণ
কোরিয়া গত দুই বছরেরও বেশি সময় পর গতকাল মঙ্গলবার এই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক
আলোচনা শুরু করেছে। পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু কর্মসূচি
প্রশ্নে মাসের পর মাস ধরে উত্তেজনা চলার পর আসন্ন শীতকালীন অলিম্পিক গেমস উপলক্ষে
তারা এ আলোচনায় বসে ও চলতি বছরের শীতকালীন অলিম্পিকে দল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি
দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট
জানায়, সামরিক আলোচনায় সম্মত হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। সীমান্ত এলাকায় গতকাল অনুষ্ঠিত আলোচনার পর এক যৌথ
বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দুই বছরেরও বেশি সময় পর গতকাল আলোচনায় বসেন দুই কোরিয়ার কর্মকর্তারা। আলোচনা শেষে সামরিক পর্যায়ে সংলাপের ঘোষণা ছাড়াও
আগামী মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে খেলোয়াড় পাঠানোর
সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। খেলোয়াড় দলটির সাথে থাকবে সরকারের উত্তর পর্যায়ের একটি
প্রতিনিধি দল, সাংবাদিক ও এক দল সমর্থক।
তবে কূটনৈতিক
পরিস্থিতির অভাবনীয় এই উন্নতির পরও গতকালের আলোচনায় অংশ নেয়া উত্তর কোরীয়
প্রতিনিধি দলের প্রধান পারমাণবিক অস্ত্র মুক্তকরণের বিষয়টি উত্থাপনের জন্য দক্ষিণ
কোরিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি বিবৃতিতে জানা গেছে বিষয়টি। দীর্ঘ অচলাবস্থা ও উত্তেজনার পর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং
উনের সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক মতের পরিণতিই গতকালের সংলাপ। পিয়ংইয়ংয়ের একের পর এক পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার
কারণে দুই কোরিয়ার মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল।
মঙ্গলবার ‘শান্তিপল্লী’ হিসেবে খ্যাত
পানমুনজামে দুই কোরিয়ার উচ্চপর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচংয়ে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় গেমসে উত্তর
কোরিয়া প্রতিনিধিদল পাঠাতে পারে বলে নতুন বছরের ভাষণে দেশটির নেতা কিম জং-উন ইঙ্গিত দেয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র
যৌথমহড়া স্থগিত করার পর পানমুনজামে এ আলোচনা শুরু করা হলো। পানমুনজাম হচ্ছে এ উপদ্বীপকে বিভক্ত করা ডিমিলিটারাইজড জোন (ডিএমজেড)।
বহুল
প্রত্যাশিত এ আলোচনার জন্য সিউলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল গাড়িবহরে করে
পানমুনজামে পৌঁছান। এ সময় শুভাকাক্সক্ষী গ্রুপের
সদস্যরা ডিএমজেড অভিমুখী একটি ফাঁড়িতে ব্যানার উত্তোলন করে তাদের অভিনন্দন জানায়। প্রতিনিধিদলের নেতা একত্রীকরণ বিষয়ক মন্ত্রী চো মিউং-গিউন
সিউল ত্যাগের আগে বলেন, আলোচনায় উভয়পক্ষ পিয়ংচং গেমসে
উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়টির ওপর জোর দেবে। এ ছাড়াও আলোচ্যসূচিতে দুই কোরিয়ার মধ্যকার বিরূপ সম্পর্কের
বরফ গলানোর উপায় খুঁজে বের করার বিষয় অন্তভুক্ত থাকবে।
উত্তর কোরিয়ার
সাথে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অলিম্পিকে দুই কোরিয়ার মধ্যে পারিবারিক
পুনর্মিলনের প্রস্তাব দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ১৯৫০-৫৩ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধের সময় অনেক পরিবারের
সদস্য পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর এটি দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘাতের অন্যতম প্রধান আবেগজনিত
ইস্যু। দক্ষিণ কোরিয়ার উপ-একত্রীকরণমন্ত্রী
চাং হায়ে সাং সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া নতুন
চান্দ্রবর্ষে পারিবারিক পুনর্মিলন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে। সময়টি পিয়েওঙ্গচাং গেমসের মাঝামাঝিতে পড়ে।
২০১৫ সালের
ডিসেম্বরে সর্বশেষ দুই কোরিয়ার মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পিয়ংইয়ংয়ের ছোড়া রকেট ও পারমাণবিক পরীক্ষার প্রতিক্রিয়ায়
সিউল কেয়াসং শিল্প এলাকার একটি যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্প বাতিল করার পর দুই কোরিয়ার
সম্পর্কে অবনতি ঘটে। এর পরপরই উত্তর কোরিয়া
দক্ষিণের সাথে টেলিফোনসহ সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
দুই কোরিয়ার
আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কায় সাংবাদিকদের
সাথে আলাপকালে বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে এমন
উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হতে দেখে চীন সন্তুষ্ট। তিনি আরো বলেন, সম্পর্ক
উন্নয়নের জন্য দুই পক্ষের নেয়া ইতিবাচক পদক্ষেপকে চীন স্বাগত জানায় ও সমর্থন করে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: