আন্তর্জাতিক
ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পক্ষ থেকে উত্তর সিরিয়ায়
তুরস্কের করা অভিযানের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে, তবে দেশ তিনটি তাদের ন্যাটো
মিত্রকে অভিযান চালানো থেকে সরে আসতে আহ্বান করেনি। বরং নরম স্বরে তারা তুরস্ককে
আহ্বান জানিয়েছে, যথাসম্ভব হতাহতের ঘটনা এড়িয়ে চলতে। এর অর্থ হচ্ছে
আঙ্কারা সশস্ত্র কুর্দি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রাখতে পারবে। উত্তরাঞ্চলীয়
আফরিন প্রদেশে চলছে তুরস্কের এই সামরিক অভিযান।
পশ্চিমাদের জন্য
সমস্যা হচ্ছে, সিরিয়ায় রাশিয়ার উদ্যোগে চলমান শান্তিপ্রক্রিয়ার
জবাবে পাল্টা অবস্থান নিতে বা ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে একমাত্র আঙ্কারা। তাই
আঙ্কারার কূটনৈতিক সমর্থন হারাতে চাইবে না তারা। বিশেষ করে সিরিয়া সঙ্কট যখন একটি
সমাপ্তির দিকে যাচ্ছে এমন সময় তো নয়ই। সিরিয়ার কুর্দিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের এই
আগাম অভিযান হয়তো সিরিয়া ও রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তি করতে রজব তাইয়েব এরদোগানকে
আগ্রহী করে তুলতে পারে। আর সেটিই হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বিপর্যয়, কেননা
মাত্র এক সপ্তাহ আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সিরিয়ায় একটি রাজনৈতিক
সমাধানের অঙ্গীকার করেছেন। টিলারসনের অঙ্গীকারকৃত সেই সমাধানের মধ্যে ছিল
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে অপসারণ ও শিয়া নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়াদের নিবৃত করা।
তবে টিলারসনের
সেই বক্তব্য খুব বেশি প্রশংসিত হয়নি ইউরোপে। এর আগে সিরিয়া বিষয়ে ট্রাম্পের নীতি
ছিল আইএসকে ধ্বংস করা এবং দেশটির পুনর্গঠন বিষয়ে আলোচনা করা। তবে টিলারসনের
বক্তব্য কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছে। কারণ বিষয়টি দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত হলেও এ
বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্য ভূমিকা কী হবে ও বাশারকে নিবৃত করতে মস্কোকে
পশ্চিমারা চাপ দেবে কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই ছিল না।
পশ্চিমা
কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, সিরিয়া ইস্যুতে তাদের কিছু দাবির কথা। সেগুলো হলো
পুনর্গঠন বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বাতিল করার হুমকি, অনির্দিষ্টকাল
পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার মার্কিন সেনা দেশটিতে মোতায়েন রাখা। এ ছাড়া আছে সিরিয়ার
অভ্যন্তরে কুর্দিদের একটি সীমান্ত বাহিনী গড়ার বিভ্রান্তিকর অঙ্গীকার। ব্রিটিশ
মন্ত্রীরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন যে, বাশারকে ক্ষমতায়
রেখে রাশিয়ার সূচিত শান্তিপ্রক্রিয়া শুধু নৈতিকভাবেই নিন্দনীয় নয়, এটি
অস্থিতিশীলও।
তবে সিরিয়ায়
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অবিশ্বাস্যভাবেই কমে যাবে যদি তারা তুরস্কের সমর্থন না পায়।
তুরস্ক যদি মস্কোর সাথে মিত্রতা করে, তাহলে রাশিয়া নিশ্চিতভাবেই তাদের
রাজনৈতিক সমাধান বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে পারবে। আগামী ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি
রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর উপকূলীয় শহর সোচিতে তুরস্ক ও ইরানের সহযোগিতায় সিরিয়ান ন্যাশনাল
ডায়লগ কংগ্রেস নামে যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে সেখানে তারা বিষয়টি নিয়ে
কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। পশ্চিমারা আশঙ্কা করছেন, ভ্লাদিমির পুতিন
সোচির এই আলোচনাকে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনার বিকল্প এবং মধ্যপ্রাচ্যে
রাশিয়ার পদক্ষেপ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছেন। এর আরেকটি অর্থ হতে পারে বাশারকে
ক্ষমতায় রেখে ও সিরিয়ার সংবিধানে ছোটখাটো পরিবর্তন এনে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করা।
জাতিসঙ্ঘের
শান্তিপ্রক্রিয়াটির গুরুত্ব বজায় রাখতে সংস্থাটির সিরিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত স্টাফান
ডি মিস্তুরা ওই সম্মেলনের আগে আগামী ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সোচিতে উভয় পক্ষের সাথে
আলোচনা করবেন। গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তুরস্ক ও রাশিয়া
হয়তো একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সিরিয়ায় এই অভিযানের আগে তুর্কি
সেনাকর্মকর্তারা রাশিয়া সফর করেছেন এ জন্য, যাতে সেখানে
মোতায়েনকৃত রুশ বিমানবাহিনী তুর্কি বাহিনীকে আক্রমণ না করে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: