আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সাম্প্রতিক ইরান বিরোধী বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রোববার রাতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করাই হচ্ছে তার দেশের মূলনীতি।
তিনি বাদশাহ আব্দুল্লাহর বক্তব্যকে বাস্তবতার পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে জর্ডানের বাদশাহ তার বিপরীত বক্তব্য দিয়েছেন। বাদশাহ আব্দুল্লাহ সম্প্রতি সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কয়েকটি আরব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তার ভাষায় হস্তক্ষেপের জন্য ইরানকে দায়ী করেন।
এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কাসেমি বলেন, এ ধরনের অন্যায় বক্তব্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ইরান যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাকে উপেক্ষা করা যাবে না। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে এ ধরনের বাস্তবতা-বিবর্জিত বক্তব্য কেবল আগ্রাসী ও দখলদার শক্তিগুলোকেই খুশি করবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক উন্নতি হোক এসব শক্তি তা চায় না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরান বিরোধী বৈঠক ব্যর্থ আমেরিকার চাপের মুখে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত ইরান বিরোধী বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে। ইরানে সাম্প্রতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রতি সমর্থন ঘোষণার লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন ওই বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পরিষদের বেশিরভাগ সদস্যদেশ মার্কিন উদ্যোগের বিরোধিতা করে।
গত ৫ জানুয়ারি রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শুরুতে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি বলেন, ইরানে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের প্রতি ওয়াশিংটনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু ফরাসি রাষ্ট্রদূত ফ্রাঁসোয়া দেলাত্রে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে বলেন, ইরানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়নি।
বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত ইরানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা নিরাপত্তা পরিষদের উচিত হবে না। এ ছাড়া, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘আজকের বৈঠকে যে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে তার সঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই। নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা দুর্বল হয়ে যায় এমন কোনো কাজ করা আমেরিকার উচিত নয়।’
বলিভিয়া, হল্যান্ড, কুয়েত ও কাজাখস্তানসহ আরো কয়েকটি দেশ ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে। শেষ পর্যন্ত বৈঠক থেকে ইরানের ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব পাস করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদ জানিয়ে ইরানের কয়েকটি শহরে কিছু মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় বিদেশি মদদপুষ্ট কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সহিংস রূপ দেয়ার চেষ্টা করে। আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইল ও সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলো এই বিশৃঙ্খলার খবর ফলাও করে প্রচার করে এবং এসব দেশের কর্মকর্তারা ইরানে গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন ঘোষণা করেন।
কিন্তু দ্রুতই ইরানের রাজপথের চেহারা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। গোলযোগ সৃষ্টিকারী মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের নিন্দা জানিয়ে সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর রাস্তায় শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এসব শোভাযাত্রা থেকে সরকারের প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও তাদের বিদেশি মদতদাতাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: