স্বদেশবার্তা ডেস্ক: কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আলীপুর গ্রামের গৃহবধূ সুইটি হালদার ও তার পরিবারকে চরমমূল্য দিতে হচ্ছে। সূত্রে জানা যায় যশোর বিভাগের মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায়। হিন্দু অধ্যুষিত কুলটিয়া এলাকায় বেশ প্রভাবশালীও
তিনি। তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস কারো নেই।
সুইটির সাত বছর বয়সী ছেলেকে
সহযোগীদের দিয়ে কুকুর লেলিয়ে হত্যাচেষ্টার পর থেমে থাকেনি চেয়ারম্যান শেখর ও তার অনুসারীরা।
হামলা, পাল্টা মামলা ও হুমকি দিয়ে বাড়িছাড়া করেছে গৃহবধূ ও তার পরিবারের সদস্যদের।
‘একঘরে’ করে রাখা হয়েছে তাদের।
এই পরিবারের সঙ্গে কারো
যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না। চেয়ারম্যানের আক্রোশের শিকার গৃহবধূ সুইটি স্বামী ও সন্তানকে
নিয়ে রোববার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন।
চেয়ারম্যান শেখর ও তার
সহযোগীদের অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার
কুলটিয়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বিশ্বজিত হালদারের স্ত্রী সুইটি হালদার। তবে অভিযোগ
অস্বীকার করেছেন কুলটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায়।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত
কণ্ঠে সুইটি হালদার বলেন, ‘চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় এলাকায় খুব প্রভাবশালী। তার
কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার পরিবার ধ্বংস করে দিচ্ছে। একের পর এক হামলা, মামলা
ও হুমকিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গ্রামে শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী-সন্তান নিয়ে
আমাদের সুখের সংসার ছিল। চেয়ারম্যানের আক্রোশে আমাদের পরিবারে ঝড় বইছে। আমাদেরকে ‘একঘরে’
করে রাখা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে কাউকে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি আমার কাকা
শ্বশুররাও ভয়ে আমাদের এড়িয়ে চলছেন। পরিবারের পাঁচ সদস্য পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার ছেলে
স্কুলে যেতে পারছে না। আমার বড় অপরাধ চেয়ারম্যানের কুপ্রস্তাবে রাজি হইনি, তার বিরুদ্ধে
মুখ খুলেছি। আমরা চেয়ারম্যানের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কুলটিয়া
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় তার সহযোগী পলাশ বিশ্বাসের মাধ্যমে আমাকে কুপ্রস্তাব
দিয়ে আসছিল। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্বামী বিশ্বজিৎ হালদারকে বিভিন্ন মিথ্যা
মামলায় জড়ানো ও ছেলেকে অপহরণের হুমকি দিচ্ছিল।
একপর্যায়ে গত ২৮ জানুয়ারি
আমার ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র অয়ন হালদারকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভবেন বিশ্বাসের
স্ত্রী শোভা বিশ্বাস ও শান্তুনু বিশ্বাস তাদের পালিত কুকুর লেলিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।
ছেলেটি ভয়ে কান্নাকাটি করতে করতে দৌড়ে বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এরপর শাশুড়ি বিষয়টি জানতে
গেলে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে তাকে মারপিট করলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। ওইদিন সন্ধ্যায়
আমার স্বামী বিশ্বজিৎ হালদার মোটরসাইকেলে মশিয়াহাটি বাজারে যাওয়ার পথে চেয়ারম্যানের
নির্দেশে ভবেন বিশ্বাসের ছেলে পলাশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এসময় তাৎক্ষণিকভাবে
এলাকাবাসী মীমাংসা করে দেন। পরে রাত সাড়ে ১১টার
দিকে পলাশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে বাড়িতে হামলা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের রক্তাক্ত জখম
করা হয়। হামলার সময় এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে এক হামলাকারী। ২৯ জানুয়ারী সালিশ মীমাংসার
কথা বলে চেয়ারম্যানের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা স্বামী বিশ্বজিৎ, শ্বশুর নিতাই, কাকা শ্বশুর
তপন, সমীর হালদারকে মারপিট করে। একপর্যায়ে স্বামী বিশ্বজিৎ ও কাকা শ্বশুর তপন অজ্ঞান
হয়ে যান। তাদের রক্ষা করতে গেলে আমার ওপর হামলা চালানো হয়। এবং হাতের চুড়ি ভেঙে ও মাথার
সিঁন্দুর মুছে দেয়। তারা বলতে থাকে তোর স্বামী মরে গেছে, তোকে বিধবা করে দিলাম। মারপিট
করে ফেলে রেখে দেয় তারা। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়।’ এ ঘটনায় চেয়ারম্যান
ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করায় গৃহবধূ সুইটির পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে এবং তাদের
সঙ্গে গ্রামের সবার যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায়
৩০ জানুয়ারি মণিরামপুর থানায় সুইটি হালদারের শ্বশুর নিতাই হালদার বাদি হয়ে মণিরামপুর
থানায় মামলা করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন- আলীপুর গ্রামের ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, পলাশ
বিশ্বাস, সুব্রত বিশ্বাস, পবিত্র বিশ্বাস, দিপংকর বিশ্বাস, কফিল হালাদার, সঞ্জয় মন্ডল,
ভিম মন্ডল, শান্তুনু বিশ্বাস। হামলার করার পর চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা হুমকি-ধামকি
দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ সুইটি।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি যশোরের
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে সুইটি হালদার সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মামলার প্রধান আসামি কুলটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায়। বাকি আসামিরা হলেন
সুব্রত বিশ্বাস, দিপঙ্কর বিশ্বাস, পলাশ বিশ্বাস, কপিল হালদার, বিপ্লব রায় ও অমিতাব
বিশ্বাস। চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করায় আসামি
পলাশ বিশ্বাস বাদি হয়ে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সুইটি হালদারের
স্বামী বিশ্বজিত হালদারসহ পাঁচ স্বজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
সুইটির স্বামী বিশ্বজিত
হালদার জানান, চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করায় পাল্টা মিথ্যা চাঁদাবাজির
মামলা দিয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তারা আমাদের উপর
ক্ষিপ্ত হয়েছে। গ্রামের মানুষকে চাপ দিয়ে আমাদের একঘরে করা হয়েছে। ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি
না। আমার কাকাদেরকেও হুমকি দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে।
আমরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চাই। এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় বলেন, আমি কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। কবে মিটিং হলো,
কারা মারপিট করলো আমি কিছুই জানি না। আমার প্রতিপক্ষের লোকজন ওদের ব্যবহার করছে।
তিনি আরও বলেন, ওই পরিবারকে
একঘরে করা হয়নি। তারা ইচ্ছা করেই এলাকায় আসছেন না। বিশ্বজিতের বাবা-মা গ্রামে থাকে।
মিথ্যা মামলা করায় গ্রামবাসী ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না।
মণিরামপুর থানার ওসি মোকাররম
হোসেন, সুইটির পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা
নেওয়া হবে। এছাড়াও সুইটির শ্বশুরের দায়ের করা মামলা তদন্ত চলছে।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
জেলা সংবাদ
0 facebook: