12 February 2018

কোন সে অজানা ক্ষমতায় থমকে আছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধের তদন্ত


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাঁচ সপ্তাহেও তদন্ত শেষ হয়নি। কবে প্রতিবেদন জমা পড়বে, তাও জানা যাচ্ছেনা, এক নারীকে অস্ত্রের মুখে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করার বিষয়ে  গত ৭ জানুয়ারি গঠন করা তদন্ত কমিটিতে কত দিন সময় দেয়া হয়েছে, এই বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

৮ জানুয়ারি শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছিলেন, পুলিশ সপ্তাহ শেষ হলে মিজানের বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আলোচনাই হারিয়ে গেছে।

এক সপ্তাহ সময় দেয়া তদন্ত কমিটি পাঁচ সপ্তাহেও কেন প্রতিবেদন দিতে পারেনি, সে বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা কিছুই বলছেন না, এমনকি এখন পর্যন্ত কী পাওয়া গেছে, সে বিষয়েও কিছু বলতে নারাজ তারা। পুরো বিষয়টি নিয়েই কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করছেন কারা।

সাধারণত তদন্ত কমিটি গঠনের সময়ই এই বিষয়টি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়। এমনকি কত দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সেই বিষয়টিও নাম প্রকাশ করে খোলাসা করছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা। যদিও নাম প্রকাশ না করে পুলিশ সদরদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়ছেন, সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল তদন্ত কমিটিকে।

ডিআইজি মিজানের কার্যক্ষেত্র ছিল ঢাকা মহানগর পুলিশে। তিনি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার  হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে অভিযোগ উঠার পর তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এক নারী অভিযোগ করেছেন, পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের কাছে তার বাসা থেকে তাকে কৌশলে গত বছরের জুলাই মাসে তুলে নিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তা মিজান। পরে বেইলি রোডের তার বাসায় নিয়ে তিনদিন আটকে রাখেন। এরপর বগুড়া থেকে তার মাকে ১৭ জুলাই ডেকে আনা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা কাবিননামায় মিজানকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাখেন মিজান। অথচ মিজান পূর্ব-বিবাহিত।

ওই নারী আরও জানান, কয়েক মাস কোনো সমস্যা না হলেও ফেসবুকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি ছবি তোলার পর ক্ষেপে যান মিজান। বাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলায় তাকে গত ১২ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর মিথ্যা কাবিননামা তৈরির অভিযোগে আরেকটি মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়।

দুটি মামলায় জামিনে বেরিয়ে আসার পর পুলিশ কর্মকর্তা মিজানের বিাংদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন ওই নারী।

গত ৮ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ শুরু আগেই বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। আর পরদিন তাকে ডিএমপি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এ কারণে পুলিশ সপ্তাহে যোগ দেননি তিনি।

আর ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মঈনুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শাহাবুদ্দিন কোরেশী এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবিবুর রহমানকে নিয়ে কমিটি করার কথাও জানানো হয়।

তবে  ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্যদের সঙ্গে বেশ কয়েকজার যোগোযোগের চেষ্টা করেও তাদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা কেউই ফোন ধরতে চাননি।

আবার ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- গত ১৫ জানুয়ারি এমন প্রশ্ন শুনে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি সেদিন বলেন, ‘একথা অনেকবার বলেছি, আপনারা একটা কথা কেন বার বার জিজ্ঞাসা করেন, আমি জানি না। একটা কথা বারবার জিজ্ঞেস করার অর্থ আমি বুঝি না।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সহেলী ফেরদৌস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। এটা দিতে সময় লাগবে।

তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে যখন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে তখন অবশ্যই গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারবেন।


শেয়ার করুন

0 facebook: