আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সৌদি আরবের আরো একটি ড্রোন ইয়েমেনের সেনারা ভূপাতিত করেছে। রোববার সন্ধ্যায় ইয়েমেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সা’দা প্রদেশের আকাশ থেকে ড্রোনটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছিল। আনসারুল্লাহ সমর্থিত সেনারা এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় হাজ্জাহ প্রদেশে সৌদি আরবের একটি ড্রোন ভূপাতিত করে। এছাড়া, গত ২৭ নভেম্বর ইয়েমেনের সামরিক বাহিনী সৌদি আরবের একটি ইউরোফাইটার টাইফুন জেট
ভূপাতিত করে। এ কাজে ইয়েমেনের সেনারা ভূমি
থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল।
নভেম্বর মাসেই
ইয়েমেনের সেনারা ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারা মার্কিন নির্মিত এমকিউ-৯ রিপার
ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ড্রোনটি সৌদি আরবের বিমান বাহিনী ব্যবহার করছিল। এছাড়া, গত জুন মাসে ইয়েমেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী সৌদি
আরবের একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ
থেকে সৌদি আরব ইয়েমেনের ওপর বর্বর সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। এতে এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি
মানুষ নিহত হয়েছেন।
ইয়েমেনকে ভাঙার
ষড়যন্ত্র ফাঁস
ইয়েমেনের
ন্যাশনাল সালভেশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল আজিজ হাবতুর বলেছেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনকে দুই অংশে ভাগ করে
নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সৌদি আরব উত্তর
ইয়েমেনকে এবং আমিরাত দক্ষিণ ইয়েমেনকে দখল করার পায়তারা করছে। ইয়েমেন বর্তমানে আগ্রাসী শক্তিগুলোর ভোগ দখলের প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে পরিণত
হয়েছে যা কিনা ইয়েমেনসহ সমগ্র ওই অঞ্চলের জন বিপদজনক পরিণতি ডেকে আনবে। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে হামলা
চালানোর সময় সৌদি আরব ও আমিরাত এ ব্যাপারে একমত হয়েছিল যে, ইয়েমেনে নিজ নিজ প্রভাবিত এলাকার ব্যাপারে রিয়াদ ও আবুধাবি একে অপরকে সহযোগিতা
করবে।
সমঝোতা অনুযায়ী
সৌদি আরব সানা পর্যন্ত উত্তর ইয়েমেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। অন্যদিকে আমিরাত চায় দক্ষিণের
নিয়ন্ত্রণ নিতে যেখানে গুরুত্বপূর্ণ এডেন বন্দর রয়েছে। এইসব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমিরাত ও সৌদি আরব
ইয়েমেনে তাদের অনুচরদেরকে দিয়ে ইয়েমেন দখল, জনসংখ্যার কাঠামোয় পরিবর্তন আনা এবং ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করছে। সংযুক্ত আরব
আমিরাতের কোনো কোনো আচরণ ও কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয়েছে, তারা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে আরব দেশগুলোতে নিজের প্রভাব
বিস্তারের চেষ্টা করছে যাতে তারাও সৌদি আরবের থেকে পিছিয়ে না থাকে। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আরব ও
আমিরাত ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করলেও জায়গা দখল নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা
শুরু হয়েছে এবং তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ইয়েমেনের রাজনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক খলিল আল মিকদাদ বলেছেন, সেদেশে এখন যা ঘটছে তার দায়ভার সৌদি আরব ও আমিরাতের ওপর
বর্তাবে। রিয়াদ ও আবু ধাবি সব কিছু
নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও বাস্তবতা হচ্ছে সব কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণের
বাইরে চলে যাচ্ছে। কারণ ইয়েমেনের যোদ্ধারাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলায় আগ্রাসী শক্তিগুলো
বেকায়দায় আছে। সৌদি আরব ও আমিরাত যুদ্ধ
চাপিয়ে দিয়ে ইয়েমেনে হত্যা, রোগের বিস্তার, শরণার্থী ও ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি।
ইয়েমেনের নোবেল
বিজয়ী ও মানবাধিকার কর্মী তাওয়াক্কুল কেরমানও বলেছেন, সৌদি আরব ও আমিরাত প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে এবং তারা ইয়েমেনের জনগণের ওপর
গণহত্যা ও অবকাঠামো ধ্বংস করা ছাড়াও দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ইয়েমেনকে রক্ষা করাই সৌদি আরব
ও আমিরাতের লক্ষ্য বলে ওই দুই দেশ যে দাবি করেছে তাকে নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছেন,
তারা ইয়েমেনকে দুই অংশে ভাগ করতে চায় যাতে এ অঞ্চলে তাদের
আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। ইয়েমেনের ন্যাশনাল সালভেশন
সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল আজিজ হাবতুর বলেছেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনকে দুই অংশে ভাগ করে নিজেদের ভূখণ্ডের
সঙ্গে যুক্ত করতে চায়। বৃহস্পতিবার আল-মায়াদিন টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
ইয়েমেনের
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর ইয়েমেনকে সৌদি আরব এবং
দক্ষিণ ইয়েমেনকে আরব আমিরাত দখলে নিয়ে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণার পরিকল্পনা
করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের ইয়েমেন বিষয়ক
বিশেষ প্রতিনিধি ইসমাইল ওয়ালাদ শেইখের তৎপরতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই প্রতিনিধি নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন না। আগ্রাসী দেশগুলোর তৈরি করা
রিপোর্টই তিনি জমা দিতেন। ইরান থেকে ইয়েমেন কোনো
ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
ইয়েমেন কখনোই ইরান থেকে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র পায় নি। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে সংযুক্ত
আরব আমিরাত ও আমেরিকার সহযোগিতায় সৌদি আবর ব্যাপক আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। চলমান আগ্রাসনে এ পর্যন্ত
হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: