স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ চীন ভারত মহাসাগরের
পূর্বাঞ্চলে বড়সড় নৌবহর পাঠিয়ে দিল মালদ্বীপে সাংবিধানিক সঙ্কট চলাকালেই। চীনা
সংবাদমাধ্যম সূত্রেই জানা গেছে অন্তত ১১টি চীনা যুদ্ধজাহাজ ভারত মহাসাগরের
পূর্বাংশে ঢুকেছে। এর সঙ্গে মালদ্বীপ সঙ্কটের সংযোগ রয়েছে, এমন
কোনো কথা চীনা সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়নি। কিন্তু কোনো পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছাড়া
আচমকা ভারত মহাসাগরের ওই অঞ্চলে ১১টি চীনা যুদ্ধজাহাজের ঢুকে পড়াকে কোনো সাধারণ
বিষয় হিসেবে দেখছেন না ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা।
যে চীনা নৌবহর ভারত
মহাসাগরে ঢুকেছে, তাতে ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট,
অ্যাম্ফিবিয়াস
(উভচর) ট্রান্সপোর্ট ডক এবং সাপোর্ট ট্যাঙ্কার রয়েছে বলে চীনা নিউজ পোর্টাল ‘সিনা
ডট কম ডট সিএন’ জানিয়েছে।
চীনা নৌবহরটি খুব বড় না
হলেও বেশ সক্ষম। এতে রয়েছে টাইপ ০৫২ডি (জিয়াঙকাই ২) নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র
ডেস্ট্রয়ার। এটিকে অত্যাধুনিক রণতরী বিবেচনা করা হয়। ৭৫০০ টনি জাহাজটিতে রয়েছে ২৮০
জন ক্রু। এতে হেলিকপ্টার, স্থল-আক্রমণে সক্ষম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র,
ভূমি
থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, আকাশ থেকে আকাশে
নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিনবিধ্বংস ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে
অস্ট্রেলিয়ার একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।
বেইজিং যে ২১টিরও বেশি
আধুনিক ফ্রিগেড মোতায়েন করেছে, তার মধ্যে টাইপ ০৫২ডি একটি। এটি প্রধানত
বিমান প্রতিরক্ষা জোরদারে ব্যবহৃত হয়।
টাইপ ০৭১ উভচর পরিবহন ডক
মানবিক ত্রাণ ও সৈন্য অবতরণের জন্য আদর্শ। এটি দুটি হেলিকপ্টার ছাড়াও নানা ধরনের
উভচর অ্যাসাল্ট যান ও অবতরণ যান বহন করতে পারে। এটি হাসপাতাল ও কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল
সুবিধাও প্রয়োগ করতে পারে। এতে সঙ্কুলান হয় ৮০০’র
মতো সৈন্য।
এটি আফ্রিকায় জলদস্যূ
দমনে নিয়োজিত ছিল। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এটি ভারত মহাসাগরের মাঝামাঝি এলাকায়
বিচরণ করছিল।
মালদ্বীপের কাছাকাছি
অঞ্চলে চীনা নৌবহর বেশ কয়েক দিন আগেই পৌঁছেছে বলে খবর। চীনের সশস্ত্র বাহিনী পিপলস
লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) গত শুক্রবার ভারত মহাসাগরে নিজেদের নৌবহরের উপস্থিতির কিছু
ছবি পোস্ট করে। চীনের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া ‘ওয়েইবো’-র
সেই পোস্টে পিএলএ জানায়, ভারত মহাসাগরের ওই অঞ্চলে প্রশিক্ষণ এবং
উদ্ধারকাজের মহড়া দিচ্ছে তাদের নৌসেনা।
ঠিক কত দিনের জন্য এই
মহড়ার আয়োজন হয়েছে, চীনা নৌবহর ভারত মহাসাগরের ওই অঞ্চলে আর
কত দিন থাকবে, সে বিষয়ে পিএলএ-র পোস্ট থেকে সবিস্তারে
জানা যায়নি। চিনের যে নিউজ পোর্টালটি নৌবহর পাঠানোর খবর প্রকাশ করেছে, তারাও
এ বিষয়ে কিছু লেখেনি। এই সময়ে হঠাৎ ভারত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চলে নৌবহর পাঠানো হল কেন,
সে
সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেয়নি চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট
আবদুল্লাহ ইয়ামিনের একাধিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রায় দিয়েছিল সে দেশের
সুপ্রিম কোর্ট। ইয়ামিন রায় মানেননি। তিনি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। বিরোধী
দলের সদস্যদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে
জেলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমকেও জেলে ভরেছেন ইয়ামিন।
ভারতীয় সীমা থেকে মাত্র ৪০০
কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মালদ্বীপের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক বরাবরই নিবিড় ছিল। প্রেসিডেন্ট
ইয়ামিনের আমলে দেশটি চীনের দিকে প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়ে।
তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও
বিরোধী দলের নেতা মোহাম্মদ নাশিদ প্রবলভাবে ভারতপন্থী হিসেবে বিবেচিত। তিনি সঙ্কট
নিরসনে ভারতীয় হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। মালদ্বীপে সেনা পাঠানোর জন্য ভারতকে অনুরোধ
করেছেন তিনি।
নাশিদের অনুরোধ মেনে
ভারত যদি সেনা পাঠায় মালদ্বীপে, তা হলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হবে। সতর্কবার্তা
দিয়েছিল বেইজিং। সেই বেইজিং এ বার নিজেই মালদ্বীপের খুব কাছাকাছি নৌবহর পাঠিয়ে
দিলো।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: