28 February 2018

মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছেন সিরীয়রা


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ হররোজ বিমান হামলা আর কামানের গুলিপ্রতিনিয়তই মরছে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সের মানুষযুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় গোলার আঘাতে মৃত্যু এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছেযারা মরছেন তারা একরকম বেঁচে যাচ্ছেনকিন্তু যারা এখনও বেঁচে আছেন, মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছেন তারাযেকোনো সময় সামনে চলে আসতে পারে জীবনের অন্তিম মুহূর্তমৃত্যুর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে সিরীয়রা যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেমৃত্যু থেকে বাঁচতে ভবনের নিচ তলায় আশ্রয় নিচ্ছে অনেকেইনরককুণ্ড থেকে পালানোর একটুখানি প্রচেষ্টাএমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে ওমেনস অফিস নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান বায়ান রেহানের এক নিবন্ধেনিবন্ধটি মঙ্গলবার সিএনএনে প্রকাশিত হয়

বায়ান রেহান লিখেছেন, আরও অনেকের সঙ্গে ভবনের নিচ তলায় আশ্রয় নিয়েছি আমিআমাদের বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কোনো রকমে পালিয়ে আসি আমিদুই মিনিটের মধ্যে আমার পরিবার ও আমি ১৫০ মিটার দূরের নারী ও শিশুদের জন্য অস্থায়ী এই আশ্রয় কেন্দ্রে আসিসংসারের কোনো জিনিসই সঙ্গে নিয়ে আসার মতো কোনো সময় ছিল নাসেই মুহূর্তে শুধু নরককুণ্ড থেকে প্রাণটা বাঁচানোর চেষ্টা করেছি আমরাএমন দুর্ভাগ্য শুধু আমার একার নয়পূর্ব ঘৌটার ডুমা শহরের বেশিরভাগ বাসিন্দাই মাটির নিচে আশ্রয় নিয়েছে

তিনি আরও লিখেছেন, মাটির নিচে থেকে আমাদের আশপাশে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছিএখানে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছেআমরা মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছিপ্রবন্ধের শেষের দিকে তিনি বলেছেন, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলতে চাই, তোমরা যদি আমাদের এভাবে হত্যা করতে চাওতাহলে দয়া করে আমাদের তাড়াতাড়ি মেরে ফেলমৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও মিত্রদের বিমান হামলা এবং কামানের গোলার আঘাতে পূর্বাঞ্চলের অবরুদ্ধ ঘৌটায় দেশটির প্রায় ৪ লাখ বেসামরিক নাগরিক আটকা পড়েছেপাঁচ বছর ধরে ঘৌটার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশটির সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের হাতেঘৌটা থেকে বিদ্রোহীদের হটাতে সেখানে সরকারি সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছেবেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘৌটায় রাশিয়ার আহ্বানে পাঁচ ঘণ্টার মানবিক যুদ্ধবিরতিকার্যকর হয়তা সত্ত্বেও লড়াই অব্যাহত রয়েছে

সিরীয় সরকারি বাহিনীর হাতে ২০১৩ সাল থেকে অবরুদ্ধ হয়ে আছে পূর্বাঞ্চলের ঘৌটাদেশটির রাজধানীর কাছের এ জেলা বিদ্রোহীদের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটিক্রমাগত খাদ্য ও ওষুধ সংকটের কারণে বিধ্বস্ত ঘৌটায় মারাত্মক পুষ্টিহীনতা দেখা দিয়েছেগত বছর তুরস্ক, রাশিয়া এবং ইরান ঘৌটাকে ডি-এসকেলেশন জোনহিসেবে ঘোষণা দিতে ঐকমত্যে পৌঁছেসেই সময় আশা করা হয়, ঘৌটার আকাশে সিরিয়া এবং রাশিয়ার যুদ্ধবিমান উড়বে না


১৯ ফেব্রুয়অরি (রোববার) রুশ যুদ্ধবিমানের সমর্থনে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী পূর্ব ঘৌটায় অবিরাম বোমাবর্ষণ শুরু করেকয়েক দিনের টানা বোমাবর্ষণে মারা যায় কয়েকশ মানুষসিরীয় এবং রুশ বাহিনীর এ বোমা হামলার ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালস্থানীয়রা বলছেন, হামলায় ঘৌটার ছয়টি হাসপাতাল ও শহরের অধিকাংশ মেডিকেল সেন্টার ধ্বংস হয়ে গেছেযুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, সোমবার পর্যন্ত পূর্ব ঘৌটায় অন্তত ৫৬১ জন নিহত হয়েছেন


শেয়ার করুন

0 facebook: