ইসলামি ডেস্কঃ জুম্মার দিন মুসলমানদের জন্য শ্রেষ্ঠ এবং ফাজিলতপূর্ন একটা দিন। এই দিনের কারণে উম্মতে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত অন্য নবীর উম্মতদের আগে জান্নাতে যাবেন। হাদীস শরীফে এসেছে : [عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: نحن الآخرون ونحن السابقون يوم القيامة . بيد أن كل أمة أوتيت الكتاب من قبلنا . وأوتيناه من بعدهم . ثم هذا اليوم الذي كتبه الله علينا . هدانا الله له . فالناس لنا فيه تبع . اليهود غدا . والنصارى بعد غد]
আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু
তাহালা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন
সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সকল জাতিগুলো (ইহুদী ও খৃষ্টান) কে গ্রন্থ দেয়া
হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অত:পর জেনে
রাখো এই (জুমার) দিনটি আল্লাহ পাক আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক
পথের দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পিছনে আছে। ইহুদীরা জুমার
পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খৃষ্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে। (বর্ণনায়:
পবিত্র বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
জুমার দিনে
করনীয় কাজ সমুহঃ
১। জুম’আর
দিন গোসল করা। যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল ছল্লেল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াজিব করেছেন বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮,
৮৮০,
৮৯৭,
৮৯৮) পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল
কাজ।
২। জুম’আর সালাতের
জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)
৩। মিস্ওয়াক করা।
(ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, (বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
৪। গায়ে তেল
ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮৩)
৫। উত্তম পোশাক
পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
৬। মুসুল্লীদের
ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯,
ইবনে
মাজাহঃ১১৩৬)
৭। মনোযোগ সহ
খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩,
আহমাদঃ১/২৩০)
৮। আগে ভাগে
মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
৯। পায়ে হেঁটে
মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০। জুম’আর
দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান(দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া।
(বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১। সূরা জুম’আ ও
সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া
দিয়ে জুম’আ আদায় করা (মুসলিমঃ৮৭৭, ৮৭৮)
১২। জুম’আর
দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)
১৩। এ দিন বেশী
বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৪। মুসুল্লীদের
ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ৯১০,
৮৮)
১৫। মুসুল্লীদের
ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬। কাউকে উঠিয়ে
দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১,
মুসলিমঃ২১৭৭,
২১৭৮)
১৭। কেউ কথা বললে
‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ
৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)
১৮। মসজিদে
যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ
৮৫৩)
১৯। ঘুমের ভাব বা
তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু
দাউদঃ ১১১৯)
২০। ইমামের খুৎবা
দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০,
ইবনে
মাজাহঃ ১১৩৪)
২১। খুৎবার সময়
ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা
বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)
২২। জুম’আর
দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর
মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৩। জুম’আর
আযান দেওয়া (বুখারীঃ ৯১২)
২৪।জুম’আর
ফরজ নামাজ আদায়ের আগে ও পরে মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত
আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ
৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)
২৫। ওজু ভেঙ্গে
গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদঃ ১১১৪)
২৬। একান্ত উযর
না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)
২৭। সালাতের জন্য
কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন
জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২(। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে
না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
২৮। কোন নামাজীর
সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ৫১০)
২৯। এতটুকু জোরে
আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন
ঘটে। (আবু দাউদঃ ১৩৩২)
৩০। পায়ে হেঁটে
মসজিদে যাওয়ার ফযীলত অন্তরে জাগরূক রাখা।
৩১। হাঁটার আদব
মেনে মসজিদে গমন করা।
৩২। খুৎবার সময়
খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)
৩৩। হানাফী
আলেমগন বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লীর পিঠের উপর সিজদা
দেওয়া জায়েজ (আহমাদঃ১/৩২)।
৩৪। যেখানে জুম’আর
ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন
কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)
৩৫। ইমাম সাহেব
মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল,
তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা......
খবর বিভাগঃ
ধর্ম ও জীবন
0 facebook: