07 February 2018

বিনিয়োগকারীরা কি আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে ধসের কারন সম্পর্কে অবগত?


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মার্কিন অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থাকলেও ২০১৩ সালে দেশটির বিনিয়োগকারীরা ওয়াল স্ট্রিটকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবং ফেডারেল রিজার্ভের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রশংসাও করেছেনএটি শুধুমাত্র যে মুনাফার হার শূন্যে নামিয়ে এনেছে তা নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের ওপর খারাপ প্রভাবগুলো ঠেকাতেও কাজ করেছেএটি মুদ্রা ছাপার তিনটি বড় প্রকল্প নিয়েছে, যা তিন লাখ কোটির বেশি ডলার যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে ধসের আসল কারণ কী- সব সময়ই এটি একটি জটিল প্রশ্ন ছিলো। আর প্রকৃতপক্ষে এর কোনো সহজ উত্তর নেই

চীন যখন ব্যাপক হারে ঋণ দিয়েছে তখন ইউরোপ ও জাপান তাদের অনুসরণ করেছে২০ ট্রিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলারের এই বাড়তি তারল্য শেয়ার ও বন্ড বাজারে জোয়ার এনে দেয়, দাম বাড়তে থাকে এবং বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত আসতে তাকেদীর্ঘ এই সময়ে বিনিয়োগকারীরা পুরনো সব নিয়মকানুন বদলে ফেলে নতুনভাবে ব্যবসায় করতে থাকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ওয়ালস্ট্রিটের(নিউ ইয়র্কের শেয়ারবাজার যেখানে) সমন্বিত মূল্য অন্তত ২৫ গুণ বেড়েছেঅপ্রত্যাশিতভাবে টানা ৩১২ দিন ৫ শতাংশের বেশি কখনোই অবনমন হয়নি। (সাধারণত বছরে ৩ শতাংশ অবনমনকে স্বাভাবিক ধরা হয়)তবে যেকোনো সফলতারই তো একটি শেষ থাকতেই হবে, গত সপ্তাহে তাই হয়েছে

মাসের পর মাস ধরে ওয়াল স্ট্রিট ও বিশ্ব শেয়ারবাজারের ঘাড়ে ঝুলে ছিল মুনাফা বৃদ্ধির এই ভুতফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জ্যানেট ইয়ারেন গত সপ্তাহে বলেছেন, আমেরিকান অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এই গতিতে মুনাফার হার প্রত্যাশার চেয়ে অল্প কিছু বাড়তে পারেশেষ পর্যন্ত ভালো খবরটি এলো গত শুক্রবারযুক্তরাষ্ট্রে শুধু কর্মসংস্থানই বাড়ছে না, চাকরিজীবীদের মজুরিও বাড়তে যাচ্ছেমুনাফার হার বৃদ্ধির এই ধারা শেষ হয়েছেআর পতনটা ত্বরান্বিত হয়েছ শেয়ারবাজারের

মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে সরকার সুদের হার বাড়াতে পারে; এমন সম্ভাবনা থেকেই বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ উঠিয়ে নিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছেসুদের হার বাড়লে সেখানকার শিল্পখাতে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারেআর ঋণ সঙ্কট না হলেও শেয়ার বাজারের বাইরে অন্য কোনো বিনিয়োগ খাতেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কম থাকায় গত এক দশক ধরে অধিকতর মুনাফার আশায় সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে এশিয়ারবাজারেএখন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার বাড়ার সম্ভাবনার মুখে সেই বিনিয়োগও এশিয়ার শেয়ারবাজার থেকে তুলে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা এই সুদের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করেই যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে লেনদেনকারী বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেনদুটি কারণে তারা এমনটি করতে পারেনএকটি হলো, সুদের হার বেড়ে গেলে শিল্পগুলো উচ্চ সুদের হারের কারণে যথাযথ পরিমাণে ঋণ জোগাড় করতে পারবে নাঅন্য দিকে সুদের হার যদি বাড়েই, তাহলে বিনিয়োগের বিপরীতে প্রত্যাশিত মুনাফার জন্য শেয়ারবাজারে থাকার চাইতে অন্য কোথাও বিনিয়োগকরাকে ভালোবলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা

সোমবার ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দরপতনের মুখে পড়ে মার্কিন শেয়ার বাজারউচ্চ সুদের হারের কারণে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার শেয়ার বিক্রির ধুম পড়ে যায়শুরু হয় দরপতনএর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে দরপতনের ধারা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০টি প্রধান কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ইনডেক্স ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ২৪ হাজার ৩৪৫ পয়েন্টে নেমেছেবাজারে বড় ধসের মুখে বিনিয়োগকারীদেরকের আশ্বস্ত করতে হোয়াইট হাউজ বলেছে, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মৌলিক দিকগুলোর প্রতি নজর দেয়া হচ্ছে, যেগুলো দারুণ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে

ডাউ জোন্সের পাশাপাশি বৃহত্তর এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিয়ে তৈরি সূচক নাসদাক ৩ দশমিক ৭ শতাংশ দর হারিয়েছেলন্ডনের প্রধান কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত এফটিএসই ১০০ সূচক ১০৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে মঙ্গলবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতেই ওয়াল স্ট্রিটকে অনুসরণ করে দরপতন শুরু হয়জাপানের প্রধান সূচক নিক্কেই কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আগে ২২৫ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ দর হারায়, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সূচক এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স দর হারিয়েছে ২০০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭ শতাংশদক্ষিণ কোরিয়ার সূচক কোসপি ২ দশমিক ৩ শতাংশ দর হারিয়েছে এর আগে অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে গিয়েছিল২০১৬ সালের নভেম্বরে নির্বাচত হওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাড়ার এই বিষয়ে বেশ কয়েকবার টুইট করেছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোটলি ফুলের প্রধান নির্বাহী ডেভিড কোউ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংবাদ আশাতিরিক্ত শক্তিশালীতাই অন্যভাবে দেখলে, ইতিবাচক অর্থনৈতিক সংবাদের কারণেই বাজার সংশোধন হয়েছেশতাংশীয় হিসেবে দেখলে ২০১১ সালের অগাস্টের ব্ল্যাক মানডের পর থেকে ডাউয়ের সবচেয়ে বড় দরপতন হয়েছেওই সময় স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড পুওরস যুক্তরাষ্ট্রে এর ঋণমান নামিয়ে দিয়েছিলআমেরিকান ও বিশ্ব অর্থনীতির পূর্বাভাসের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরাশুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদফতর চাকরি নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে বেতন আশাতীত বেড়েছে বলে দেখানো হয়েছেএরপর পুঁজিবাজারে বিক্রির চাপ বাড়তে থাকেসিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাকার্থি বলেন, বেতনের পরিমাণ হঠাৎ করে নি¤œ সুদের হারকে ধসিয়ে দিয়েছেশেয়ার বিক্রির হিড়িকের মধ্য দিয়ে কাক্সিক্ষত সুদের হারের চেয়ে বেশি হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে

এর ফলে, বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে অর্থ বিনিয়োগ করছেন বন্ডের মতো সম্পদে, যাতে উচ্চ সুদের হারের সুবিধা নেয়া যায়এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের পোর্ট ফোলিও ম্যানেজার এরিন গিবস বলেন, ‘এটা অর্থনীতির পতন নয়এর মধ্যে এই উদ্বেগ নেই যে বাজার ভালো করবে নাএটার অর্থ হলো- অর্থনীতি আশাতীত ভালো করেছে এবং আমাদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে


শেয়ার করুন

0 facebook: