06 March 2018

সিরিয়ায় সমানতালে চলছে গুম-ধর্ষণ


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ একদিকে চলছে সরকার ও মিত্র বাহিনীর অত্যাচার- গুম অভিযানঅপরদিকে বিদ্রোহীগোষ্ঠী, ইসলামী উগ্রপন্থীদের পাল্লা দিয়ে নারী ধর্ষণ লালসাএক ভয়ানক খেলায় মেতে উঠেছে সরকার-বিদ্রোহীগোষ্ঠীশিকারে পরিণত হচ্ছে নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকনিজের বাড়ির উঠোনে ধর্ষিত হচ্ছে মা, যুবতী বোনচোখের সামনে ধর্ষণ হতে দেখেও অসহায় বাবা, জওয়ান ভাইগুলোও চিৎকার-আর্তনাদ ছাড়া কিছুই করতে পারছে না

রুখতে গেলেই বুটের নিচে ফেলে বেধড়ক মারা হচ্ছেক্ষোভ, লজ্জা, ঘেন্নায় অতিষ্ঠ মানুষগুলো আর বেঁচে থাকতে চাইছে নামুক্তি চাইছে এই নরক যন্ত্রণা থেকেচৌদ্দ-পনেরো বছরের ছোট ছোট ছেলেমেয়ের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বাবাকে সদ্যবিবাহিতার সামনে থেকে তার স্বামীকে যেতে না চাইলে বন্দুকের নল নিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করা হচ্ছেএরপর নিস্তেজ শরীর টেনে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছেআর হয়তো কোনোদিন ফিরেও আসবে না তাদের প্রাণপ্রিয় বাবাতারপরও বাস্তুহারা পরিবারগুলো আশা ছাড়তে নারাজবসে বসে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে- কবে ফিরে আসবে তাদের বাবা? কখন আসবে স্বামী

সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের সময় গুম, অত্যাচার, হত্যা- এসব মানবতাবিরোধী কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ ছিলএ নিয়ম ২০০০ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল ২০১১ সালে দেশে সরকার-বিদ্রোহীদের মাঝে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাড়তে থাকে এ জঘন্যতম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডসিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের? (এসওএইচআর) তথ্য মতে, এ পর্যন্ত সরকার ও তার মিত্রবাহিনী প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষকে ধরে নিয়ে গেছেযার মধ্যে ৯৫ হাজার বেসামরিক নাগরিকবাকি ৫০ হাজার বিভিন্ন বিদ্রোহী ও ইসলামী উগ্রবাদী দল

এদের মাঝে আছে আইএস, ফাতেহ আল সাম, কুর্দি বাহিনীর সদস্যঅন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মোট নিখোঁজের সংখ্যা বলছে ১ লাখ ১৭ হাজারতবে বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যাটা একই আছেসংস্থাটি অবশ্য জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া মানুষের একটা হিসাব দিয়েছেসংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজারের কাছাকাছিএখনও নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজারের মতো

সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা দুটি একটি ভিন্নধর্মী তথ্য প্রকাশ করেএতে ধরে নিয়ে যাওয়া মানুষের ফাঁসির মাধ্যমে মৃতের সংখ্যার হিসেব দেয়যাদের ধরে নিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হতোসারা দিন অকথ্য অত্যাচার চালানো হতো তাদের ওপরশেষ পর্যন্ত কোনো তথ্য বের করতে না পারলে মাঝরাতে কারাগার থেকে বের করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারতস্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাগুলোর দাবি, এ পর্যন্ত যত গুম, অত্যাচার হয়েছে তার বেশিরভাগই করেছে সরকার ও তার মিত্রবাহিনী

২০১১ সালের শেষের দিকে এ গুমের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ প্রচারণা চালায় বেসামরিক নাগরিক ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলতারপর আসাদ বাহিনী তার মিত্রদের প্ররোচনায় কয়েক হাজার মানুষ ধরে নিয়ে যায়বেসামরিক নাগরিকসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যও ছিলবিরোধী দলের কর্মী, ডাক্তার, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, বিভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী, অনেক ত্রাণদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীসহ প্রায় সব পেশাজীবী ছিলেন

ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কেউ কেউ ফিরে এলেও বেশিরভাগই এখনও নিখোঁজসেই থেকে শুরু করে আজ সাত বছর হতে চলল- এখন পর্যন্ত গুম অভিযান অব্যাহত রেখেছে সরকার (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল)সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা অনেক শরণার্থী ইউরোপ, আমেরিকার মতো বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেতারা প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাওয়া সদস্যদের ফিরে পেতে ইউরোপের রাস্তায় রাস্তায় মানববন্ধন করছেইতিমধ্যে তারা ফ্যামিলিস ফর ফ্রিডম নামে একটি সংগঠন খুলেছেএদের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে দ্য সিরিয়া ক্যাম্পেইন, উইমেন ফর ডেভেলপমেন্ট, দাওলাতি নামের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো

২০১৩ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে যুদ্ধের সময় ধর্ষণ বন্ধে একটি বৈঠকে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল বিশ্বের শীর্ষ শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৮বৈঠকে বলা হয়, যুদ্ধের সময় নারী এবং শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন, ধর্ষণকে যুদ্ধের একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা এখনও বড় ধরনের একটি সমস্যা এ সমস্যা নিরসনে এই প্রথম উন্নত দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলকোথায় গেল আজ সেই সিদ্ধান্ত? ২০১১ সালে শুরু হওয়া ক্ষমতা দখলের এই লড়াইয়ের আজ সাত বছরযুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে সিরিয়ার নারী ও শিশুদের ওপর ব্যাপক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছেধর্ষণের শিকার হয়ে বা এর আতঙ্কে অনেক সিরীয় পার্শ্ববর্তী জর্ডান ও লেবাননে পালিয়ে গেছে

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজারের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেজাতিসংঘের এক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে সিরিয়াতে ৭৫ লাখ মহিলা ও কম বয়সী নারী ধর্ষণঝুঁকিতে আছে


শেয়ার করুন

0 facebook: