![]() |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ নেপালে ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় সারা দেশে আজ বৃহস্পতিবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া শুক্রবার মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে দোয়া এবং প্রার্থনা কর্মসূচি পালনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভবিষ্যতে এ জাতীয় বিমান দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এয়ারলাইন্স অপারেটরদের যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনবিষয়ক নিরাপত্তা আইন অনুসরণ করার কথা বলেন তিনি। সোমবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে ওই ফ্লাইটে থাকা ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন নিহত হন। বাকি ১০ জন গুরুতর আহত হয়ে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দুর্ঘটনায় ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২১ জন। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় এত তাজাপ্রাণ অকালে ঝরে পড়ায় শোকে স্তব্ধ বাংলাদেশ। শোকাহত জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। টুইট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শোকবার্তা পাঠিয়ে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তারা।
এর মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব, দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং এবং কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়েছে। শোক জানিয়েছে স্প্যানিশ লীগ। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার-পরিজনে এখন চলছে শোকের মাতম। কোনোভাবেই বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছেন না তারা। শোকে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সন্তান হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ বাবা-মা।
নিহতদের গ্রামের বাড়ি ও কর্মস্থলগুলোয় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে নিহতদের কর্মস্থল ও এলাকায়। স্বজন ও সহকর্মীদের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস, শেষ ছবি এবং মুঠোফোনে স্বজন, সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে শেষ কথা বা দেখা হওয়ার কথা উঠে এসেছে। এদিকে দুর্ঘটনার কথা শুনে সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে একদিন আগেই মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফিরেই তিনি নিহত ও আহতদের পরিবার-পরিজনের খোঁজখবর এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। বুধবার এক জরুরি বৈঠকের পর একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন তিনি।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার (আজ) সারা দেশে একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সারা দেশে সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এদিন জাতীয় পাতাকা অর্ধনমিত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন যুগান্তরকে জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন। বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তিন বাহিনীর প্রধান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মুখ্য সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থ করে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।’ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে নজিবুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশিদের দেশে আনা এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বার্ন ইউনিটের দক্ষ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি চিকিৎসা দল কাঠমান্ডুতে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এবং নিহতদের ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহের জন্য পুলিশের একটি দলকেও নেপাল পাঠানো হচ্ছে।’ নজিবুর রহমান বলেন, ‘আহতরা যদি রাজি হন, তাহলে তাদের আমাদের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হবে। কারণ আমাদের বার্ন ইউনিটে খুবই উন্নত চিকিৎসা হয়।’ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে ‘গুরুতর আহত’ দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অ্যাভিয়েশন নিরাপত্তা আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল জানিয়েছেন, নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত শেষ করতে অন্তত তিন দিন লাগবে। যাদের শনাক্ত করা যাবে, তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই মরদেহ ঢাকায় নেয়া হবে। যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে না, তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তাদের মধ্যে আটজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি কারও চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। বুধবার নেপালের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন। মন্ত্রী বলেন, ‘ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা থেকে দুটি মেডিকেল টিম কাঠমান্ডু আসছে।’ ডিআরইউ’র শোক র্যালি ও কালো ব্যাচ ধারণ আজ : দুর্ঘটনায় বৈশাখী টেলিভিশনের ফয়সাল আহমেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। বুধবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী বলেন, ফয়সালের মৃত্যুতে ডিআরইউ’র সদস্য ও সহকর্মীদের মাঝে গভীর শোক বিরাজ করছে।
বিবৃতিতে তার আত্মার মাগফিরাত ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে ফয়সাল আহমেদসহ নিহতদের স্মরণে আজ কালো ব্যাজ ধারণ ও শোক র্যালির কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ডিআরইউ। শোক র্যালিটি সকাল সাড়ে ১১টায় ডিআরইউ চত্বর থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হবে।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: