স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ আসন্ন ‘ইস্টার সানডে’ উদ্যাপনের
টাকা জোগাতে গারো নারী বেসেত চিরান (৬৫) ও তাঁর মেয়ে সুজাতা চিরানকে (৪০) খুন করা
হয়েছে। তবে খুনের পরিকল্পনা করা হয় এক
মাস আগে। গ্রেপ্তার সুজাতার ভাগনে
সঞ্জীব চিরান (২১) এসব তথ্য দিয়েছেন বলে র্যাবের এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) কমান্ডার
মুফতি মাহমুদ খান এই সংবাদ ব্রিফিং করেন।
গত মঙ্গলবার
গুলশানের কালাচাঁদাপুরে বেসেত চিরান ও সুজাতা চিরানকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সুজাতার স্বামী আশিষ মানকিন গত বুধবার সকালে
গুলশান থানায় মামলা করেন।
র্যাব জানায়,
হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় সঞ্জীবসহ মোট চারজন। অন্য তিনজন হলেন রাজু সাংমা ওরফে রাসেল (২৪), প্রবীণ সাংমা (১৯) ও শুভ চিসিম ওরফে শান্তকে (১৮)। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকা
থেকে র্যাব-১–এর একটি দল তাঁদের গ্রেপ্তার
করে।
কারওয়ান বাজারে
র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন,
প্রায় এক বছর আগে সঞ্জীবকে ঢাকায় নিরাপত্তাপ্রহরীর চাকরি
দেন সুজাতার স্বামী আশিষ মানকিন। তবে অন্য জায়গায় বেতন বেশি পাওয়ায় এক মাস পরে চাকরি ছেড়ে তিনি শেরপুরে ফিরে
যান। কিন্তু তখন থেকেই সুজাতার
বাসায় আসা-যাওয়া ছিল সঞ্জীবের।
সঞ্জীব,
শান্ত ও প্রবীণ—এই তিন বন্ধু
মিলে এক মাস আগে হত্যার পরিকল্পনা করে বলে জানান মুফতি মাহমুদ। তিনি বলেন, ঢাকায় সুজাতার
বাসায় থেকে টাকা চুরি করে ‘ইস্টার সানডে’ উদ্যাপনের কথা ছিল। সঞ্জীব ও তাঁর বন্ধুরা শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বসে এ পরিকল্পনা
করেন। তাঁদের ধারণা ছিল, সুজাতার খালার পরিবারের সবাই চাকরিজীবী। তাই তাঁদের কাছে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা পাওয়া যাবে। এ জন্য ১৯ মার্চ ঢাকায় এসে বন্ধু রাজুর বাসায় ওঠেন
তাঁরা।
র্যাবের দাবি,
পরদিন সকালে সঞ্জীব, রাজুর কাছ থেকে একটি ধারালো অস্ত্র নেন। এরপর তাঁরা সুজাতার বাসার সামনে আসেন। সকাল নয়টার দিকে প্রথমে সুজাতার বাসায় যান রাজু ও প্রবীণ। তাঁরা বাসার ভেতরে সুজাতা, বেসেত ও সুজাতার মেয়ে মায়াবীকে দেখে ফিরে এসে সঞ্জীব ও শান্তকে জানায়। তাঁরা বুঝতে পারে বাসায় তিনজন থাকলে চুরি করা সম্ভব
হবে না। এরপর বেলা তিনটার দিকে সঞ্জীব,
শান্ত, রাজু ও প্রবীণ আবার সুজাতার
বাসায় যান। তখন বাসায় সুজাতা ও তাঁর মেয়ে
মায়াবী ছিল। এ ছাড়া মায়াবীর এক বছরের মেয়েও
ছিল। সঞ্জীব ও তাঁর বন্ধুরা বাসায়
গেলে সুজাতা তাঁদের নাশতার জন্য চা-বিস্কুট দেন। নাশতা শেষে সঞ্জীব তাঁর খালা সুজাতাকে ২০০ টাকা দিয়ে দেশীয়
মদ আনতে বলেন। সুজাতা দেশীয় মদ নিয়ে এলে সবাই
মিলে তা পান করেন। এ সময় মায়াবী তাঁর কর্মস্থলের
উদ্দেশে বের হয়ে যান।
র্যাব
জানিয়েছে, একপর্যায়ে রাজু ও প্রবীণ বেসেতের পা চেপে ধরেন ও
শান্ত বালিশ দিয়ে বেসেতের মুখে চাপা দেন। এ সময় সঞ্জীব বেসেতের গলায় থাকা ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে
শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর সঞ্জীব ও রাজু সুজাতার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা
করেন। এরপর চারজন পুরো বাসায় অনেক
খোঁজাখুঁজি করেও কোনো টাকাপয়সা না পেয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী চলে যায়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি বাস কাউন্টারের
পেছনে ফেলে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার
এড়াতে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। পরে র্যাব তাঁদের আটক করে।
নিজ বাসায় গারো
সম্প্রদায়ের দুই নারী খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত বুধবার সকালে গুলশান থানায় মামলাটি করা হয়। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর
সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, নিহত সুজাতা চিরানের স্বামী
আশিষ মানকিন হত্যা মামলা করেছেন।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
বিভাগীয় সংবাদ
0 facebook: