30 April 2018

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মশকরা চলছেঃ রিজভী

ফাইল ছবি
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্রমাবনতিশীল শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আওয়ামী নেতারা উপহাস, তাচ্ছিল্য ও মশকরা শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীতিনি বলেন, যারা গণতন্ত্র বিনাশী মানবাধিকার পরিপন্থি, নাগরিক স্বাধীনতা হরণকারী, অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক মতের বিরুদ্ধের মানুষের মর্যাদা ও জীবনের কোনো দাম নেই

আজ সোমবার সকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা মিথ্যাচারকরছে বলে বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকআমি বলতে চাই-তাহলে কী স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সার্টিফিকেটধারীদের চিকিৎসার বাইরে দেশের মানুষ যেতে পারবে না? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা দীর্ঘ ২০/২৫ বছর ধরে তার চিকিৎসা করছেনযারা দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক তারা দেশের স্বনামধন্য পেশাদারী চিকিৎসকমানবকল্যানই তাদের ব্রতঅপপ্রচার আর কুৎসা রটনার কোরাশ দলের কান্ডারী হচ্ছেন আ:লীগের সাধারণ সম্পাদকশেখ হাসিনার রক্তাক্ত শাসনের দিক থেকে জনগণের দৃষ্টিকে সরাতে প্রতিদিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের উদ্ভট ও আবোল-তাবোল বকবকানী মানুষকে শুনতে হচ্ছে

রিজভী বলেন, ডাক্তারী এমন একটি পেশা যেখানে মিথ্যা বলার কোন অবকাশ নেইদেশনেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা সত্য না বললে একই বিষয়ে অন্য খ্যাতিমান চিকিৎসকরা তাদের তীব্র সমালোচনা করতেনযথার্থ চিকিৎসা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের টালবাহানায় বেগম জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় কারাগারে বিপন্ন জীবন কাটাতে হচ্ছেদেশনেত্রীর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এ বিষয়ে সরকার নিশ্চুপ-নির্বাক থেকে দলের সাধারণ সম্পাদককে দিয়ে ঠাট্টা তামাশা করাচ্ছেএটা নিষ্ঠুর উপহাসসহজাত বিচার বুদ্ধি হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষমতায় মোহগ্রস্তদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রীকে বিনা চিকিৎসায় বন্দী রেখে এক দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কী না সে প্রশ্নে দেশবাসী উত্তাল

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আদালতের বদৌলতে নয়, শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার বদৌলতে কারাগারে বন্দীএটাই সর্বজনস্বীকৃতআদালতের মাধ্যমে একটা আনুষ্ঠানিকতা করা হয়েছে মাত্রএটি অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীরই অন্ধ অসুয়ার উন্মাদ প্রতিফলনতাই দেশনেত্রীর সুচিকিৎসা ও তাকে মুক্তি না দিতে সরকারপ্রধান অনিচ্ছুক ও অনমনীয়সেজন্য কষ্ট দেয়া, নির্যাতন করা, মানসিক আঘাত দেয়া, ইত্যাদি জুলুমের নানামূখী অস্ত্র সরকার দেশনেত্রীর ওপর প্রয়োগ করছেযেন তিনি মনোকষ্টেই দগ্ধ হতে থাকেন

দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে সরকারের যে টালবাহানা ও ষড়যন্ত্রের কথা আমরা বলে আসছি তা গতকাল ওবায়দুল কাদের এর কথায় আবারো স্পষ্ট হলোআমি আবারো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি এবং তার পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি

রিজভী বলেন, আগামী ১৫ মে গাজীপুর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেদুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেনএই অপরাধে রাতের বেলায় সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয় নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় হানা দিয়ে গ্রেফতার, ক্রসফায়ারের হুমকি এবং বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছেসরকার তার গণবিরোধী চরিত্রের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারের বিরোধী শক্তির তথা বিরোধী দল ও মতের মানুষদের প্রতিপক্ষ হিসেবে গড়ে তুলছেএ ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখনই সতর্ক না হলে একদিন জনগণের কাঠগড়ায় তাদেরকে দাঁড়াতেই হবে

তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে গাজীপুরের একজন এসপি কিভাবে টিকে আছে? তার নামে অজস্র অভিযোগ থাকার পরও সরকার তাকে সরাচ্ছে না কেনো? এই পুলিশ সুপারের দ্বারা অমানবিক নিষ্ঠুরতায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে বিগত পাঁচ বছর ধরে গাজীপুরে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছেক্ষমতার অহংকারে গাজীপুরের এসপি হারুন বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ীঘর, দোকানপাট, বাজার ভেঙ্গে ফেলা, পুড়িয়ে দেয়া, তাদেরকে ঘরছাড়া করা এবং নির্বিচারে গ্রেফতার করে গাজীপুরে দু:শাসনের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে

রিজভী বলেন, গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরকে নির্বিচারে গ্রেফতার আসন্ন দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য একটি মেসেজসিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে এবং নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে ভীতি ছড়াতেই গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাদের ব্যাপকহারে আটক করা হয়েছেকাজেই এরকম পরিস্থিতিতে আসন্ন দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে নাইলেকশন কমিশন দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন কিংবা সরকারী দলের সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বন্ধে এখনও পর্যন্ত কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলে কমিশনের ভাবমূর্তি গহীন অতলে তলিয়ে যাবে

সামনের জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা বিন্দুমাত্রও থাকবে নাসুতরাং অবৈধ সরকারের সাথে নির্বাচনের কমিশনের উর্দ্ধতন কর্তাব্যক্তিদের পদত্যাগের আন্দোলনও একসাথে শুরু হবেসেজন্য আগামী দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন যেন রক্তাক্ত নির্বাচনের দিকে না যায় সেদিকে কমিশনকে সতর্ক তৎপরতা দেখাতে হবেসন্ত্রাসীদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে অবশ্যই সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে

তিনি বলেন, গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এম শামসুল হুদা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম পটু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ ইউনুস মৃধা, গোলাম হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কে এম জোবায়ের এজাজ, আলমগীর হোসেন, এ্যাডভোকেট ফারুকুল ইসলাম, লতিফুল্লাহ জাফরু, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাসেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামিলুর রহমান নয়ন, মোঃ আলী চায়না, প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেল, প্রচার সম্পাদক আব্দুল হাই পল্লব, ছাত্রনেতা আল মামুনসহ প্রায় ২০ জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীবর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি আন্দোলনকে দমন করার জন্যই প্রতিদিন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালানো হচ্ছে

গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার সেই জুলুমেরই নিরবচ্ছিন্ন অংশআমি এই গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতৃবৃন্দের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি

তিনি জানান, পাবনার সুজানগর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শাজাহান শেখকে গতকাল র‌্যাব পরিচয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়েছেএখনও পর্যন্ত কোথাও তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে নাএভাবে প্রতিনিয়ত বিরোধী নেতৃবৃন্দকে নিরুদ্দেশ করা হচ্ছেতিনি অবিলম্বে শাজাহান শেখকে জনসম্মুখে হাজির করার দাবি জানান


শেয়ার করুন

0 facebook: