03 May 2018

বাংলাদেশে প্রকল্পগুলো নির্বাচনের আগে শেষ করতে চান মোদি


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই কয়েক মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশে ভারতীয় প্রকল্পগুলোর কাজ ত্বরান্বিত করতে চাইছেনপ্রতিবেশী দেশগুলোতে এসব ভারতীয় প্রকল্পের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা বিক্রম ডোরাইস্বামীকেবিক্রম দক্ষিণ কোরিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছিলেনতাঁর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশকে তিন দফায় ভারত মোট ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে২০১১ সালে দেওয়া হয় ১০০ কোটি ডলারতার মধ্যে ২০ কোটি ডলার ছিল অনুদানচার বছর পর নরেন্দ্র মোদির সফরে ২০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ৫০০ কোটি ডলারেরএর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার নির্ধারিত সামরিক খাতের জন্যবাকি ৪৫০ কোটি ডলার কোন কোন খাতে ব্যবহৃত হবে, সেই রূপরেখার কিছু কিছু তৈরিএ পর্যন্ত মাত্র ৮০ কোটি ডলারের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছেঅর্থ এসেছে মাত্র ৩৮ কোটি ডলারকেন এবং কী কী কারণে প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদির চিন্তা সেটাইবাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্তত তিনটি ক্ষেত্রের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য ভারতকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছেসরকারি সূত্র বলেছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, নেপাল, মিয়ানমার ও মালদ্বীপেরও বিভিন্ন প্রকল্প ত্বরান্বিত করা হবে বিক্রম ডোরাইস্বামীর প্রধান দায়িত্বতবে প্রাথমিক লক্ষ্য বাংলাদেশ ও নেপাল

বাংলাদেশে যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, প্রধানত তা খরচ হবে যোগাযোগ ও অবকাঠামো নির্মাণেনদীপথের নাব্য বাড়াতে খননের দায়িত্বও এই ঋণের আওতায় রয়েছেসরকারি সূত্র বলছে, সড়ক যোগাযোগ, অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও খননের দিকে দ্রুত নজর দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেএই ক্ষেত্রগুলোর কাজ দ্রুত শুরু ও শেষ করার জন্যও ভারতকে বারবার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশপ্রধানমন্ত্রী মোদির তৎপরতার একটি প্রধান কারণ বাংলাদেশের এই অনুরোধসরকারিভাবে ছাড়াও রাজনৈতিক স্তরেও একাধিকবার এই অনুরোধ এসেছেচলতি বছর শেষের আগেই বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনতার কয়েক মাসের মধ্যে ভোট হবে ভারতের লোকসভারকাজেই প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করার তাগিদ রয়েছে দুই দেশেরই

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালোদুই দেশের নেতারাই প্রকাশ্যে তা স্বীকার করেনসরকারিভাবে ভারতও একাধিকবার বলেছে, বাংলাদেশ সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুসেই বন্ধু দেশের সবচেয়ে বড় স্পর্শকাতর দাবি অবশ্যই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, যা ২০১১ সাল থেকে এখনো অধরাভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে একতরফাভাবে সেই চুক্তি সম্পাদন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সম্ভবও নয়বিষয়টি বাংলাদেশ নেতৃত্বকে একাধিকবার বোঝানোও হয়েছেকিন্তু তার বাইরে অন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর বাস্তবায়নও যে করা দরকার, সেই উপলব্ধি নরেন্দ্র মোদির হয়েছেসে জন্যই তিনি উদ্যোগী হয়েছেন

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখেল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারত খুব বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছেযেমন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন, রেললাইন স্থাপন, বন্দর প্রকল্প, সেতু নির্মাণ, গৃহনির্মাণ, নদীপথের সংরক্ষণ ও নাব্যতা বৃদ্ধিকিন্তু এসব ছাড়াও অনেক ছোট ছোট প্রকল্পের সঙ্গেও ভারত যুক্ত, যেগুলোর দৃশ্যমানতা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রবল এবং সরকার ও প্রতিবেশী সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করেএই দিকগুলোতেও ভারত নজর দিচ্ছেস্পষ্টতই, ভারত চায়, ভোটের আগে দুই দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ধারণা ইতিবাচক হোক

দ্বিপক্ষীয় সফর ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির দেখা হচ্ছেভোটের আগে দুই নেতার আরও একবার সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনেসেখানে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের কাজ শেষওই ভবনে মিউজিয়াম, প্রেক্ষাগৃহ, লাইব্রেরি, ক্যাফেটরিয়া থাকবেসেখানে বছরভর বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হবে, যার মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবেদ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বার্থে এ এক অনন্য পদক্ষেপপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই ভবন উদ্বোধনের কথাওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও উপস্থিত করতে চায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষমোদি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য


গত চার বছরে মোদি বিশ্বভারতীতে যাননিভোটের আগে এবার সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে একত্র করার একটা চেষ্টাও চলছেতবে তার চেয়ে বেশি চেষ্টা চলছে দীর্ঘসূত্রতা থেকে দ্বিপক্ষীয় প্রকল্পগুলো রক্ষা করানরেন্দ্র মোদির তাগিদে সেই কাজ শুরু হচ্ছে


শেয়ার করুন

0 facebook: