স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। একই সাথে তারা মুক্তি আন্দোলন ও নির্বাচনী দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন। নেতারা বলেছেন, ‘বসে থাকলে চলবে না। সামনে রমজান মাস।
তৃণমূল থেকে দলকে প্রস্তুত করে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।’
গতকাল বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের পরবর্তী কর্মকৌশল প্রণয়নে যৌথ সভা ডেকে সিনিয়র নেতাদের মতামত নিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কমপক্ষে ৩৫ জন সিনিয়র নেতা বক্তব্য দেন।
বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনই ছিল মূল এজেন্ডা। সিনিয়র নেতারা সবাই এর পাশাপাশি আগামী নির্বাচন নিয়েও বক্তব্য দিয়েছেন।
দলের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না।
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাকে মুক্ত করেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। আরেক উপদেষ্টা মো: শাহজাদা মিয়া বলেন, আন্দোলন ছাড়া দেশনেত্রীর মুক্তি অসম্ভব। তাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা ভাবা হবে আত্মঘাতী।
সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম নয়া দিগন্তকে বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচি কী হতে পারে তা নিয়ে সিনিয়র নেতারা বৈঠকে কথা বলেছেন। আমরা মনে করছি, সরকার যদি আইনি পথে কিংবা সমঝোতার পথে না আসে তাহলে রাজপথের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার নয়া দিগন্তকে বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলন গড়ে তালার বিষয়ে সিনিয়র নেতারা পরামর্শ দিয়েছেন। রমজান মাস সামনে রেখেই স্থায়ী কমিটি পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন। জেলা উপজেলা বিভাগগুলোকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা হবে। বৈঠকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। জানা গেছে, সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তার মুক্তি দাবিতে বিএনপির গৃহীত ‘নরম কর্মসূচি’ নিয়ে মাঠপর্যায়ে কিছুটা সমালোচনা রয়েছে। মূলত একাদশ সংসদ নির্বাচনের এখনো ৭-৮ মাস বাকি থাকায় দলের নেত্রীর কারামুক্তিকে ঘিরে কঠোর কোনো আন্দোলনের পথে যায়নি বিএনপি। সাংঘর্ষিক আন্দোলনের ‘সুযোগ’ সরকারকে না দিতেই এ পথ বেছে নেয়া হয়।
দলের সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, এ মাসেই রমজান শুরু হচ্ছে। বিএনপি দলীয় প্রধানের মুক্তি দাবির পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি নিয়ে রমজানেও মাঠে থাকবে। নির্বাচনের ৪-৫ মাস আগে যে ধরনের কর্মসূচি দিলে দাবি আদায় হয়, সেদিকেই তারা অগ্রসর হবেন।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিএনপি নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবিতে সোচ্চার হতে চায়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে দলটির তিনটি শর্ত এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এক. খালেদা জিয়াকে করাবন্দী রেখে নির্বাচন নয়। দুই. নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং তিন. সংসদ ভেঙে নির্বাচন দিতে হবে।
যৌথ সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সভায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমরা পর্যালোচনা করেছি। আমাদের নেতৃবৃন্দ আগামীতে করণীয় কী সে সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন। আগামীতে বিএনপি ও গণতান্ত্রিক শক্তি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধরের জন্য কিভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সভায় নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও তার মুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এর সাথে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দলের নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকবৃন্দ এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা অংশ নেন।
বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল মান্নান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর নাসির, খন্দকার মাহবুব হোসেন, রুহুল আলম চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আমিনুল হক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে রিয়াজ রহমান, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আ ন হ আখতার হোসেন, জয়নাল আবেদীন ভিপি, শাহজাহান মিয়া, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, ইসমাইল জবিউল্লাহ, হায়দার আলী, আবদুল কাইয়ুম, এনামুল হক চৌধুরী, তাজমেরী এস ইসলাম, শাহিদা রফিক, শাহজাদা মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, নজমুল হক নান্নু, তাহমিনা রুশদী লুনা, সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, মইনুল ইসলাম শান্তু, মামুন আহমেদ, খন্দকার মুক্তাদির আহমেদ, আবদুল হাই, আবদুল হাই শিকদার, আব্দুল কুদ্দুস উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া বৈঠকে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, মাহবুবের রহমান শামীম, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ এবং সম্পাদকদের মধ্যে শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, শিরিন সুলতানা, বদরুজ্জামান খসরু, মোজাফফর হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, কামরুজ্জামান রতন, কায়সার কামাল, মীর সরফত আলী সপু, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আমিনুল হক, আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবুল কালাম, সোহরাব উদ্দিন, হাজী ইয়াসীন আলী, সেলিম ভুঁইয়া, লায়ন হারুনুর রশীদ, ফাওয়াজ হোসেন শুভ, ফরিদ হোসেন মানিক, লুৎফর রহমান কাজল, এ বি এস ওবায়দুল ইসলাম, এম এ মালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
0 facebook: