আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বোমা, গুলি, আগুন আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে তিন স্তরের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট। ভোটগ্রহণের মধ্যেই অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। নিহত হওয়ার খবর কিংবা সহিংস ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন মমতা ব্যানার্জির প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গণমাধ্যমগুলোর দাবি, কলকাতার পাশের দুই জেলা উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশপরগনার দুজন, নদীয়ার শান্তিপুরে একজন, মুর্শিদাবাদে দুজনসহ ১৬ জন ভোট-সহিংসতার বলি হয়েছেন। সোমবারের নির্বাচনে সহিংসতার পাশাপাশি ভোটে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপি হয়েছে। অনিয়মের বর্ণনা দিয়ে আনন্দবাজার প্রত্রিকা লিখেছে, বুথের ভেতর কেউ কোথাও নেই। রয়েছেন শুধু একজন। তিনি নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছেন।
একের পর এক ব্যালটে পছন্দের প্রার্থীর নামে সিল দিয়ে চলেছেন। থামার নাম নেই! এমনটিই দেখা গেল রাজারহাটের পাথরঘাটা গ্রামপঞ্চায়েতের সর্দারপাড়া শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে ৮১নং বুথে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের মারধর করে প্রথমে বুথ থেকে বার করে দেয়া হয়। বুথের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। এর মধ্যেই তৃণমূলের হয়েই সিল মারা শুরু করেন দলীয় এক কর্মী। অসংখ্য বুথে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
ভোট শুরু হওয়ার পর সকাল থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে সহিংসতার খবর আসতে থাকে। কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, হাওড়া, হুগলী, নদীয়া, বীরভূম, কেশপুরসহ বেশকিছু জায়গায় শাসক দলের বিরুদ্ধেই বোমাবাজি, মারধর এবং ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বুথের বাইরে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোথাও এই অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধেও।
সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথম পাঁচ ঘণ্টায় বেসরকারিভাবে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। জানা যায়, কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ চব্বিশপরগনার কুলতি, উত্তর চব্বিশপরগনার আমডাঙা, নদীয়ার শান্তিপুর এবং মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা এলাকার মৃতদের নাম হচ্ছে- তপন মণ্ডল, তৈবুর গায়েন, আরিফ আলি গাজী এবং তরুণ সাউ।
শান্তিপুরের নিহত হয়েছেন এক ছাত্র। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করেছিলেন তিনি। দিন শেষে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ জনে।
ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে দক্ষিণ চব্বিশপরগনার কাকদ্বীপে এক দম্পতিকে পুড়িয়ে হত্যার খবর পাওয়া যায়। অভিযোগ উঠেছে, সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন ওই দম্পতি। আর তাই রাতের অন্ধকারে তাদের পুড়িয়ে মেরেছেন তৃণমূলের কর্মীরা। এবার পঞ্চায়েত ভোটের ভোট দিয়েছেন ৩ কোটি ৩৮ লাখ। মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি। ৪৩ হাজার ৬৭টি ভোটকেন্দ্রের ৪৭ হাজার ৪৫১টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হয়।
এর মধ্যে ৩১ হাজার ৮২৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ভোট হয়। এসব আসনে লড়ছেন পহাজার ৮৬৯ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। পঞ্চায়েত সমিতির ৬ হাজার ১৫৭টি আসনে ২২ হাজার ৩৬২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬২১ জেলা পরিষদের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ হাজার ৮৩৪ জন প্রার্থী । এবার গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তৃণমূলের ৩১ হাজার ৭০৯ জন। বিজেপির ২২ হাজার ৬৩৭ জন ও বাম দলগুলোর ৫ হাজার ৪৯৭ জন প্রার্থী। পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে তৃণমূলের রয়েছে ৬ হাজার ১১৩ জন, বিজেপির ৪ হাজার ৯৫০ জন ও বাম দলের ৪ হাজার ৩৮১ জন প্রার্থী।
জেলা পরিষদে তৃণমূলের ৬২১ জন, বিজেপির ৫৭৫ জন ও বাম দলের ৫৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৩৪ শতাংশ আসনের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট। জুলাইয়ে সুপ্রিমকোর্টের পরবর্তী শুনানির পর সরকারিভাবে গেজেট প্রকাশ করারও নির্দেশনা রয়েছে শীর্ষ আদালতের। তবে আজ যে আসনগুলোয় ভোট গ্রহণ হচ্ছে, সেই আসনগুলোর ফলাফল ঘোষণা হবে ১৭ মে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: