সকল মানুষই
মহান আল্লাহ পাকের বান্দা;
তবে একমাত্র মুসলমানই হলো খাস বান্দা যার কারন নবী করীম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার মতো ভাগ্য একমাত্র মুসলমানদের ই হয়েছে। মহান আল্লাহ
পাক আমাদের উনার ইবাদত এবং উনার হাবীব নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
মুহব্বত, অনুসরন, অনুকরণ করার জন্যই তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। উনার এবং উনার হাবীব
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রদর্শিত ও অপ্রদর্শিত অসংখ্য নেয়ামতের
সাগরে ভাসছে আমাদের জীবন। এ বাস্তবতা মেনেই আমাদের মহান আল্লাহ পাকের ইবাদতে সক্রিয়
হতে হবে। মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সন্তুষ্টি অর্জনে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতি মুহূর্তে উনাদের আদেশ মেনে চলা এবং
নিষেধ থেকে বিরত থাকা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
এগারোটি
মাসের কর্মব্যস্ত জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন পালনে শিথিলতা আসতেই পারে। তাই একটি মাস রাখা
হয়েছে সেই শিথিলতা ও দুর্বলতা কাটিয়ে ইবাদতের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য। পবিত্র এই মাসটির
নাম রমাদ্বান শরীফ। এ মাসেই রয়েছে একটি বিশেষ আমল যা পুরো মাসের এমনকি পুরো জীবনের
ধর্মীয় বন্ধনকে অটুট করে বাকি জীবনের সঞ্জীবনী শক্তি জোগাতে যথেষ্ট যদি আমাদের তা নসিব
হয় নিজ চেষ্টা আর মহান আল্লাহ পাকের দয়ায়। পবিত্র এ মাসেই মহান আল্লাহ পাকের হাবীব
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াত ও রিসালাত পেয়েছেন।
এ মাসের
শেষ দশকের একটি বিজোড় রাত,
যে রাতে উনার ওপর সব বাণীর সেরা বাণী পবিত্র আল কুরআন উল কারীম
নাজিল হয়েছে। এ রাতের নামকরণ করা হয়েছে ‘লাইলাতুল কাদর’ (সম্মানিত
রাত) হিসেবে। এ রাতের গুরুত্ব বুঝে আসতে ‘আল কাদর’ নামে ছোট অথচ একটি পূর্ণাঙ্গ সুরার সহিহ
তরজমা এবং সহিহ তাফসীর পড়তে পারেন। এতে বলা হয়েছে ‘হাজার মাসের (অসংখ্য) চেয়েও এ রাত উত্তম।
জিবরিল
আমিন আলাইহিস সালাম উনার নেতৃত্বে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ তা’য়ালার
নির্দেশে সন্ধ্যা থেকেই নেমে আসেন পৃথিবীতে। ঘুরে বেড়ান বিশ্বময়। ফজরের (সুবেহ সাদিক)
আগ পর্যন্ত ইবাদতকারীদের ওপর তারা সালাম পেশ করতে থাকেন।’ (সুরা
আল কাদর শরীফ)। পবিত্র লাইলাতুল কদর রমাদ্বান শরীফ এর শেষ দশকে হওয়ায় মহান আল্লাহ পাক
উনার উনার হাবীব নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিনগুলোতে পবিত্র মসজিদে
এতেকাফ করতেন যেন নিশ্চিত এ রাতটি পাওয়া যায়। যেন বঞ্চিত না হন এ রাতের মর্যাদা ও বরকত
থেকে।
এতেকাফ
শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা। পারিভাষিক অর্থে মহান আল্লাহ তা’য়ালার
ইবাদতের উদ্দেশ্যে যে কোনো মসজিদে অবস্থান করা।
রমাদ্বান
শরীফের এতেকাফ দু’ধরনের
হয়ে থাকেঃ
এক, সুন্নত
মুবারক। একে সুন্নতে মুআক্কাদা কিফায়াও বলা হয়। শেষ দশ দিন একান্তভাবে ইবাদতের উদ্দেশ্যে
মসজিদে অবস্থান করা। এ ক্ষেত্রে এতেকাফের শর্তাবলী ও মাসাইল জেনে নিতে হবে। সামান্য
ভুলে এই এতেকাফ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তখন আবার এর কাজাও করতে হয়। মহল্লাবাসীর পক্ষ
থেকে কেউ একজন এতেকাফ করলে অন্যরা এর দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।
দুই,
নফল। প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সুযোগ রেখে যে ক’দিন সম্ভব এতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান
করা। এ ক্ষেত্রে সুন্নত এতেকাফের শর্তাবলী প্রযোজ্য হবে না।
এতেকাফের
মূল লক্ষ্য পবিত্র লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি। নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, ‘এ
রাত তালাশ করতে আমি প্রথম দশ দিন এতেকাফ করি, এরপর মাঝের দশ দিন, এরপর
আমাকে এ রাত দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে এ রাত শেষের দশকে রয়েছে।
অতএব
তোমাদের যারা এতেকাফে আগ্রহী তারা যেন এ সময় এতেকাফ করে। তার সঙ্গে লোকেরা এতেকাফ করেন।
(মুসলিম শরীফ ১১৬৭)। অন্য হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রমাদ্বান
শরীফের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে তোমরা পবিত্র লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি
শরীফ ২০১৭)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, নবী করীম
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমৃত্যু রমজানের শেষ দশ দিন এতেকাফ করতেন। তারপর উনার
আহলিয়ারা ইতিকাফ করতেন। (বুখারি শরীফ ২০২৬)। মহান আল্লাহ তায়ালা ইতিকাফকারীদের প্রশংসা
করেছেন কুরআন উল কারীমে। (সুরা বাকারাহ শরীফ এর ১২৫ নং আয়াতে পাকে)। ইতিকাফে বসে মহান
আল্লাহ পাক উনার সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি মেলে, আমরা যেন ইতিকাফে বসার চেষ্টা করি।
ইতিকাফকারী
ব্যক্তির জন্য যা করা বৈধঃ
হজরত
আয়েশা সিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ “আমি
ঋতুবতী অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার মাথা চিরুনি করতাম”। (বুখারি
শরীফ ১৯৪১, মুসলিম
শরীফ ২৯৭)
হজরত
আয়েশা সিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ “যখন
তিনি ইতিকাফ করতেন, প্রাকৃতিক
জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না”। (বুখারি শরীফ ১৯৪১ ও মুসলিম শরীফের ২৯৭)
হজরত
আয়েশা সিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ “ইতেকাফকারীর
জন্য সুন্নত হচ্ছে রোগী দেখতে না যাওয়া, যানাজায় হাজির না হওয়া, স্ত্রীকে
স্পর্শ বা তার সাথে সহবাস না করা,
খুব জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত বের না হওয়া, সওম ব্যতীত
ইতিকাফ শুদ্ধ নয়, অনুরূপ
জামে মসজিদ ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ নয়”।
(আবু দাউদ শরীফ ২৪৭৩)
শিক্ষা
ও মাসায়েলঃ
(১) ঋতুবতী নারী পাক, তার ঋতুর
স্থান ব্যতীত।
(২) ইতিকাফকারী শরীরের কিছু অংশ মসজিদ থেকে
বের করলে বাইরে গণ্য হবে না,
ইতিকাফ নষ্ট হবে না, যেমন মসজিদের জানালা অথবা দরজা থেকে যদি
কিছু নেয়া অথবা গ্রহণ করার ইচ্ছা করে, তাহলে এতে সমস্যা নেই।
(৩) ইতিকাফকারীর মাথা ধৌত করা, চুল আঁচড়ানো, সুগন্ধি
ব্যবহার করা, মাথা
ন্যাড়া করা ও সৌন্দর্য গ্রহণ করা বৈধ।
(৪) স্ত্রীর জন্য স্বামীর খিদমত করা বৈধ, যেমন
তার মাথা ধৌত করা, চুল
আঁচড়ে দেয়া, কাপড়
ধোয়া ইত্যাদি।
(৫) মানুষিক প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফকারীর মসজিদ
থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন
পেশাব-পায়খানা, অথবা
পানাহার, যদি
তা মসজিদে পৌঁছে দেয়ার কেউ না থাকে,
অনুরূপ প্রয়োজনীয় প্রত্যেক বস্তু, যা মসজিদে
সম্পাদন করা সম্ভব নয়, তার
জন্য বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হবে না”।
(৬) ইতিকাফকারী জরুরী প্রয়োজনে বের হলে দ্রুত
হাঁটা জরুরী নয়, বরং
অভ্যাস অনুযায়ী হাঁটা, তবে
প্রয়োজন শেষে দ্রুত ফিরে আসা ওয়াজিব।
(৭) ইতিকাফকারী প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফের স্থান
থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
মহান
আল্লাহ তা’য়ালা
নিকট জীবিনে অন্তত একবার পবিত্র লাইলাতুল কদর কে পেতে সঠিকভাবে ইতিকাফ করার সুযোগ দান
করার দোয়া কামনা করছি।
লেখকঃ অনলাইন এক্টিভিস্ট ইসলামী গবেষক, মুহম্মদ হাসান।
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
ধর্ম ও জীবন
0 facebook: