স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ গত বুধবার ছিল
শবে কদরের ছুটি। যথারীতি ব্যাংক ছিল বন্ধ। ব্যাংকের সামনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন আনসারের নিরাপত্তা প্রহরীরা। হঠাৎ তারা দেখতে পান সাত বস্তা
নতুন টাকাসহ একটি পিকঅ্যাপ ভ্যান বের হচ্ছে। আনসারের প্রহরীরা পিকঅ্যাপ ভ্যানকে আটকান। পিকঅ্যাপ ভ্যানে থাকা দুইজনের
কাছে নতুন টাকা বের করে নেয়ার বৈধ ছাড়পত্র চান। তারা প্রথমে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা। আবার বলেন, ভল্টে সমপরিমাণ পুরনো নোট রেখে নতুন টাকা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই আনসারের
নিরাপত্তা প্রহরীদের ম্যানেজ করতে পারেননি সাথে থাকা লোকজন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে টাকা আবার
ভল্টে রাখা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সোনালী ব্যাংকের
স্থানীয় কার্যালয়ে। জানা যায়, সোনালী ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা নতুন টাকা কালোবাজারে বিক্রি করার সময়
হাতেনাতে ধরা পড়েন। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোনালী ব্যাংকসহ ব্যাংকপাড়ায় তোলপাড় চলে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ নয়া
দিগন্তকে জানিয়েছেন, এ রকম একটি ঘটনা তিনি শুনেছেন। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঈদের ছুটির পর প্রকৃত ঘটনা জানানো যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের দুই
কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং অধিকতর তদন্তের জন্য ছয় সদস্যের একটি
তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রতিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণের মধ্যে নতুন টাকা বিনিময় করে থাকে। সাধারণত প্রতিটি ব্যাংক তাদের
প্রধান অফিসের মাধ্যমে এ নতুন টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আনা হয়। পরে সব শাখায় তা পাঠিয়ে দেয়া
হয়। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এক
ধরনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণের মধ্যে
নতুন টাকা বিনিময় না করে তা কালো বাজারে বিক্রি করে দেন। ঈদকেন্দ্রিক সাধারণত ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা ও ২০ টাকার নোটের
চাহিদা থাকে বেশি। কালোবাজারে ১০০টি ২ টাকার প্রতিটি প্যাকেট ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বেশি দরে
বিক্রি হয়। ১০০টি ৫ টাকার প্রতিটি প্যাকেট
বিক্রি হয় ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা বেশি দরে। অর্থাৎ প্রতিটি ৫ টাকা বিক্রি হয় সাড়ে ৬ টাকা। আর প্রতিটি ২ টাকা বিক্রি হয়
প্রায় তিন টাকা। ১০০টি ১০ টাকার প্রতিটি প্যাকেট বিক্রি ৮০ টাকা বেশি দরে।
ব্যাংকে সাধারণ
গ্রাহক নতুন টাকা না পেলেও প্রতিটি ব্যাংকের আশেপাশে, গুলিস্তান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে
সেনাকল্যাণের সামনে বিক্রি হয় নতুন টাকা। এসব নতুন টাকা ব্যাংকগুলোর এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর
মাধ্যমে কালোবাজারিদের হাতে আসে। সেখান থেকে সাধারণ গ্রাহক বেশি দরে আত্মীয়-পরিজনের জন্য নতুন টাকা কিনে নেন।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের স্থানীয়
কার্যালয়ের ভল্টের চাবি ছিল সোনালী ব্যাংকের ক্যাশের যুগ্ম জিম্মাদার গোলাম
মোস্তফা ও সাধারণ শাখার যুগ্ম জিম্মাদার বাবুল সিদ্দিকীর কাছে। এর মধ্যে বাবুল সিদ্দিকী কিছু দিন
আগে এ শাখায় যোগ দিয়েছেন। আর গোলাম মোস্তফা আগে থেকেই এ শাখায় ছিলেন। বুধবার শবে কদরের ছুটি থাকায় ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ সময়ে তারা ভল্ট থেকে ৭ বস্তা
২ টাকা ও ৫ টাকা নোটের নতুন টাকা পিকঅ্যাপ ভ্যানে করে বের করে নিচ্ছিলেন। কিন্তু বাদ সাধে ব্যাংকের
সামনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসারের নিরাপত্তা প্রহরীরা। সাধারণত ব্যাংক থেকে কোনো বস্তা বা কোনো যন্ত্রপাতি
বের হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র থাকে। ওই ছাড়পত্র দেখে নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যারা
সংশ্লিষ্ট পণ্য ব্যাংক হতে বের হতে দেন। তাই সাত বস্তা নতুন টাকা বের হওয়ার সময় নিরাপত্তা প্রহরীরা
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র দেখতে চান। কিন্তু ছাড়পত্র না থাকায় টাকাকারবারিরা নানা টালবাহানা করতে
থাকে। পরে আনসারের সদস্যদের পক্ষ
থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে নতুন টাকার বস্তা আর বের হতে দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে গতকাল
ব্যাংক খোলার সাথে সাথে হইচই পড়ে যায়। ব্যাংকপাড়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে সোনালী ব্যাংকের
সাত বস্তা নতুন টাকা পাচারের চেষ্টার ঘটনা। সোনালী ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে সোনালী ব্যাংকের
কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সোনালী ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন
টাকা না দিয়ে কালোবাজারিদের কাছে বিক্রি করে দেন। বিশেষ করে ঈদকেন্দ্রিক এ তৎপরতা বেশি বেড়ে যায়। তারা ভল্টে পুরনো টাকা রেখে
বস্তায় বস্তায় নতুন টাকা কালোবাজারিদের কাছে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা
জানিয়েছেন, সাত বস্তায় কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ছিল। এ টাকা তারা তিন লাখ টাকা থেকে চার লাখ টাকা বেশি দরে
বিক্রি করেছিল কালোবাজারিদের কাছে। কিন্তু আনসার সদস্যদের সতর্কতার কারণে ও ছুটির দিন থাকায় এ যাত্রায় তারা রেহাই
পায়নি।
সংশ্লিষ্ট
সূত্র জানিয়েছে, গতকাল ব্যাংক খোলার সাথে সাথে ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে ব্যাংকপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গোলাম
মোস্তফা ও বাবুল সিদ্দিকীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত
কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওই সূত্র
জানিয়েছে।
0 facebook: