আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন নীতির বিরুদ্ধে আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকালে ৫৭৫ নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষোভকালে তাদের গ্রেফতার করে ক্যাপিটল হিলের পুলিশ।
জানা যায়, মা-বাবার কাছ থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার নিন্দা এবং অবিলম্বে অভিবাসীদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার ও বহিষ্কারের অভিযান বন্ধের দাবিতে হাজার হাজার নারী আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় ক্যাপিটল হিলের পুলিশ ৫৭৫ জন নারীকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ তাদের ওই নারীদের বিরুদ্ধে রাস্তা-ঘাটে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর পাশাপাশি অনুমতি না নিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করে।
সমাবেশ থেকে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট তথা আইস বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের আজ্ঞাবাহী হিসেবে এই সংস্থা মাঠে নেমেছে অবৈধভাবে বসবাসরতদের গ্রেফতারের জন্য।
বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে সীমান্তে গ্রেফতার হওয়া বিদেশিদের প্যারলে মুক্তি প্রদানের দাবি জানান। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকালে গ্রেফতারদের সাথে থাকা যেসব শিশু সন্তানদের কেড়ে নেয়া হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মা-বাবার কাছে ফেরৎ প্রদানের দাবিও করেছেন তারা।
ক্যাপিটল হিলের সিনেট বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার হওয়া সকলেই শ্বেতাঙ্গ এবং আমেরিকান। তবে তারা স্প্যানিশ ভাষায় স্লোগান দিয়েছেন। কারণ, গ্রেফতারদের ৯৮ শতাংশ হলেন স্প্যানিশ। এর মধ্যে কংগ্রেসওম্যান (ওয়াশিংটন-ডেমক্র্যাট) প্রমিলা জয়পাল এবং খ্যাতনামা অভিনেত্রী সুজান সারান্ডনও রয়েছেন।
ক্যাপিটাল পুলিশ জানায়, হার্ট সিনেট অফিস বিল্ডিং-এর আশপাশে ব্যাপক সমাগম ঘটে এবং স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করা হয়। এর ফলে স্বাভাবিক কর্মজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। ফলে বারবার অনুরোধ সত্বেও নারীরা ওই স্থান ত্যাগ করেননি। বরং তারা আইন অমান্য করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বৃহস্পতিবার অপরাহ্ন ৩টা থেকে শুরু হয় এ কর্মসূচি। সমস্বরে স্লোগান উঠে, ‘আইস বিলুপ্ত করা’, ‘ইমিগ্র্যান্টদের ধর-পাকড় বন্ধ কর।’ এ সময় ওই ভবনে থাকা ইউএস সিনেটর ক্রিস্টিন জিলিব্র্যান্ড (নিউইয়র্ক) এবং ট্যামি ডাকুয়ার্থ (ইলিনয়)-সহ অনেকে হাত নেড়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
সিনেট বিল্ডিং থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছে বলে পুলিশ গণমাধ্যমকে অবহিত করে। ‘উইমেন্স মার্চ’ এবং ‘ক্যাসা দ্য ম্যারিল্যান্ড’-সহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব প্রদানকারীদের অন্যতম ‘সেন্টার ফর পপুলার ডেমক্র্যাসি’র নির্বাহী পরিচালক এ্যানা মারিয়া আরছিলা বলেন, আইসের বিলুপ্তি জরুরি হয়ে পড়েছে। এটি এখন সময়ের দাবি। কারণ, এই সংস্থার আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লংঘিত হচ্ছে প্রতি পদে। এর অসভ্য আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক গুণাবলী ভূ-লুণ্ঠিত হচ্ছে। অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে গড়ে উঠা আমেরিকায় এমন বর্বরতা সহ্য করা যায় না। এজন্যে আমরা রাজপথে নেমে আইন অমান্য কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছি।
হোয়াইট হাউজের সন্নিকটে ফ্রিডম প্লাজায় জড়ো হবার পর স্লোগানসহ মিছিল নিয়ে বিচার বিভাগীয় সদর দফতর হয়ে ক্যাপিটল হিলের সিনেট বিল্ডিংয়ের সামনে আসেন নারীরা।
উল্লেখ্য, রিপাবলিকান শাসিত প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির পরিপূরক একটি বিল আবারও নাকচ হয়ে গেছে। অধিকাংশ রিপাবলিকান কংগ্রেসমানই ডেমক্র্যাটদের সাথে যোগ দিয়ে ওই ধরনের বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
এর আগে, ফেডারেল জজ নির্দেশ জারি করেছেন কেড়ে নেয়া শিশু সন্তানদের অবিলম্বে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে। একইসময়ে জনরোষের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প প্রশাসনও ইউ টার্ন করেছেন। তবে বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন এখনও ঘটেনি বলে রাজপথ ক্রমে উত্তপ্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি সিটিতে একই ধরনের বিক্ষোভ থেকে অভিবাসন নীতি উদার করার দাবি জানানো হয়েছে। সবগুলো বিক্ষোভ-সমাবেশেই স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও অংশ নেন। গত বুধবারও বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী বিক্ষোভ করেছেন বিচার বিভাগীয় সদর দফতরের সামনে। তারা শিশুকালে মা-বাবার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর এখন পর্যন্ত বৈধতা পাননি। তারা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিশেষ এক নির্দেশে ২০১৪ সালে ডেকা (ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল) কর্মসূচিতে ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছিলেন। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর সে নির্দেশ বাতিল করেছেন। এজন্য তারাও এখন রাজপথে।
শনিবার (৩০ জুন) আরেকটি বিক্ষোভ-সমাবেশ হবে হোয়াইট হাউজের সামনে। একইসাথে ৩৫১টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টেও র্যালি হবে বলে আয়োজকরা জানান।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: