২০০৭ সালে হায়দরাবাদ বিস্ফোরণে মুসলিম মেয়েটি তার বাবা-মাকে হারায়। সেই মেয়েকেই নিজের মেয়ে হিসেবে দত্তক নেন হায়দরাবাদের পাপালাল রবিকান্ত।
আপাতত ওসমানিয়া হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছুরির ঘায়ে আহত ওই ব্যক্তি। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে গত ১ জুন।
২০০৭ সালের অগাস্ট মাসে হায়দরাবাদের গকুল চাট সেন্টারের কাছ থেকে সদ্য বাবা-মা হারা শিশুকন্যাকে উদ্ধার করেন রবিকান্ত। বাচ্চাটিকে ফিরিয়ে নিতে কেউ না আসায় রবিকান্ত এবং তার স্ত্রী জয়শ্রী তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। তারপর থেকেই রবিকান্ত ও তার পরিবারকে নানা হেনস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনকি হুমকির মুখেও পড়তে হয় বহুবার।
সানিয়া ফাতিমা নামে ওই মেয়েটি বর্তমানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু এতদিন পরও রবিকান্ত ও তার পরিবারকে সানিয়াকে দত্তক নেয়ার জন্যে অপমান করা থামেনি।
একটি মন্দিরে মূর্তি তৈরির কাজ করেন রবিকান্ত। তার কথায়, তিনি কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না। এক মাতৃহারা শিশুকে সেইসময় নিরাপদ আশ্রয় দেয়া, বাবা-মায়ের স্নেহ দেয়াই ছিল তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক সানিয়া ফাতিমাকে নিজের থেকে কোনোভাবেই কোনোদিন আলাদা হতে দেবেন না, জানিয়েছেন রবিকান্ত।
পরিবারটির অভিযোগ, পুলিশ বা সরকার কেউ তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না।
‘কয়েক বছর ধরেই এ রকম চলে আসছে। আমরা তাকে তিলক পরতে বলি না। অনেকে ওর নাম পরিবর্তন করে অঞ্জলি বা সোনিয়া রাখতে বলে। কিন্তু ও ইসলাম ধর্ম পালন করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা একতা এবং মিলেমিশে থাকায় বিশ্বাস করি এবং সবার প্রতিই আহ্বান জানাই শান্তিতে বসবাসের’, বলছিলেন রবিকান্ত।
ওই দম্পতি এখন সোনিয়াকে ভালো শিক্ষা দিচ্ছে যেন সে তার নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে।
সানিয়ার বর্তমান মা জয়শ্রীর সাথে কথা নিউজ১৮ এর। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো আমাদের ধর্মের জন্য হেনস্থার শিকার হচ্ছি। মেয়েটিকেও অনেক বিপদে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু আমরা সুখি, সমস্যা সমাজের। আমরা সবাই মানুষ, আমাদের সবারই একই রক্ত প্রবহমান। আমরা তার একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে চাই। সে পর্যন্ত আমরা তার সব ধরনের যত্ন নেব।’
সানিয়াও তার বাবার স্বপ্ন পূরণে একজন পুলিশ অফিসার হতে চায়।
‘আমি একজন পুলিশ অফিসার হতে চাই। আমি মানুষের ভালো করতে চাই। আমাদের সবাইকে একসাথে বসবাস করতে শেখা উচিত’, বলছিল সানিয়া।
সূত্রঃ নিউজ১৮.কম
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: